আইভী-তৈমুর ঝামেলার না

ডান্ডিবার্তা রির্পোট
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার আমেজে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভোট ইস্যুতে বেশি উচ্ছ্বাসে রয়েছে তরুণ ভোটাররা। যোগ্য ব্যক্তি ভোট দেয়াসহ নগর উন্নয়ণে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন তরুণ ভোটাররা। তাই প্রার্থীরাও তরুণ ভোটারদের আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা কালে তরুণদের সাথে রাখছেন। অতীতে এলাকার মুরুব্বিদের নিয়ে প্রার্থীদের প্রচারণা করতে দেখা গেলেও বর্তমানে তরুণরাও সাথে রাখছেন। নির্বাচন ইস্যুতে সরজমিনে ভোটারদের কথা বললে তারা জানান, শৈশবের কথা বলতেই চোখমুখে চাপা উচ্ছ্বাস ভেসে ওঠে আবিদের। ‘আমাদের শৈশব মানেই ছিল পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি, দিনভর খেলার মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো আর পাড়ামহল্লার ফলের গাছগুলোয় দল বেঁধে হানা দেওয়া। সেটা কিন্তু বেশি দিন আগের কথা না। আট থেকে দশ বছর আগেও আমরা এমন আনন্দমুখর দিন কাটিয়েছি। এখনকার শিশু–কিশোরদের দেখলে ওদের জন্য মায়া হয়।’ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার ১০ বছরে পাওয়া নাপাওয়ার হিসাব কষতে গিয়ে এসব কথা বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ আরিফ। বন্দর দড়ি সোনাকান্দা এলাকায় কথা হয় আবিদ ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বন্ধু আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। আরিফ বলেন, ‘১০ বছর আগেও আমাদের জমিগুলোয় ফসল ফলেছে। শীতলক্ষ্যার পানি তখনো দূষিত ছিল, কিন্তু সরকারি–বেসরকারি অসংখ্য পুকুর ছিল এলাকাজুড়ে। তখন এলাকায় মাত্র একটা মাঠ থাকলেও খোলা জায়গা ছিল অসংখ্য। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর সোনাকান্দা হাটের জায়গায় অত্যাধুনিক মাঠ হয়েছে, কিন্তু খোলা জায়গাগুলোয় বাড়িঘর উঠে যাওয়ায় শিশুরা পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। গাছ নেই, পাখি নেই, পুকুর কিংবা জলাশয়ও নেই। বন্দরে কখনোই কোনো পার্ক ছিল না, এখনো নেই। চোখের সামনেই আমরা কেমন বন্দী হয়ে গেলাম।’ নগর আরও বেশি জনাকীর্ণ হয়ে যাওয়ার আগেই সোনাকান্দা স্টেডিয়াম সংস্কার, এলাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার, পার্ক নির্মাণসহ বিনোদনের ব্যবস্থা করার দাবি ২০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শিক্ষার্থীদের। তাঁরা জানান, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে দেওয়া প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখে ভোট দেবেন। তবে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সালেহনগর এলাকার দিনমজুর খোকন সরদারের কাছে বিনোদনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যবহারযোগ্য নিরাপদ পানি আর সুষ্ঠু নির্বাচন। খোকনের ভাষায়, ‘একের নির্বাচন।’ গতকাল বিকেলে মাহমুদনগর এলাকায় কথা হয় খোকনের সঙ্গে। ‘নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা কী এমন প্রশ্নের উত্তরে লাজুক হাসি খোকনের। তারপর পাল্টা প্রশ্ন করেন। ‘কইলে কি প্রত্যাশা পূরণ করবেন? আমি চাই বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমুক। মেয়র সাব কি জিনিসপত্রের দাম কমাইতে পারব? ওনারা পারব না, এইডা সরকারের কাম। সিটিতে ভালো ভোট হোক, একদম একের ভোট।’ খোকনের কথা শুনে ইয়াদ আলী, জহিরুল মিয়া আর পাশের ফয়জুন নেসা এগিয়ে আসেন। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা জানান। নানাজনের কথার ফাঁকে খোকন বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার পানি নষ্ট। এই পানি মেডিসিন দিয়া আমাগো সাপ্লাই দেয়। গোসল করলে চুল ওঠে, মুখে নিলে গন্ধ আইয়ে। পরিষ্কার পানি লাগব। বাড়ি বাড়ি যেন পরিষ্কার পানি যায়।’ খোকনের কথায় সায় দেন ফয়জুন নেসারা। আর ইয়াদ আলী চান রাতবিরাতে নিরাপদে চলাচল করতে। ইয়াদ আলী বলেন, জন্ম থেকেই বন্দরের ফরাজিকান্দা এলাকায় বসবাস তাঁর। পাঁচ বছর আগেও এলাকায় ছিনতাইয়ের কথা শোনেননি। কিন্তু সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ছিনতাই বেড়েছে। এবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন বলে আশাবাদী তিনি। তবে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ এলাকার শিক্ষার্থী দৃষ্টি আক্তার মনে করেন, সিটি করপোরেশনের ১০ বছরের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম গৃহস্থালি বর্জ্য আর মশার উৎপাত। তার অভিযোগ, সিটি করপোরেশন নির্ধারিত বিলের চেয়ে বেশি বিল নেওয়া হলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ করতে আসেন না। লোকজন বাধ্য হয়ে এলাকার যেখানে সেখানে গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলে আসেন। বর্জ্য সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি মশার উৎপাত বন্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোট দিতে যাবেন কি না এমন প্রশ্নে শিল্পী বেগমের স্পষ্ট উত্তর, ‘ভোট তো দিমুই। সিটি নির্বাচনে ঝামেলা হইব না। আইভী-তৈমুর ঝামেলার লোক না। তবে শুনতাছি ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়া ঝামেলার।’ এদিকে, নির্বাচন ইস্যুতে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, নির্বাচনে কোন বাধা না আসলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আর আইভী বলছেন, ভোটারা এবারও আমার উপর আস্থা রাখবে।
Leave a Reply