বাঁধই এখন ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
‘অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষে বাঁধ দেওয়া হয়ে ছিল। সেই বাঁধের ফাঁদে আটকে এখন হারিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমিই। ডিএনডি বাধেঁর ভেতরের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের গ্রাম গুলো ঘুরেও এখন আর দেখা পাওয়া যায় না ধান-পাট কিংবা রবি ফসল। গ্রামের সাবেক কৃষকরা জানান, ‘কয়েক বছর পূর্বেও কিছু জমিতে চাষ করতেন। এখন অতিরিক্ত পানির জন্য জমি গুলো পরিত্যক্ত। কৃষি পেশা ছেলে শিল্প কারখানায় কাজ করছেন তাঁরা।’ বন্যায় প্রায়ই ফসল ক্ষতি হতো। তাই অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষে ১৯৬৫ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার ৫ হাজার ৬৪ হেক্টর আয়তনের জমিতে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তত্বকালীন সরকার। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ১৯৬৮ সালে। বাঁধের ভেতর প্রথম কয়েক দশক ফসল উৎপাদন হলেও ১৯৯০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে ফসল উৎপান কমতে থাকে। কারণ হিসেবে সাবেক কৃষক শাহীন মিয়া বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যায় সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন তুলনা মূলক ভালো ছিল এই অঞ্চলের মানুষের অবস্থা। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ডিএনডি বাঁধের ভেতর শীল্প কারখানা গড়ে উঠে। সাথে সাথে মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে আবাসনও। এতে ফসলী জমির পরিমান ক্রমাগতই কমছিল। পাশাপাশি শিল্প কারখানা গুলো থেকে নিগত বর্জ্য ও পানি সেচ প্রকল্পের চাহিদার থেকে বেশি হওয়ায় হাজারও হেক্টর জমি ফসল আবাদের অনুপযোগী করে তুলেছে। কয়েক বছর পূর্বেও ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের শিয়াচর, পিলকুনি, নন্দলালপুর, ভূইঘর, সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি ও মিজমিজি এলাকায় ফসল আবাধ করতে দেখা যেতো। গত ১ সপ্তাহে এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমি এখনও কৃষি কাজ করার উপযোগী। কিন্তু চৈত্র ও বৈশাখ মাসেও সেই জমি গুলোতে পানি আটকে আছে। ফলে অনাবাদি হয়ে উঠেছে জমি গুলো। কৃষি পেশা ছেড়ে শিল্প কারখানায় চাকরীতে যুক্ত হওয়া জালকুড়ির আবুল হোসেন জানান, এক দশক পূর্বেও শুধু বর্ষা মৌসুমেই এই এলাকাটির কৃষি জমি গুলোতে পানি থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পানি আর নামছে না। ফলে জমি গুলো আবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তাই কিছু জমিতে এখন মাছ চাষ করা হয়। আর অনেক জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ-‘এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে’। সেখানে নারায়ণগঞ্জে হাজারও হেক্টর জমি পরে আছে অনাবাদি। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইসহাক জানান, ‘আমরা সাবেক জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনকে লিখিত চিঠির মাধ্যমে ব্যাপারটি তুলে ধরেছিলাম। পরে সে ডিএনডি পাম্প হাউজ, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানায়। আমরা একদিন সমস্যাটির কারণ অনুসন্ধ্যান করতে গিয়ে দেখেছি, জমি গুলো পানিতে তলিয়ে থাকলেও বিভিন্ন স্থানে খাল গুলো দখল হওয়ায় পাম্প হাউজে পর্যাপ্ত পানি পৌছাতে পারছে না। তবে, সব কিছুর পরেও আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ডিএনডির ভেতরের খাল গুলো পুনরায় উদ্ধার করছেন। পাশাপাশি নতুন করে আরও ৫টি পাম্প হাউন নির্মান করছেন। এ সব পাম্প হাউজ ও খাল উদ্ধার হলে পানি থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply