বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার জন্মদিন আজ

হাবিবুর রহমান বাদল
বাঙালির স্বাধীন ভূমি মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। আর সে কারণেই তিনি আমাদের জাতির পিতা। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনটি জাতীয় শিশু কিশোর দিবস হিসেবেও উদ্যাপিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠান চলছে। বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চায় ১৯৭১ সালে নতুন মানচিত্র পাওয়া বাংলাদেশের বিজয় অর্জনকে। স্মরণীয় করে রাখতে চায় এ প্রজন্মের হৃদয়ের মণিকোঠায়। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের ইতিহাস এখন দিবালোকের মত সত্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। জাতির পিতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। আর বাংলাদেশ সৃষ্টি না হলে এদেশের মানুষ স্বাধীন দেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হতো না। ফলে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকীকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার বছর ব্যাপী অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। আজ জাতিরপিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সমগ্র বাংঙ্গালী জাতি উৎসবে মেতে উঠবে। নারায়ণগঞ্জেও বিভিন্ন সংগঠন এ উপলক্ষে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব আজ বিকালে শতাব্ধির মহানায়ক, বাঙ্গালী জাতির অভিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ক্লাব অভ্যন্তরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর মূর্যাল আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বছর ব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এ উপলক্ষে বছর ব্যাপী কর্মসূচি পালন করে। আজ সেই কর্মসূচির সমাপ্ত দিনে বঙ্গবন্ধুর মূর্যাল আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। বাঙালি জাতির শ্রষ্টা পরম ভালোবাসার মানুষটির জন্মদিন আজ। পুরো জাতির জন্য আনন্দের, উৎসবের, গর্বের মহাকাঙ্খিত একটি দিন। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুরো জাতি ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে নানা আয়োজনে যুক্ত। বিনম্র শ্রদ্ধায় তার এই জন্মের মাহেন্দ্রক্ষণটিকে আমরা উদযাপন করব। শুধু আজ নয় বছরব্যাপী নানা আয়োজনে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করে জাতি। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর দিন থেকে ২০২২ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ বর্ষ উদযাপন করা হবে। নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন স্মৃতির সাথে মিশে রয়েছে আনন্দ। তবে শুধু আনন্দে ভেসে না গিয়ে আমরা অবশ্যই তার জন্মের দিনটিকে নিজেদের দেশ গড়ার পথে নিয়োজিত করতে শপথ নেব। শুধু আনন্দ করে দিন পাড়ি দেওয়া নয়। আমরা যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে সততা, প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারি, গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি সেই শপথও নেব। শ্লোগাননির্ভর নয় সত্যিকার অর্থেই যেন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে পারি সবাইকে নিতে হবে সেই শপথও। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাঙালি জাতির জন্য শ্রেষ্ঠতম কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করার স্বীকৃতিস্বরূপ বিবিসির জরিপে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন। বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন দেশের তিনিই প্রথম রূপকার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মধ্যযুগে শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ স্বাধীন সুলতান হিসেবে বাংলাদেশের সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। কিন্তু ইলিয়াস শাহ বাঙালি ছিলেন না। সেদিক থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথম বাঙালি যিনি স্বাধীন বাংলার প্রথম ‘নৃপতি’। বাঙালিদের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার প্রয়াস অনেক বাঙালি নেতার মাঝেই দেখা গিয়েছে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এদের সবার অবদান বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয়। বাঙালিরাও তাদের স্মরণ করে নানা নামে ডাকে। ‘দেশবন্ধু’, ‘নেতাজী’, ‘শেরে বাংলা’ প্রভৃতি। তবে ‘বঙ্গবন্ধু’ পূর্বের সকলকেই ছাড়িয়ে গেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়। তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ভাষণের অন্য নাম ‘বজ্রকণ্ঠ’। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। মা-বাবার আদরের ‘খোকা’ এখন ‘হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’, ‘স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা’, ‘জাতির পিতা’, ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘বাংলাদেশের জনকসহ আরো অনেক নামে অভিষিক্ত। কিন্তু সার্বিকভাবে তিনি একটি আদর্শের নাম যে আদর্শে উদ্ভূত হয়ে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, বিশ্বের বুকে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। তার যে ত্যাগ ও সংগ্রাম সে সবই আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হয়ে ধরা দিয়েছে তরুণ প্রজন্মের সামনে। যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ, মোহ, পদ-পদবির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি কখনো ক্ষমতার পেছনে ছুটেননি। বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বরণ করবে আনন্দ উৎসব আর মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার মধ্যে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। জাতির জন্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিনে ডান্ডিবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে বলতে চাই “হে পিতা তোমার জন্মশত বর্ষে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী”।
Leave a Reply