বন্দরে বাজার দখল নিয়ে রনক্ষেত্র গুলিবিদ্ধসহ ১৫জন আহত

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বন্দরে একটি বাজার দখলে নিতে পিজা শামীম বাহিনীর সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ ১৫জন আহত হয়েছে। বিক্ষোব্ধ জনতা সন্ত্রীদের ২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ২টি মোটর সাইকেল ভংাচুর করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া একটার দিকে উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পাশে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে নাসির, মুকিত, ডালিম, সিজারসহ ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী মোটর সাইকেল বহর নিয়ে এলাকায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। পরে জমি মাপজোপ করে পিজা শামীমমের নেতৃত্বে একই এলাকার মৃত রাইসুল হক চেয়ারম্যানের ছেলে মঈনুল হক পারভেজের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা অন্তত ১৫-২০ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। ঘটনার সময় পুলিশও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ফরাজিকান্দা এলাকার প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে মঈনুল হক পারভেজ (৪২)। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী সোমা আক্তার (৩২), মা মাহফুজা হক (৬৫) এবং বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। গোলাগুলির ঘটনার পর এলাকাবাসী ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। মোটরসাইকেলগুলো হামলাকারীদের বলে জানান স্থানীয়রা। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল সুপারভাইজার জহিরুল আলম বলেন, ‘পাশের মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে গেছিলাম। তখনই ঘটনা ঘটে। পাশের বাজারের জমি নিয়ে ঝামেলা হয়। ১৫-২০ রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনেছি। প্রচুর হোন্ডা ছিল। কয়েকজন রাম দা, চাপাতি হাতে ঘোরাঘুরি করতেও দেখছি। মাসখানেক আগেও এই জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।’ গুলিবিদ্ধ পারভেজের ছোটভাই তানভীর আহমেদ বলেন, ‘একমাস আগে পিজা শামীমের নেতৃত্বে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয় বাজারের জমিতে। পরে কে বা কারা সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলে। দুইদিন আগে রাত ১টায় পিজা শামীম ও তার হোন্ডা বাহিনী আমাদের বাড়িতে এসে সাইনবোর্ড খুলেছি কেন জানতে চেয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করে।’ ‘আজকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে তারা বাজারের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিকে থাকে। চারদিকে তাদের হোন্ডা-বাহিনী। পরে আমার ভাই ৯৯৯ এ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেও তাদের থামাতে পারেনি। পুলিশের সামনেই সোয়া ১টার দিকে তারা হামলা করে। গুলি লাগে আমার ভাইয়ের বা পায়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ভাবীসহ আরও কয়েকজন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’ আহত মনিরুল হক পারভেজ জানান, কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলিতে আহত হয়ে লুটে পড়ি। ফিল্ম স্টাইলে রাস্তা থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাসায় ঢুকে পিজা শামীমের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী। তাদের ছোড়া গুলি আমার বাম পায়ে লাগে। আমি হাসপাতালে চিকিসাধীন। পারভেজের চাচা আবু তালেব বলেন, তার ভাই প্রয়াত রাইসুল হক ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সেতুর উত্তর পাশের জমিতে এখন ফরাজিকান্দা বাজার। এই জমিটির মালিক ছিলেন হাজী জহুরা বেগম। নিঃসন্তান এই নারী তার দুই সন্তানের নামে জমি লিখে দেন। জমিটি ৩০-৪০ বছর আগে তাদের কাছ থেকে কেনেন রাইসুল হক। ‘এ জমিটি ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও তার মেয়ে। তাদের পক্ষ হয়ে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমিটি দখল নিতে আসেন।’ ক্রয় করার সময় জমির পরিমাণ ৬৬ শতাংশ থাকলেও পরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য সাড়ে নয় শতাংশ অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি সাড়ে ৫৬ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে রাইসুল হকের পরিবার ভোগদখল করে আসছেন বলেও জানান আবু তালেব। তিনি বলেন, ‘জমির কাগজপত্র নিয়া বসুক। তারা যদি তাদের নামে কিছু দেখাতে পারে তাহলে নিবে, আমরা দেখাতে পারলে আমরা নেব। হিসাব তো ক্লিয়ার। কিন্তু এভাবে সন্ত্রাস করে কোন সমাধান হয় না।’ এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধে ২ পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। সেখানে গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। একজন এখন পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৯৯৯ এ ২ পক্ষের ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রথমে অল্পসংখ্যক পুলিশ সেখানে ছিল, পরে আরও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।’ জানতে চাইলে প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পারভীন ওসমান বলেন, ‘বন্দরের ওই জমির ব্যাপারে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। আমাদের নামে আছে কিনা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। আর জমি নিয়ে কোন মারামারি হয়েছে কিনা তাও জানি না।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিজা শামীম বাহিনী হামসলা করলে এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পারভেজের স্ত্রী সুমা হককে ঘাড়ে চাপাতি দিয়ে কোপ মারে ও রাইসুল হকের স্ত্রী মাহফুজা হককে মারধর করে। এ ঘটনা ঘটিয়ে বের হওয়া সময় এলাকাবাসীর ধাওয়ায় পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে নিয়ন্ত্রণে চেস্টা করে। এলাকাবাসী ধাওয়ায় নাসিম ওসমাস সেতু অতিক্রম করা সময় রনক্ষেত্র পরিণত হয়। এ সময় হোন্ডাবাহিনীর দুই হো-া ভাঙচুর চালায় ও দুইটি হো-ায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ বিষয় জাতীয় পার্টির নামধারী নেতা পিজা শামীমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার নামে মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রায় ১ মাস আগে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বসছিলাম কিন্তু সমাধান হয়নি। এর পর আর কোন খবর জানি না, আজকে সংঘর্ষের বিষয়ও আমি জানি না। আমি অসুস্থ্য, এ সমস্ত বিষয়ে আমি কেন যাবো। বন্দর থানার অসিসার ইনচার্জ ওসি আবু বকর ছিদ্দিক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply