নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দ্বিতীয় ধাপে নারায়ণগঞ্জে চলমান উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে কোনো প্রকার সহিংসতা কিংবা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে সে অবস্থানের কথা জানান দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু এবং কোনো প্রকার সহিংসতা বরদাস্ত হবে না বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। তবে প্রশাসনের কঠোরতার পরেও কয়েকটি ইউপিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের উপর হামলাসহ ক্যাম্প ভাঙচুর ও সমর্থকদের উপর হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। কায়েতপাড়া, কলাগাছিয়া, মদনপুর, কাশীপুর, আলীরটেক, মুছাপুর, গোগনগর ইউপিতে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থীদের উপর হামলা, ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ অক্টোবর কাশীপুর ইউনিয়ন নির্বাচনকে ঘিরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ওমর ফারুকের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল্লাহ বাদলের ছেলে ও তার ক্যাডার বাহিনীর উপর। সে হামলায় চেয়ারম্যানের ছেলে নাজমুল হাসান সাজনসহ অজ্ঞাত লোকেরা ওমর ফারুকসহ তার সমর্থকদের মারধর করে এবং তার ক্যাম্পে ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় সাইফুল্লাহ বাদলের ছেলেসহ ১৫৩ জনকে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলাও করেন ওমর ফারুক। গত রবিবার রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমানের প্রচারণায় হামলার অভিযোগ উঠে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাহেদ আলীর বিরুদ্ধে। জাহেদ আলীর লোকজনের বিরুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রচারণায় হামলা চালানোর অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান। এর আগে গত ২৭ অক্টোবর স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদ আলী। তার গণসংযোগে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি চালিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ করেন মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। গত ২৯ অক্টোবর রাতে বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদ প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের (ফুটবল প্রতীক) ক্যাম্প ভাঙচুর ও সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠে মোরগ প্রতীকের প্রতিপক্ষ প্রার্থী মান্নানের (বর্তমান মেম্বার) উপর। আব্দুল মোতালেবের নির্বাচনী ক্যাম্পে দোয়া চলাকালীন সময়ে মান্নানের নির্বাচনী মাইক তার ক্যাম্পের পাশে রেখে প্রচার চালাতে গিয়ে দোয়ায় বিঘœ ঘটায় আব্দুল মোতালেবের সমর্থকরা দোয়ায় বিঘœ না ঘটানোর জন্যে বললে মান্নানের লোকজন এসে তার ক্যাম্পটি ভাঙচুর করে। এতে আব্দুল মোতালেবের ৪ সমর্থক আহত হয়। এঘটনায় মেম্বার প্রার্থী মান্নানসহ তার ১৫ সমর্থককে অভিযুক্ত করে বন্দর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুল মোতালেব। গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ও ২৮ অক্টোবর দুপুরে সদর উপজেলার গোগনগরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জসিম উদ্দিনের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজর আলীর বিরুদ্ধে। জসিম উদ্দিনের অভিযোগ, ফজর আলীর লোকজন দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় জসিম উদ্দিন ২৮ অক্টোবর রাতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গত ২৯ অক্টোবর রাতে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজিম উদ্দিন প্রধানের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন প্রধানের (বর্তমান চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে। কাজিম উদ্দিন প্রধানের অভিযোগ, দেলোয়ার হোসেন প্রধান তার লোক দিয়ে রাত ১টা বা ২টার পর ক্যাম্পটিতে ভাঙচুর চালায়। একই রাতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মদনপুর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার পদ প্রার্থী মো. আক্তার হোসেন মোল্লা (ফুটবল প্রতীক) ও তার সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। আক্তার হোসেন মোল্লার অভিযোগ, তার প্রতিপক্ষ হোসেন মুন্সি (তালা প্রতীক) এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এছাড়াও এর আগে গত ২৭ অক্টোবর বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হাসানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাসুম আহমেদের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে। গত ২২ অক্টোবর আলীরটেকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আলামিন নামে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এদিকে ওই রাতেই আবার জাকির হোসেন সদর মডেল থানায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েমের বিরুদ্ধে একটি মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন।
Leave a Reply