নেতাদের মধ্যে কমলো বিরোধ!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে যেকজনের নাম উঠে আসছিলো আওয়ামী লীগ থেকে, এদের সকলেই সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী। ওসমান পরিবারের সাথে রাজনীতি করেই তারা পেয়েছেন নানান পদ। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সাংসদের সভা সমাবেশেও হাজির হন বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে কাকে রেখে কাকে দিবেন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের টিকেট তা নিয়ে উঠছিলো গুঞ্জন। প্রার্থীতায় এগিয়ে ছিলেন ৪ জন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল, ফতুল্লা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ আহমেদ লিটন, ফতুল্লা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা ছাত্রলীগের সভাপতি ও থানা সদস্য আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক। হিসেবের বাইরে রাখা হয়েছিলো বর্তমান পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপনকে। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। কিন্তু সকল সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে আবারও নৌকার টিকেট পেতে যাচ্ছেন লুৎফর রহমান স্বপন। গত মঙ্গলবার ফতুল্লা আওয়ামী লীগের জরুরী সভায় চেয়েছিলেন আরেকটি বারের সুযোগ। আর সেই সুযোগ তাকে পূরণ করে দিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এমন সিদ্ধান্তে কেউ কেউ মনঃক্ষুন্ন হলেও ফতুল্লা ইউনিয়নকে ঘিরে ওসমান বলয়ে ব্যালেন্স তৈরী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। ফলে ভেতরকার অন্তঃকোন্দলও হলো না, কেউ না পাওয়াতে খুব বেশী আক্ষেপও করলো না। গত মঙ্গলবার জরুরী সভায় স্বপন বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমি এই পরিষদের সদস্য ছিলাম। পরে মেম্বারদের ভোটে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছি। দেরীতে হলেও এই মামলা শেষ হয়েছে। আমি এই মামলার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করি নাই। অনেকেই বলেছিলো মামলা জিইয়ে রাখতে। নির্বাচিত চেয়ারম্যান আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানে অনেক পার্থক্য। আমি করজোরে অনুরোধ জানাবো আমি যেন একটি বারের মত চেয়ারম্যানের পদ পাই। দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত ছিলাম, কিন্তু তাতে আমার আত্মাপূরণ হয়নি। আমি আমার নামের পাশে চেয়ারম্যান দেখতে চাই। একটি বারের জন্য আমাকে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করছি।’ আলোচনায় এগিয়ে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল বেশ তৎপর ছিলেন এই ইউনিয়নে নৌকার টিকেট পাওয়ার জন্য। চলতি বছরের ৯ জুলাই প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় ড্রেজার। ফতুল্লার রওশনবাগ এলাকায় স্থাপিত এই ড্রেজার দিয়ে অপসারণ করা হয় লালপুরে এলাকায় বিদ্যমান অতিরিক্ত পানি। দৈনিক ১৭ হাজার টাকার তেল পুড়িয়ে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মীর সোহেল। সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশ অনুযায়ী এই কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি। লালপুরবাসীর সমস্যার সংকট নিরসনে দ্রুত এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি মেসেজ দিয়েছেন মীর সোহেল। সেসব হচ্ছে, ফতুল্লার আগামীর নেতৃত্বে তাকে সাংসদের সমর্থন দেয়া। লালপুরের জন্য তার যেই ত্যাগ সেই ত্যাগের পুরস্কার হিসেবে এবারের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন তাকে দেয়া। সোহেল আলীর পাশাপাশি আলোচিত ফাইজুল ইসলাম। ফতুল্লার একাংশে তিনি বেশ দাপুটে। করোনার সময়ে অসহায়দের পাশ ছিলেন তিনি। রাজনীতিতেও সক্রিয়। তাছাড়া ওসমান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফাইজুলের রয়েছে ভালো সম্পর্ক। রাজনৈতিক তেমন কোন সমালোচনা নেই তার বিরুদ্ধে। আলোচনায় ছিলেন ফতুল্লা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ আহমেদ লিটন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সোহেল ও ফাইজুল একই রাজনীতির পথে থাকলেও মনস্তাত্ত্বিক লড়াই আছে। সে হিসেবে এগিয়ে থাকতে পারেন ফরিদ আহমেদ লিটন। কারণ করোনার সময়ে লিটন ফতুল্লায় সক্রিয় ছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে তিনি বেশ স্বচ্ছ। শেষ পর্যন্ত সকল কূল রক্ষা করে পূর্বের চেয়ারম্যানকে আবারও নৌকার টিকেট দিয়ে ব্যালেন্স করলেন নেতা। ফলে তার অনুসারীরা অন্তত হতাশ হবেন না। ইতোপূর্বে তারা যেমন স্বপন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের কাজ আদায় করে নিতে পারতেন এবারও ঠিক একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। এর মাধ্যমেই নেতাদের ক্ষমতার ব্যালেন্স থাকবে এবং সুসংগঠিত থাকবে ওসমান বলয়।
Leave a Reply