Home » প্রথম পাতা » সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়

বন্দরে হতাশায় ক্ষমতাসীন!

০৯ আগস্ট, ২০২২ | ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ | ডান্ডিবার্তা | 79 Views

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আওয়ামীলীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতার আসনে। ক্ষমতাসীনদের হতাশাজনক পরিস্থিতি,  কাঁধে হাত রেখে সংগঠিত হচ্ছে জাতীয় পার্টি-বিএনপি। বিগত  ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘ওলটপালট’ হয়ে গেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এদিকে দেশে লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে রাজপথ দখলে নিচ্ছেন  নারায়ণগঞ্জের  বিএনপির রাজনীতিতে বেশ পরিবর্তন লক্ষনীয়। বিগত ইউপি ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করার মত ঘটনা ঘটলেও বর্তমান দৃশ্য উল্টো। দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জেলা কমিটির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর কমিটির সদস্য সচিব এ টি এম কামালকে। এদিকে দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে সঠিকভাবে কাজ না করায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে। ইতোমধ্যে কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার কারনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিস্ক্রিয়তা দেখা মিলেছে। জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা হয়েছে। জানা গেছে, সিটি নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির কোন নেতা নির্বাচনে কী ভূমিকা রেখেছেন, সে বিষয়ে তথ্য জোগাড় করেছেন। জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার আচরণে ক্ষুব্ধও হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আগামী সভায় প্রস্তাব তুলবেন বলেও জানা গেছে। এদিকে নির্বাচন-উত্তর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মাত্রা যোগ করা হচ্ছে দুই দলের স্থানীয় রাজনীতিতে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে জেলা, মহানগর, উপজেলা-থানা, ওয়ার্ড বিএনপিসহ দল ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি। আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। তার আগেই সব ইউনিট কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাসিরউদ্দিনকে। তৈমূর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কারের পর রাতেই নাসিরউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে বহিষ্কারের পরপরই এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর খান সেন্টুকে। মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। হেফাজতের মামলায় কারাগারে আছেন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এতে দল ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতি যথেষ্ট সক্রিয় হতে যাচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই তার ফলাফল দৃশ্যমান হবে ইনশা আল্লাহ। আরো জানান, ১০টি উপজেলা/থানা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। সেগুলো গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সদর ও বন্দর থানা বিএনপির কমিটি গঠিত হচ্ছে সহসাই। মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে ১৬টি কমিটি গঠিত হয়েছে। বাকিগুলোও কিছু দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। নাসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী থাকলে তাদের দল থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বহিষ্কার হন এ টি এম কামাল। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি একজন সমর্থক ও কর্মী হিসেবে রাজনীতি করে যাব। আমি দলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে কাজ করে যাব। তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপি আমাকে নির্বাচন থেকে বসিয়ে দিল। আর কুমিল্লার সাক্কুকে নির্বাচন করতে না করল। তার পরও সে করল। আর এখন দল নির্বাচনে যাবে না, তারপরও আমাকে বহিষ্কার করা হলো। এটাই যদি দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতি হয়ে থাকে, তাহলে এটাই মেনে নিতে হবে। ‘দল আমার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি সে ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ করব না। কারণ, আমি তো দল পরিবর্তন করব না। আওয়ামীলীগ সরকার টানা ৩ বারের মত দেশ পরিচালনা করলেও ক্রমশই সাংগঠনিক ভীত দূর্বল হচ্ছে। নারায়নগঞ্জের রাজনৈতিক চিত্র অনেকটা উল্টো দিকে প্রভাবিত হচ্ছে।  ক্ষমতাসীনদের কাঁধে হাত রেখে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত হচ্ছে। যা নাসিক নির্বাচনে দেখা মিলেছে। তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কারে অনেকটা সুবিধা জনক অবস্থানে আছে সদর-বন্দর আসনের সাবেক সাংসদ এড. আবুল কালাম, আতাউর রহমান মুকুল ও আবুল কাউসার আশারা। নাসিক ২৩ নং ওর্য়াডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন এমপি পুত্র মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাউসার আশা। আশা কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে বসে থাকা নেতাকর্মীদের মাঝে সক্রিয়তা ফিরে আসছে। আওয়ামীলীগের সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগকে ঢেলে সাজানো হবে। এর অংশ হিসেবে দলের জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগও পুনর্গঠন করা হবে। দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদে উত্থাপন করা হবে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দিয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। ডা. আইভীর নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শে এ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি বড় অংশ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি বলে জানিয়েছেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নেতা-কর্মীরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেননি। নির্বাচনী কাজে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাননি। ভোটের দিন সকাল ১০টায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নারায়ণগঞ্জে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের পাননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবকলীগের নেতারা ১২ জানুয়ারি বিকেলে বন্দরে আসলে মহানগর সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন,  সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান বিশাল মিছিল নিয়ে তাদের সাথে নৌকার প্রচারণা করেন। তারপরও অদৃশ্য কালো শক্তির ইশারায় সেই কমিটি বিলুপ্ত করেছে। নারায়ণগঞ্জে নতুন করে সংগঠন সাজাবে কৃষক লীগও। সংগঠনটির সভাপতি সমীর চন্দ বলেন, নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে দুই মাস আগেই কৃষক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। শিগগিরই আমরা নারায়ণগঞ্জে কৃষক লীগের কমিটি পুনর্গঠন করব। সিটি করপোরেশনের ভোটের আগে ভেঙে দেওয়া হয় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। এই কমিটির প্রধান নেতারা আইভীবিরোধী হিসেবে পরিচিত। যুবলীগ নেতারা নির্বাচনের শুরু থেকেই মেয়র প্রার্থী আইভীর পক্ষে মাঠে থাকায় তাদের কমিটি বহাল থাকছে বলে জানা গেছে। অপর দিকে বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১ টি নৌকার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গাজী এম এ সালাম। অন্য ৪টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কৌশলে জাতীয় পার্টির করে নেন। দেলোয়ার হোসেন প্রধান, এহসান উদ্দিন আহমেদ, মাকসুদ হোসেন ও কামাল হোসেন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার আসনে থাকলেও বন্দরের রাজনৈতিক চিত্র অনেকটা উল্টো। ওসমান পরিবারের রাজনীতিতে এক সময় বেশ সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে ভিন্ন দৃশ্য। নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে এরুপ অবস্থা বলে অনেকে জানান। সদর-বন্দর আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির বলয়কে শক্তিশালী করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজের মত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে নিলেও সিটি নির্বাচনে তার ভূমিকা ছিল উল্টো। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠানের দিনই জাতীয় পার্টির ৪ চেয়ারম্যান মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের “হাতি” প্রতীকের গণসংযোগ করেন। যে ৪ চেয়ারম্যান এখন জেলা জাতীয় পার্টি সহ সভাপতি। যা দৃষ্টি গোচর হয় নেতাদের। একদিনের মিছিলে সিটি নির্বাচনের পুরো প্রেক্ষাপটে আঘাত হানে। সিটি নির্বাচন (আওয়ামীলীগের পর্যবেক্ষন) টিম তাদের মত করে কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জ প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এমপির দিকে চেয়ে অনেকে কাউন্সিলর পদে পরাজিত হয়। বন্দর উপজেলা এলাকা জাতীয় পার্টির দখলে আর থানা (সিটি) এলাকা ২০নং ওর্য়াডে বিএনপির শাহেন শাহ আহমেদ, ২২নং ওর্য়াডে মহানগর বিএনপির নেতা সুলতান আহমেদ,  ২৩নং ওর্য়াডে আবুল কাউসার আশা ও ২৫ নং ওর্য়াডে এনায়েত হোসেন। বন্দর শহরের প্রধান ওর্য়াডগুলো বিএনপির সক্রিয় নেতারা কাউন্সিলর হয়েছেন। ১ টি জাতীয় পার্টির আর বাকি ৪ টি আওয়ামীলীগের হলেও তাদের কোন পদ পদবী নেই। ২৭নং ওর্য়াড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য ৩ জন নামে মাত্র সরকার দলীয়। সাংগঠনিক কোন শক্তি নেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে ইউপি ও সিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক চিত্র অনেকটা উল্টো দিকে প্রভাবিত হচ্ছে। হ্যাট্রিক বিজয়ী নাসিক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলয় সক্রিয় হচ্ছে, ওসমান পরিবার পন্থী নেতাকর্মীরা বেশ সংকিত ও হতাশায় নিমজ্জিত। আগামী দিনের রাজনীতি ও কেন্দ্রের দিকে দৃষ্টি সকলের। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কমিটি বিলুপ্ত, সুযোগে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে বেশ শক্তিশালী।

Comment Heare

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *