সিদ্ধিরগঞ্জে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নং ওয়ার্ডে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বা এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার বেপরোয়া আকার ধারণ করছে। এরা রীতিমতো উঠতি বয়সি অপরাধীতে পরিণত হয়েছে। কথিত বড়ভাইদের আশীর্বাদের নতুন চকচকে খুদে অস্ত্র প্রদর্শন থেকে শুরু করে মাদকে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে নানা প্রকার অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। এদের নিয়মিত দৌড়াত্বে পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে আতংক। ভাবিয়ে তুলছে সমাজপতি ও সমাজের চিন্তাশীল মানুষদের। অন্যদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীও এদের রুখতে হিমশিম খাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করেপারেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদর্শহীন রাজনৈতিক ছাতার নিচে বা নেতাদের আনুকূল্যে তারা কোনো কিছুকেই যেন পরোয়া করছেন না। প্রশাসন বলছে, অভিভাবকদের অবহেলায় বিপথে যাচ্ছে কিশোররা। পুলিশ বিভাগের সেই চিরাচরিত হুঁশিয়ারি-অপরাধ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।জানা গেছে, আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নং ওয়ার্ডে বেপোরোয়া হয়েছে চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী গং। এলাকার কতিপয় নামধারী চিহ্নিত বড়ভাইদের ছত্রছায়ায় এরা প্রকাশ্যেই নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে আসছে। এ ওয়ার্ডের অলিগলিতে দিনভর এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত দলবদ্ধভাবে বিচরণ করছে তারা। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেষে এ ওয়ার্ডের অবস্থান হওয়ায় এলাকাটি বর্তমানে অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। মহাসড়কে চুরি ছিনতাই করে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। গার্মেন্টস কারখানাসহ বিভিন্ন কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে যুবতী নারী শ্রমিকদের করছে উত্ত্যক্ত। দিচ্ছে কূ-প্রস্তাব। এতে নারী শ্রমিকরা হয়ে পড়ছে নিরাপত্তাহীন। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। এরই মধ্যে ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে ইসি। এসব অপরাধীদের যদি ইতিমধ্যেই না রুখা যায় তাহলে ৩ নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী সহিংষতায় প্রানহানীরও আশংকা করছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, সঙ্গবদ্ধ সন্ত্রাসী ও একাধিক কিশোরগ্যাং চক্র দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় উৎপাত শুরু করেছে। এসব কিশোরগ্যাংদের ব্যবহার করা হচ্ছে লাঠিয়াল হিসেবে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন অপরাধিরা এসব কিশোরগ্যাং সদস্যদের শেল্টার দিচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দানকারী জিসান, জনি, মাদক ও পরিবহন চাঁদাবাজ লিটনসহ একাধিক সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী ও কিশোরগ্যাং। এসব বাহিনীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাবিব, তুষার, তাহেরুল, সাইফুল। আবারা এদের নেতৃত্বে রয়েছে সালমান, রাকিব, সিদ্দাম, দিপু, রোমান, রাজু, শাওনসহ আরো অর্ধশতাধিক। এদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ, র্যাব-১১ তে একাধিক অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। আবার অনেকের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। আবার কেউ কেউ বিএনপি. জামাত ও হেফাজকের তান্ডবের মামলা সগ্নিদ্ধ তালিকাতেও রয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩ নং ওয়ার্ডে প্রার্থীর গনসংযোগ, উঠান বৈঠক ও প্রচারণায় প্রকাশ্যেই তাদের দেখা যায়। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মজার বিষয় হলো ওই কাউন্সিলর প্রার্থীরাই মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধের কথা বলে ভোটারদের মন কাড়ার চেষ্টা করছেন। আবার নিজেরাই মাদক ব্যবসায়ি, সন্ত্রাসী, পরিবহন চাঁদাবাজ, ভুমিদস্যু ও বখাটেদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। কোনো কোনো প্রার্থীর সাথে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ৩ নং ওয়ার্ডে অপরাধীদের তৎপরতায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রীয়তায় দিন দিন বেপরোয়া হযে উঠছে চিহ্নিত অপরাধীরা। নির্বাচন ঘিরে এই সকল অপরাধীরা প্রকাশ্যে বিচরণ করলেও রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ প্রশাসন। আবারা কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষ অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদেরও করছে নানাভাবে হেয়। প্রার্থী ফেন্টুন ব্যানার পোষ্টার ছিড়ে ফেলাসহ নানা অপকর্ম করছে তারা। এলাকাবাসীর সূত্রমতে, বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলার আসামী, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের রীতিমত এখন পোয়া বারো। একদিকে তাদের মাদক ব্যবসা জমজমাট, অন্যদিকে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা কামানোর প্রতিযোগিতা চলছে। দিনে এক প্রার্থীর পক্ষে দেখা গেলেও রাতে আরেক প্রার্থীর আখড়ায় দেখা যায় তাদের। এই প্রক্রিয়ায় তারা নিজেদের দাম বাড়ায়। মানে যে বেশি টাকা দিবে শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে মাঠে থাকবে। কিন্তু এই প্রার্থীরা জানেন না, সকল অপরাধ অপকর্মের জবাব নিরবে ব্যালটের মাধ্যমে দিবে সাধারণ ভোটাররা। তবে নির্বাচনে ভরাডুবির আশংকা থাকলেও প্রার্থীরা অপরাধীদের নিজের সাথে রাখতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করছেন। মনে হচ্ছে কতিপয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে ভোটারদের চেয়ে অপরাধীদের দাম বেশি । কিন্তু তারা জানেন না যে, কেন্দ্র দখল করে পেশি শক্তি দিয়ে ভোটে জেতার দিন শেষ। ভোট ইভিএম মেশিনে। সেখানে ব্যালটে সিল মারার সুযোগ নেই। তাই ভোটারদের মন জয় করতে হবে। আর অপরাধীদের সাথে নিয়ে ভোটারদের মন জয় করা যায় না। যেখানে এমনিতেই সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ি ও বখাটেদের জ্বালায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সেখানে কোন কাউন্সিলর প্রার্থীর সাথে তাদের দেখলে সামনে কিছু না বললেও পিছনে ভোটাররা ঠিকই খেয়াল রাখছে। যার জবাব ভোটের দিন দিয়ে দিবে। এদিকে এ সকল সন্ত্রাসী ও কিশোরগ্যাং চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
Leave a Reply