জেলা আ’লীগের সভা বয়কট!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সভায় উপ¯ি’ত ছিলেন না কমিটির অধিকাংশ সদস্যই। ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রায় ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন দপ্তর সম্পাদক এম এ রাসেল। যদিও উপ¯ি’তিদের মধ্য থেকে এই সংখ্যা আরও কম বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের দুই নং রেল গেট দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। যদিও বৈঠকটি সকাল দশটায় শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কমিটির সদস্যরা যথা সময়ে উপস্থিত না হওয়াতে তা শুরু হয় দেড় ঘণ্টা পর। এদিনের এই সভাটির মূল এজেন্ডা ছিলো ইউপি নির্বাচন। সূত্র জানায়, এদিনের এই সভাতে কমিটির সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সহসভাপতি আদিনাথ বসু, আরজু রহমান ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, আব্দুল কাদির, সানাউল্লাহ, শিকদার মোহাম্মদ গোলাম রসূল, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নূর হোসেন, ভাসানী প্রমূখ বৈঠকে উপস্থিত হননি। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি তার পাশে বসা সেক্রেটারি আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদলের দিকে মুঠোফোনটি বাড়িয়ে দিলেও তিনি কথা না বলে দপ্তর সম্পাদক এম রাসেলকে ফোনটি তুলে দেন। এম রাসেল জানান, তারা কেন আসেনি সেটি জানি না। সবাইকেই জানানো হয়েছে। আমাদের বৈঠকে কোরাম পূরণ হয়েছে। ত্রিশজন এখানে উপ¯ি’ত ছিলেন। ২৩ জন হলে কোরাম হতো না। এদিকে বৈঠকে উপস্থিত না হওয়া সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিলো জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি বৈঠকে যেতে পারেননি। সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি সচল পাওয়া যায়নি। ফলে তার পক্ষ থেকে কোনো রকম বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে একটি সূত্র জানায়, এদিনের এই বৈঠকটি তেমন কোনো গুরুত্ববহন করে না। এই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিলো ২ অক্টোবর। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নির্ধারণসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু এজেন্ডা নিয়ে এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও এর একদিন আগে কমিটির সেক্রেটারি অসুস্থ এমন বিষয় উত্থাপন করে তা স্থগিত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে তুমুল ক্ষোভ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। কেননা, এই বৈঠকটির গুরুত্ব ছিলো অনেক বেশি। সূত্র জানায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নিজেদের চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারণ ঠিক করতে পারবেন না জেনেই অসুস্থতার নাটক সাজিয়ে সেদিন ওই সভাটি স্থগিত করা হয়েছিলো। যার খেসারত হিসেবে বিএনপি নেতাসহ অযোগ্য, হাইব্রিডদের হাতে নৌকা প্রতীক উঠেছে। এ নিয়ে দলটির অনেকের মাঝেই তুমুল ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। সেই ক্ষোভের অংশ হিসেবেই এদিন তারা জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা বয়কট করেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আগের সভাটি ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা জানেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে নিজেদের প্রার্থীদের জন্য সুপারিশ পাশ করাতে পারবেন না। তাই সেদিন টেকনিক্যালি সভাটি স্থগিত করে দিয়েছেন। এখন এদিন যে সভা হলো সেটি অনেকটা বাসি সভা। এই সভার গুরুত্ব তেমন বহন করে না। তিনি আরও বলেন, নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল নন অনেকেই। তাই তারা যায়নি। কেননা, সভাপতি, সেক্রেটারি কেন্দ্রিক কমিটি হয়ে গেছে। যা করেন তারাই করেন। অন্যদের মতামত সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণ করেন না। এদিকে একই কমিটির অপর সহসভাপতি আদিনাথ বসু জানিয়েছেন, এই সভাটির মূল এজেন্ডা ছিলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। কিন্তু যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণ করা হলো সেটিতো আমাদের সাথে আলোচনা করে করা হয়নি। এবং প্রার্থী নির্ধারণটাও সঠিক হয়নি বলে আমরা মনে করি। এবং সে ব্যাপারে আমাদেরকেও কিছু জানানো হয়নি। তাহলে আমরা যেহেতু কিছুই জানি না। সেখানে কেন আমরা যাবো! তারাতো যেভাবে প্রার্থীতা নির্ধারণ করেছেন তা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ পন্থা। তাদের সেই অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে আমরা কেন বৈঠকে উপস্থিত হবো। অপরদিকে দীর্ঘদিন পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরি কমিটির বৈঠক ডাকলেও সেটিকে সফল করতে না পারার পেছনে আব্দুল হাই ও আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারা বলছেন, এই দুজনের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী। যার কারণে এদিন তাদের ডাকে তারা কেউ সাড়া দেননি। অন্যদিকে এদিন কমিটির কার্যকরি সভা থেকে বেরিয়ে এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তৎপর রয়েছে। তাদের সমর্থন দিচ্ছে দলের কেউ কেউ। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক দিয়েছেন সেখানে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্রোহী কর্মকা- চলছে। তিনি আরও বলেন, নৌকাকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমি সভায় বলেছি, যদি ব্যবস্থা নিতে না পারেন তাহলে সভায় আর আমাদের ডাকবেন না।
Leave a Reply