Home » শেষের পাতা » বাজার মনিটরিংয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত

নারায়ণগঞ্জে বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ি কে?

০৬ এপ্রিল, ২০২০ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ | ডান্ডিবার্তা | 2493 Views

হাবিবুর রহমান বাদল
হঠাৎ করে নারায়ণগঞ্জের দৃশ্যপট যেন পাল্টে গেল। গত শনিবারও কোলাহল পূর্ন এ শহর থেকে নগরবাসীকে বাড়ি ফেরাতে পুলিশ থেকে শুরু করে সেনা বাহিনীকে মাঠে নেমে হিমশিম খেতে হয়েছে। সেই শহর গতকাল রবিবার বিকালের পর থেকে হঠাৎ করে পাল্টে যায়। জনপ্রতিনিধিরা বার বার তাগিদ দিয়েছে আপনারা ঘরে থাকুন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে দয়া করে কেউ ঘরের বের হবেন না। প্রয়োজনে আমাদের ফোন করুন আমরা আপনার বাসায় খাবার পৌছে দেব। সাংসদ শামীম ওসমান প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দয়া করে আল্লাহ’র দিকে তাকিয়ে ঘরে থাকুন। বাহাদুরি দেখাতে ঘরের বাইরে এসে নিজেকে, নিজের পরিবার পরিজনকে এমনকি সমাজের অন্যদের বিপদে ফলবেন না। কারণ এই মহামারি কাউকে ক্ষমা করছে না। আর এই প্রাণঘাতির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আমরা সচেতন থাকলে অবশ্যই জয়ি হব। নারায়ণগঞ্জের একটা লোকও অভুক্ত থাকবে না। বন্দরে এক মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর সেখানকার শতাধিক বাড়িকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়। সাংসদ সেলিম ওসমান এদের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন। এর আগেও ৭টি ইউনিয়ন ও সেলিম ওসমানের নির্বাচনি এলাকার নাসিক ওয়ার্ডে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসন সকলেই রাত-দিন সময়ের বাইরেও দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। যদিও আমাদের নারায়ণগঞ্জের হাসপতালগুলি ও প্রইভেট ক্লিনিকগুলির বিরুদ্ধে রোগী না দেখার অভিযোগ রয়েছে। জাতীর এই দু:সময়ে যারা সমাজে হিরু হিসাবে অবর্তীণ হতে পারতো তাদের মধ্যে মানবতা না জাগার কারণে জনতার স্যালুট থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। সাংসদ শামীম ওসমান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন একধিক বার ডাক্তারদের এ ব্যপারে অনুরোধ করেও কার্যত: নারায়ণগঞ্জবাসীর এখনো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থার মধ্যে নগরবাসী ঘরে না থেকে বাইরে বেরিয়ে আসায় করোনা ভাইরাস বিভিন্ন জনকে সংক্রমিত করতে শুরু করে। আর হঠাৎ করে গামেন্টন্স শ্রমিকরা বিভিন্ন উপায়ে কেউ বা যান বাহন আবার কেউ বা পায়ে হেঁটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ আসতে শুরু করে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার প্রধান যে কারণ সেটাই গামেন্টন্স শ্রমিকরা করে করোনা ভাইরাসকে উস্কে দেয়। কাদের কথায় অথবা কি কারণে হাজার হাজার গামেন্টন্স শ্রমিক ঢাকা নারায়ণগঞ্জে আসলেও আর কারাই বা তাদের নির্দেশ দিল তা এখন তদন্ত করার মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ শ্রমিকরা বলছে মালিকরা বেতন দেয়া এবং কাজে যোগ না দিয়ে চাকরি হারানোর ভয় দেখানোর কারণেই তারা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে তা জেনেও কাজে যোগ দিতে এসেছে। অথচ মালিক পক্ষ বলছে তারা এমন কথা বলেননি। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক প্রথম কাজে যোগ দেয়ার কথা থকলেও গতকাল রাত ১০টায় বিজিএমইএর’র পক্ষ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক শিল্প বন্ধ ঘোষণা করে। অবশ্য শনিবার রাতেই বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি আনুষ্ঠানিক ভাবে গামের্ন্টন্স কারখানা না খোলার ঘোষণা দেন। কিন্তু ইতিমধ্যে যা হওয়ার হয়ে গেছে। চরম দুর্যোগের মধ্যে নিপতিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। যেকারণে সাংসদ শামীম ওসমান ও সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা সমগ্র নারায়ণগঞ্জকে লকডাউনের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছেন। অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়ত আইভীর প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানিয়েছেন নাসিক এলাকা লকডাউন করা হউক। অন্যথায় প্রয়োজনে কারফিউ জারি করে মানুষ বাঁচানোর ব্যবস্থা করা হোক। গত ৮ মার্চ দেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পর সরকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা শুরু করে। স্থানীয় প্রশাসন সরকারি কর্মঘন্টার বাইরেও দিন রাত পরিশ্রম করেও শেষ পর্যন্ত গামেন্টন্স শ্রমিকদের এই মিছিলের পর দিন থেকে নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে একের পর এক শহরের ও বন্দরের বিভিন্œ এলাকা লকডাউন করা হয়। বিকালে পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে এলাকাবাসী নিজেরাই নিজের এলাকা লকডাউন করে দেয়। জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন জানান, শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা নয় বরং ফতুল্লার আশেপাশের শ্রমিক এলাকাও লখডাউনের আওতায় আনা হবে। নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ঘন্টায় ঘন্টায় পরিবর্তিত হচ্ছে। একটি সীমিত আক্রান্তের শহরকে কারা রেডজুনে পরিনত করলো এটাই এখন খুঁজে বের করা জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

Comment Heare

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *