Home » প্রথম পাতা » সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়

তৈমূরের পক্ষে লড়াকু আকরাম

০৮ জানুয়ারি, ২০২২ | ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ | ডান্ডিবার্তা | 157 Views

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসছে। শুরুতে প্রচারণা ছিল বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে ছুটে আসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু বিএনপি তাঁকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলার আহবায়কের পদ থেকে চ্যুত করেছেন। এখন আর বিএনপি এ নির্বাচনে থাকছে না সরাসরি। ফলে আসছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ অবস্থায় তৈমূরের এখন অন্যতম একজন সহায়ক শক্তি হয়ে উঠছেন এস এম আকরাম যিনি বিগত দিনে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সেলিনা হায়াৎ আইভীর দোর্দন্ড দাপুটে হওয়ার পেছনেও এ আকরামের অবদান রয়েছে। এবার সেই আকরাম থাকছেন তৈমূরের পাশে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আকরাম থাকলে শক্তি বাড়বে তৈমূরের। এবারের নির্বাচনে তৈমূরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আইভী টানা তিনবারের জনপ্রতিনিধি। ২০০৩ সাল থেকে আইভী জনপ্রতিনিধি। সবশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচন ছাড়া আগের ২০১১ ও ২০০৩ সালের দুটি নির্বাচনে মূল ¯্রােতের বিপরীতে আইভীকে লড়তে হয়েছিল ক্ষমতাসীন দাপুটেদের সঙ্গে। এবার তাকে লড়তে হচ্ছে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপি নেতা হলেও ইতোমধ্যে দল তাকে আর পদে রাখেনি। ফলে নির্বাচনটি এবার বেশ জমজমাট। ১৯৯৬ সালে সদর-বন্দর আসনের এমপি ছিলেন এস এম আকরাম। এমপি হওয়া সত্তেও শামীম ওসমানের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। তার নির্বচনি এলাকাও শামীম ওসমান ও তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। এক সময় অসহায় হয়ে পড়ে এস এম আকরাম। ২০০১ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের চরম বিপর্যয় ঘটে। নির্বাচনের পর শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। নির্বাচনের ৪দিন পর ৫ অক্টোবর এস এম আকরাম শহরের লয়েল ট্রাং রোডস্থ তার বাস ভবনে তার নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা, কর্মী, সমথর্ক ও জেলা  আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদের নিয়ে একটি সভা করেন। এবং সবাইকে ভুড়িভোজ করানো হয়। ওই সভায় এস এম আকরাম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শামীম ওসমান আমাকে ফেল করিয়েছে। আমিতো এলাকায় সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করিনি। আমার এলাকায় সন্ত্রাস ছিল না। এখনতো নিজের জান বাঁচিয়ে শামীম ওসমান পালিয়ে গেছে। তার কারণে দলের নেতা-কর্মীরা মার খাচ্ছে। আমি আপনাদের ছেড়ে যাবোনা। পরে আকরামকে করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন এ যাবতকালের নারায়ণগঞ্জের আলোচিত নির্বাচনের একটি। ওই নির্বাচনে আকরামের নেতৃত্বে আইভীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। নেমে পড়েন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কথা বলেন অপরাজনীতি প্রসঙ্গে। ১৯৯৬ হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এমপি থাকলে ছিলেন দাপটহীন। তবে তাঁর কদর বেড়ে যায় নির্বাচনের পরে। করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক। আন্দোলন সংগ্রামে পুরোধা ছিলেন তিনি। গড়ে তুলেন আওয়ামী লীগের একটি শক্ত ভীত। প্রায় দেড় যুগ পর ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মোমবাতি প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে লড়ে জিতে যান আইভী যাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন বিএনপির ওই সময়ের নেতা নুরুল ইসলাম সরদার। ওই নির্বাচনে আইভীর পক্ষে মুখ্য ভূমিকাতে ছিলেন আকরাম যিনি আবার ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জেলার আহবায়ক পদে থেকেও দল সমর্থিত শামীম ওসমানকে বাদ দিয়ে আইভীর পক্ষে মেয়র নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ভোটের পরদিন আকরাম আওয়ামী লীগ ও পদ দুটি হতেই পদত্যাগ করে নাগরিক ঐক্যে যোগ দেন। আকরাম বলেন, ২০১১ এর নির্বাচনে আমাকে বলা হয়েছিল শামীম ওসমান যাতে মেয়র হতে পারে সেভাবে কাজ করেন। কিন্তু আমি সরাসরি সেটি প্রত্যাখান করে দিয়েছি। ২০০৩ সালের সেই পৌরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে আকরাম বলেন, তখন অনেক বড় বড় নেতারাও পালিয়ে যায়। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিন চৌধুরীকে সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুরোধ করেছিলাম। মতিন চৌধুরীকে বললাম একটা ফেয়ার নির্বাচনের জন্য। তিনি আমার কথা বুঝলেন। তিনি কথা দিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কোনো কারচুপি হবে না। তিনি তার কথা রেখেছিলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইভী তখন চেয়ারম্যান নির্বাচন হলেন। ২০১১ সালের পর তিনি নাগরিক ঐক্যে যোগ দিলেও নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। ২০১৪ সালের এপ্রিল নাসিম ওসমানের মৃত্যু পর তিনি উপ নির্বাচন করেন আনারস প্রতীকে। ওই নির্বাচনে সেলিম ওসমান জিতলেও টনক নড়িয়ে দিয়েছিলেন আকরম। পরে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হন আকরাম। কিন্তু সেখানেও হেরে যান। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যের প্রার্থী হয়ে সদর-বন্দর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এ আসনের সাবেক এমপি এস এম আকরাম। তবে নির্বাচনে তাঁর ভরাডুবি ঘটে। ভোটে শহর ও বন্দর আসনে ১৭১ ভোটকেন্দ্রে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান পেয়েছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪৫ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা সাবেক এমপি এস এম আকরাম পান ৫২ হাজার ৩৫২ ভোট।

Comment Heare

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *