এযেন আলোর নিচে অন্ধকার

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনি যুবদল নেতা। এর বাইরে গেল দুবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। করোনাকালিন তার কাজ তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বহুদূর। কিন্তু কথায় আছে, আলোর নিচে অন্ধকার। মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বেলাতেও ঘটেছে এমনই ঘটনা। তার বাহ্যিকটা আলোকিত হলেও ভেতরটাতে যে তিনি অন্ধকার পুষেন তার প্রমাণ মিলেছেন এক নারীর ধর্ষণ মামলার মধ্য দিয়ে। গত ২৫ আগস্ট এক নারী মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তদন্ত শেষ করে ৪ নভেম্বর পিবিআইয়ের এসআই তৌহিদুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র (তদন্ত প্রতিবেদন) দাখিল করেন। এই অভিযোগপত্রে খোরশেদেও বিরুদ্ধে ধর্ষণের যে অভিযোগ ওই নারী এনেছিলেন তার সত্যতাও মিলেছে। মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে বহুদিন আগের থেকেই নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি উঠে আসছিলো। তিনি বারবারই এই অভিযোগটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেই দাবি করে আসছিলেন। ওই নারীর দাবি ছিলো, খোরশেদের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। বিয়েও করেছেন তারা। একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে তাদের। কিন্তু খোরশেদ নিজেকে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা সাজিয়ে বারবারই বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। এমনকী তিনি নিজেকে সাধু সাজাতে গিয়ে একটি ফেসবুক লাইভও করেন। সেখানে ওই নারীকে নানা রকমভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও তার বিরেুদ্ধে অশোভন ভাষা প্রয়োগ করে কুটুক্তিও করেন। এই ঘটনায় ওই নারী খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেছেন। এদিকে খোরশেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়াতে শহরে এ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, খোরশেদের বাহ্যিক যতটা ভালো, ভেতরটা ততটা ভালো নয়। তিনি আপদমস্তক মুখোশ পরা একজন মানুষ। যার কারণে তিনি ঘরে স্ত্রী সন্তান রেখে আরেক নারীর সাথে কেন সম্পর্ক করতে যাবেন, ধর্ষণ কেন করবেন! কারো কারো অভিমত, করোনাকালিন যোদ্ধা সেজে তিনি মূলত আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। মূলত তিনি মেয়র পদে টিকিট পাওয়ার লোভেই সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে করোনা যোদ্ধা সেজেছিলেন। কিš‘ তিনি যে আপদমস্তক একজন বাজে মানুষ তার প্রমাণ মিলে যায় পিবিআই’র প্রতিবেদনে ধর্ষণের সত্যতা মিলে যাওয়াতে। অপরদিকে খোরশেদের শুভাকাক্সিক্ষরা বলছেন, ওই নারী নিজেকে খোরশেদের স্ত্রী দাবি করেছেন। তিনি কোথাও সরাসরি এমন বক্তব্য দেয়নি। একটি পত্রিকাতে এ খবর এসেছিলো। বিষয়টি হয়তো সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু খোরশেদ লাইভে এসে ওই নারীর বিরুদ্ধে অশালীন, কুৎসা রটাতে গিয়েই ধরা খেয়েছেন। যার কারণে ওই নারী নিজেই পরবর্তীতে লাইভে এসে সকল গোমর ফাঁস করতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে মামলাও করেন তিনি। কার বুদ্ধিতে খোরশেদ লাইভে এসেছিলেন, এমন প্রশ্নও তুলেন তার শুভাকাক্সিক্ষরা। সচেতন মহল বলছেন, জনপ্রিয়তা অর্জন করতে অনেক সময় লাগে। অনেক পরিশ্রম, মেধার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্জিত জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে এক মুহূর্তও লাগে না। এতদিনে খোরশেদ যা অর্জন করেছিলেন তা এক মুহূর্তেই চূর্ণ হয়ে গেল কাঁচের ঘরের মত। অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ষণের সত্যতা যেহেতু পিবিআই পেয়েছে। এ ঘটনায় যদি বিচার হয়। তাহলে তার সাজা হবে নিশ্চিত। আর যদি ওই নারীকে তিনি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে এবং তার দোষ স্বীকার করে, অনুতপ্ত হয়ে বিষয়টিকে এখানেই শেষ করেন, তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও তিনি তার জনপ্রিয়তায় যে ধস শুরু হয়েছে তা রোধ করতে পারবেন। এখন দেখার বিষয় খোরশেদ সামনের দিনে কী করেন, কী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অভিযোগে রয়েছে, খোরশেদ করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে এনজিও থেকে টাকা আদায় করেছেন। প্রসঙ্গত, ১৬ মে ওই নারী নিজে বাদী হয়ে নাসিক কাউন্সিলর খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় নিজেকে খোরশেদের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করে ওই নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ ভিডিও’তে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে কুৎসা রটানোর অভিযোগ আনেন। খোরশেদ ছাড়াও ফতুল্লা থানার সস্তাপুর এলাকার ফেরদৌসী আক্তার রেহানা নামে এক নারীকেও আসামি করা হয়। এই মামলায় জামিনে রয়েছেন খোরশেদ।
Leave a Reply