দক্ষিণ মেরুর মিশন ব্যর্থ!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকদিন সরগরম ছিলো রাজনৈতিক অঙ্গন। বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরার হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে উঠা এবং বসুন্ধরার মালিকের সাথে উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের তোলা ছবিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে নানান দিক থেকে। অনেকেই বলতে শুরু করেন, আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকা থেকে মনোনয়ন পেতে এগিয়ে আছেন বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবাহান। এদিকে রূপগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে ণেয়ার পর শহরেও ঢুকতে চেয়েছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর উত্তরসূরি হিসেবে আবির্ভাব হওয়া ছেলে গাজী গোলাম মুর্তজা পাপ্পা। এজন্য তিনি গত বছর নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। শহরে তার পক্ষে পোস্টার সাটানো হয়। নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন রাজনীতিকও এর পেছনে কাজ করেন। তবে সে মিশন বা চেষ্টাটি আপাতত ব্যর্থ হতে চলেছেন। কারণ রূপগঞ্জে রাজনীতিতে এখন নতুন করে থাবা দিতে শুরু করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ফলে পাপ্পা আর শহরে আসছেন না। সংশ্লিষ্টরা জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরেও অফিস করার পরিকল্পনা ছিল পাপ্পার। পেছন থেকে কাজ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত। তারা নানাভাবে চেষ্টা করেন পাপ্পাকে শহরমুখী করার। বিনিময়ে তাদেরও ছিল স্বার্থ। কিন্তু শেষতক সেটা আর হয়ে উঠছে না। গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জে অনেকবার এসেছিলেন পাপ্পা। তাদের আশেপাশেই দেখা মিলে এ দুই রাজনীতিকের। বেশ ঘনিষ্ঠই ছিলেন তারা। দেখা করতে ছুটে যেতেন পাপ্পার অফিসেও। এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে নানা কথা। আছে নেতিবাচক অভিব্যক্তিও। পাপ্পা যখন সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন তখন তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে প্ল্যাকার্ড টাঙ্গানো হয়েছিল। কিন্তু এসকল প্ল্যাকার্ড টাঙ্গানোর কয়েকদিনের মধ্যেই সেগুলো শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এ নিয়ে জাহাঙ্গীর ও আরাফাত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন। তাদের কণ্ঠে ছিল পাপ্পার গুণগান আর প্রশংসার ঝুলি। তবে পরিবেশ উল্টে যায় গত ১৬ জানুয়ারি। এদিন আকবর সোবাহানের বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সময়ে রূপগঞ্জের একাধিক জনপ্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হন। সাক্ষাৎ শেষে তোলা ছবি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এই বৈঠককে অনেকেই, ‘প্রধানমন্ত্রীর রূপগঞ্জ আগমন শীর্ষক প্রস্তুতি সভা’ বলে চালিয়ে দিতে থাকেন। যদিও এই সভার বিষয়টি বার বার উড়িয়ে দিচ্ছিলেন দায়িত্বশীল নেতারা। কিন্তু মন্ত্রী গাজীর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত নেতারা বিষয়টিকে গুঞ্জনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করেছেন। এদিকে উদ্বোধন অনুষ্ঠান যত ঘনিয়ে আসছিলো তত বাড়ছিলো বসুন্ধরা গ্রুপের প্রভাব বিস্তার। পুরো রূপগঞ্জে আহমেদ আকবর সোবাহানের পোস্টারে ছেয়ে যায়। একইভাবে সভাস্থলের চতুর্দিকে সায়েম সোবাহান আনভীরের নানান ফেস্টুন ও বিলবোর্ড ছেয়ে ফেলা হয়। সব মিলিয়ে গাজী গোলাম দস্তগীরের বিপরীতে বসুন্ধরার ব্যাপক আধিপত্য দেখা যায় রূপগঞ্জ জুড়ে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচন করারও ঘোষনা দিতে শোনা যায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবাহানের ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের। তবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সেই সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। কারণ ২ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর পাশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান মন্ত্রী। এছাড়া মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপন এবং পাশে দাঁড়িয়ে মূল আয়োজনকেন্দ্র উদ্বোধন করতে দেখা যায় মন্ত্রীকে। যদিও আশেপাশে বসুন্ধরার কাউকেই দেখা যায়নি। সভাস্থলকে ঘিরে যেই বসুন্ধরার এত আগ্রহ দৃশ্যমান হয়ে উঠে, সেই সভাতেই তেমন কোন ভূমিকায় থাকতে পারেনি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ও তার মালিকরা। সূত্র বলছে, বসুন্ধরার মালিক শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে রূপগঞ্জ আসনে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করছেন। ইতোপূর্বে এই আসনে তাদের পক্ষে রফিকুল ইসলামকে নামালেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তিনি। এবার সরাসরিই মাঠে নেমেছেন খোদ বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন টানতে সর্বোচ্চ চেষ্টা যে করবেন তিনি তা প্রায় নিশ্চিত। প্রায় এক বছর আগে থেকেই যে এতটা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, সে সামনে আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠবে। তবে রূপগঞ্জের রাজনীতিকরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবারে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী গাজীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সুসম্পর্কের চিত্র দেখার পর পালটে গেছে ধারণা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বসুন্ধরার মালিক দল থেকে না পেলে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করতেই পারেন। এতে বাধা থাকবে না তার। কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে ভিন্ন কারও জয় পাওয়া ততটা সহজ হবে না। সেই কারনে, চিন্তামুক্ত হয়েছে মন্ত্রী গাজীর রাজনৈতিক বলয়। দলীয় মনোনয়ন পেলেই একজন প্রার্থী অন্তত পঞ্চাশভাগ চিন্তা মুক্ত থাকেন। বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে লড়তে হয় পুরোটা দিয়ে। আর সেইদিক থেকে চাপ কমেছে গাজী বলয়ের। ফলে, বছরের শুরুতে বসুন্ধরার মালিককে নিয়ে তৈরী হওয়া নানান ধুম্রজাল এবং দুশ্চিন্তা কমে এসেছে অনেকটাই।
Leave a Reply