জালিয়াতির মামলায় জাপা নেতা গিয়াস ভেন্ডার গ্রেফতার

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জাল দলিল সৃজন করে সাড়ে ১৪ একর জমি বিক্রির অপরাধে মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ওরফে গিয়াস ভেন্ডারকে গ্রেফতার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। গতকাল বুধবার সকালে বন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল বুধবার গ্রেফতার হলে আদালতের সিনিয়র জুডিশিযাল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুর রহমানের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতারনা, জাল দলিল সম্পাদন করে বিক্রি, বিশ্বাস ভঙ্গ ও হত্যার হুমকির ঘটনার মামলায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ওরফে ভেন্ডার গিয়াস কে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ।শহরের শহীদনগর এলাকার ছায়াকুঞ্জ নামের সাড়ে ১৪ একর জমির জাল দলিল সৃজন করে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে গিয়াস ভেন্ডারের বিরুদ্ধে। মামলার বাদি মো: আজিজুর রহমান মিঠু জানান, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তাদের একান্ত পারিবারিক দলিল লিখক। এ সুযোগে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বাদির সকল বিশ^াস ভঙ্গ করে বাদির সহি সাক্ষর জাল করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জাল দলিল সৃজন করে উহাকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়টি তিনি জানতে পেয়ে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তাকে প্রাণনাশের হুমকী দেয়। পরে তিনি গত ৮ মে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন দায়ের (নং ১৩৩) দায়ের করেন। পরে আদালতের বিচারক জাল দলিল সৃজনের অভিযোগটিকে গুরুত্বর উল্লেখ করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি রেকর্ড করতে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের আলোকে মঙ্গলবার রাতে সদর মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। পরে গতকাল বুধবার সকালে তাকে বন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শহীদনগর এলাকার ম খন্ডের ছায়াকুঞ্জ নামের সাড়ে ১৪ একর প্লটের জমির জাল দলিল সৃজন করে মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ওরফে গিয়াস ভেন্ডার। পরে সেই জমি বিক্রি করার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজামান জানান, জাল দলিল সৃজন ও প্রতারণা মামলায় গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে। ধৃত গিয়াসউদ্দিন ভে-ার বন্দর উপজেলা দলিল লিখক সমিতির সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ঘনিষ্ঠ। তিনি উপজেলার সর্বাধিক বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি। স্থানীয়রা তাকে লজিং মাস্টার হিসেবে চিনতেন। সেই ব্যক্তি পরবর্তি সময়ে দলিল লিখক হয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। তার রয়েছে অঢেল ভূ-সম্পত্তিসহ বেশ কয়েকটি অট্টালিকা। যার মধ্যে অন্যতম বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন গিয়াসউদ্দিন কমপ্লেক্স। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে দলিল লিখক সমিতির ৩০ লাখ টাকা আত্মাসতের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ দলিল লিখকরা আন্দোলনও করেছিল। এক এগারোর শেষের দিকে সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগে সেনা বাহিনীর হাতেও তিনি আটক হয়েছিলেন। অপরদিকে নবীগঞ্জ এলাকা থেকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি অবৈধ ক্ষমতার বলে নিজের সুবিধার্থে নিজ ভবনের পাশে নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গিয়াসউদ্দিন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে, জাল দলিল সৃজন করে বিভিন্ন সময় প্রতারণা করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে, প্রভাবশালীর ছত্রচ্ছায়ার কারণে তার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ হয়নি। শেষতক তার জালজালিয়াতির শিকার আজিজুর রহমান মিঠুই প্রথমবারের মত আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। গিয়াসউদ্দিন ভে-ারের গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply