জনপ্রিয়তা বেড়েছে নাকি কমেছে

রাশেদুল ইসলাম
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা রয়েছে। এই নারায়ণগঞ্জেই আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু সেই নারায়ণগঞ্জে দিন দিন দূর্বল হয়েছে পড়ছে আওয়ামীলীগ। টানা তৃতীয়বারের মত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ। জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগসহ সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের মেয়াদ উর্ত্তীণ হলেও কমিটি পুনর্গঠনে কোন উদ্যোগ নেই। তার মধ্যে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বে দল কতটা পিছিয়ে পড়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে ১০টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, তিনটিতে লাঙ্গল ও তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, শুধু মাত্র দুটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ১০টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হলেও কিভাবে মাত্র দুটিতে আওয়ামীলীগের বিজয় হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেছেন এই প্রতিবেদক। বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ১৬টি ইউনিয়নের বিজয়ীরা হলেন – নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুরে মনিরুল আলম সেন্টু, এনায়েতনগর ইউপিতে আসাদুজ্জামান, কাশীপুর ইউপিতে সাইফুল্লাহ বাদল, বক্তাবলী ইউপিতে শওকত আলী, আলীরটেক ইউপিতে জাকির হোসেন, গোগনগর ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী ফজর আলী, বন্দরে ৫টি ইউপিতে কলাগাছিয়ায় জাপার দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউপিতে জাপার এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউপিতে জাপার মাকসুদ হোসেন, ধামগড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন, মদনপুর ইউপিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এম এ সালাম বিজয়ী হন। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ জাহেদ আলী ভোলাবো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর হোসেন টিটু, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব তোফায়েল আহমেদ আলমাছ, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান তুহিন ও ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যারিষ্টার আরিফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এদের মধ্যে বক্তাবলী ও কুতুবপুরে এম শওকত আলী ও মনিরুল আলম সেন্টু, রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল, ভুলতা ও মুড়াপাড়ায় কামরুল হাসান ভূঁইয়া (তুহিন), আরিফুল হক ভূঁইয়া ও তোফায়েল আহমেদ আলমাছ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর নির্বাচনের একদিন আগে প্রভাবশালী মহলের চাপে কাশীপুর ও এনায়েতনগর ইউনিয়নের দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যায়। তাই সেই দুই ইউনিয়নে বিনা বাধায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী এম. সাইফুল্লাহ বাদল ও আসাদুজ্জামান বিজয়ী হয়। তার মানে বিশ্লেষন করে দেখা যায় ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে কোন রকম বাধা ছাড়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি যে নয়টিতে নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে তিনজন নৌকা প্রতীক, তিনজন লাঙ্গলের প্রতীক ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। তার মানে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিন ভাগের এক ভাগ নৌকা প্রতীকের দখলে ছিল। তবে এরমধ্যে প্রশ্ন রয়েছে, তিন নৌকা প্রার্থীর মধ্যে আলীরটেক ইউনিয়নের বিজয়ী প্রার্থী জাকির হোসেন কখনোই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। অভিযোগে রয়েছে, প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের বিনিয়মে নৌকা প্রতীক বাগিয়ে এনেছেন জাকির। এমনকি জাকিরের নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন জামাত ও হেফাজত নেতারা। জামাত ও হেফাজত নেতারা আলীরটেকে নিজেদের ঘাঁটি গড়ে তুলতে জাকিরকে বিজয়ী করতে মাঠে ছিল। তাই আলীরটেকে বিপুল ভোটে জাকির বিজয়ী হয়েছে। জাকির নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হলেও আওয়ামীলীগের বিজয় হয়নি। তাই বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে তিনটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হলেও প্রকৃত ভাবে দুটিতে আওয়ামীলীগের বিজয় হয়েছে। এদিকে, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনে সরাসরি ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়ে মাত্র ২টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের জয় হওয়া মানেই নারায়ণগঞ্জে রাজনীতির মাঠে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে আওয়ামীলীগ।
Leave a Reply