পেশা বদলিয়েও ভালো নেই তাঁরা

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বাইরে সড়কের ফুটপাতে একটি ছোট্ট টেবিলে মাস্ক নিয়ে বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তাঁর বাসা নগরের খানপুরে এলাকায়। করোনার ঝুঁকি বা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও গতকাল বৃহস্পতিবার রোজগারের আশায় দোকান নিয়ে বসেন তিনি। কিন্তু রাস্তাঘাট ফাঁকা বা মানুষজন তেমন না থাকায় সকাল সাত থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত তিনি মাত্র ৮৫ টাকার মাস্ক বিক্রি করেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। বাসার সামনেই রয়েছে চায়ের দোকান। কিন্তু বিভিন্ন সময় সরকারের বিধিনিষেধ বা লকডাউনে দোকান বন্ধ রাখতে হয় তাঁর। এতে ঘরভাড়া বা সংসারের খরচ নিয়ে প্রতিবারই বেকায়দায় পড়তে হয় তাঁকে। তাই পেশা বদল করে শুরু করেন মাস্ক বিক্রি। কিন্তু বিধিনিষেধে বেচাবিক্রি কমে এখানেও বেকাদায় পড়েছেন তিনি। বেলা দেড়টায় ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েন সামসু। একটি গাড়ির শব্দে হঠাৎ ঘুম ভাঙে তাঁর। এ সময় সামসু বলেন, ‘প্রতিবার লকডাউনেই দোকান (চা দোকান) বন্ধ রাখতে গিয়ে ঘরভাড়া, সংসার খরচ নিয়া বেকায়দায় পড়তে হয়। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতে হয়। তাই এবার লকডাউনের শুরুতেই মাস্ক বিক্রি শুরু করি। কিন্তু রাস্তাঘাটে লোকজন না থাকায় মাস্কও বিক্রি হচ্ছে সেভাবে।’ প্রায় ১০ বছর ধরে নগরে রংমিস্ত্রির কাজ করছিলেন হায়দার আলী (৩৫)। সেই আয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কোনো রকম খেয়েপরে দিন পার হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে থমকে যাওয়া নগরজীবনের সঙ্গে তাঁর জীবনও থমকে যায়। কাজ হারিয়ে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। এরপর টিকে থাকতে শুরু করেন রিকশা চালানোর কাজ। রিকশা চালিয়ে হায়দার ভালোই ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই আবার বিধিনিষেধ শুরু হওয়ায় আয় কমে বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। দুপুরে নগরের শিববাড়ি মোড় এলাকায় কথা হয় হায়দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের আগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করা যেত। কিন্তু লকডাউনে মানুষজন কমে যাওয়ায় এখন গড়ে আয় হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।’ পেশা বদলের পাশাপাশি ব্যবসার ধরনও বদলিয়েছেন অনেক শ্রমজীবী। তল্লা এলাকার এমনই একজন মো. সোলাইমান। আগে রাস্তায় রাস্তায় বেলের শরবত বিক্রি করে সংসার চলত তাঁর। কিন্তু করোনার কারণে কমে যায় শরবত বিক্রি। পরিবারে শুরু হয় টানাপোড়েন। এরপর বাধ্য হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে শুরু করেন ডাব বিক্রি। কিন্তু বর্তমান বিধিনিষেধে রাস্তাঘাটে মানুষজন কমে আসায় ডাবও বিক্রি কমে গেছে। তাই পরিবার, সংসার খরচ নিয়ে এখন তাঁর সময়ও কাটছে কষ্টেসৃষ্টে। তাঁর ভাষ্য, প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা পাঠাতে হয় গ্রামের বাড়িতে। খুব কষ্টেসৃষ্টে বা নানা কাজ করে এত দিন সে টাকা পাঠাতেন তিনি। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে এক সপ্তাহ ধরে সব কাজ বন্ধ হওয়ায় বেকায়দায় পড়েন তিনি। তাই টিকে থাকতে শুরু করেন ডাব বিক্রি। কিন্তু রাস্তাঘাটে মানুষজন কম থাকায় ডাবও বিক্রি হচ্ছে না সেভাবে।’ সামসু, হায়দার বা সোলাইমানের মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা দিন আনেন দিন খান। তাই তো সরকারের বিধিনিষেধ টিকে থাকতে মূল পেশা বদল করেন তাঁদের মতো অনেকেই। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে লোকজন না থাকায় বদলে যাওয়া পেশাতেও কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের। এখানেও ভালো নেই তাঁরা।
Leave a Reply