আজ রবিবার | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ | ২৩ শাবান ১৪৪৬ | দুপুর ২:২৬
শিরোনাম:
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে।    ♦     ফতুল্লায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যত অপকর্ম    ♦     যথাযোগ্য মর্যাদায় নিউ ন্যাশন কিন্ডার গার্টেনের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন    ♦     ফরিদ হত্যায় ১৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা    ♦     শহরে জাকির খানের পক্ষে শোডাউন    ♦     ফতুল্লায় বিএনপির সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতিমূলক সভা    ♦     আওয়ামীলীগ ছাড়া সকলের সাথে ঐক্য গড়তে রাজি: আজাদ    ♦     সোনারগাঁয়ে শিশুকে শ্বাস রোধে হত্যা    ♦     নিজের আখের গোছাকে অনেক সাংবাদিক দালালি করে    ♦     ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে পুন:গঠনে বিএনপির পক্ষে সম্ভব    ♦    

আজ মহান একুশে ফেব্রæয়ারি

ডান্ডিবার্তা | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আজ শুক্রবার মহান একুশে ফেব্রæয়ারি। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বজনবিদিত। দেশ বিভাগের পর থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটি নারায়ণগঞ্জে জোরালো হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ এর ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জের বিজলী প্রেস থেকে স্ফুলিঙ্গ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে ড. এনামুল হকের লেখা একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, যার শিরোনামটি ছিল, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা কেন?’ লেখাটির প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরবর্তী দুই সংখ্যায় এটি শেষ হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার পত্রিকাটির ঐ সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত করে এবং পরে বিজলী প্রেসটিকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। ভাষা আন্দোলনের শুরুতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিপক্ষে যে তাত্তি¡ক লড়াই সংঘটিত হয়েছিল, বলা চলে সে সময় থেকেই নারায়ণগঞ্জে ভাষা সংগ্রামের শুরু। ১৯৫২ সালের জানুয়ারির শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে মফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও আজগর হোসেন ভূঁইয়াকে যথাক্রমে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক করে সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২১শে ফেব্রæয়ারি নারায়ণগঞ্জের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট শেষে বিকেলে রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউটের সামনে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এক সমাবেশের আয়োজন করে। মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম ছিলেন ঐ সমাবেশের প্রধান অতিথি। সমাবেশে বক্তৃতা করেন আলমাছ আলী, বজলুর রহমান, মুস্তাফা সরওয়ার প্রমুখ। সভা চলাকালীন সময়েই আবুল হাসিমের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে পারেন ঢাকার ছাত্র মিছিলে গুলি করা হয়েছে এবং কয়েকজন ছাত্র মারা গেছেন। মুহূর্তের মধ্যেই জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মর্গ্যান গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীদের বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন সে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ বেগম। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তমদ্দুন মজলিসের পত্রিকা সাপ্তাহিক সৈনিক ‘নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালন’ শিরোনামে ঐ দিন সংবাদে উল্লেখ করে ‘এখানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালন করা হইয়াছে। সমস্ত দিন ধরিয়া দোকান পাট, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যাবতীয় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকে এবং ছাত্রগণ শ্লোগান সহকারে শোভাযাত্রা করিয়া শহরের রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। অপরাহ্নে টানবাজার ময়দানে একটি জনসভা হয়। সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করিয়া বিভিন্ন বক্তা বক্তৃতা করেন। অপরাহ্নে ঢাকা হইতে ছাত্রদের উপর গুলি চালনার সংবাদ আসিয়া পৌঁছালে স্থানীয় ছাত্র ও জনসাধারণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।’ ঐ রাতেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য তদানিন্তন জিন্না সড়কের (বর্তমান বঙ্গবন্ধু সড়ক) পূর্ব পাকিস্তান লেবার ফেডারেশনের কার্যালয়ে একটি গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় সফি হোসেন খান, ডা. মজিবর রহমান, শামসুজ্জোহা, বজলুর রহমান, মসিউর রহমান, নাজির মোক্তার, বাদশা মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু গোপন সে বৈঠকের খবরটি বৈঠক চলাকালীন সময়েই ফাঁস হয়ে যায়। সভার শেষ পর্যায়ে মহকুমা প্রশাসক ও পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ মহকুমা প্রশাসককে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে তারা আন্দোলন পরিচালনা করবেন, কোনও বিশৃঙ্খলা হবে না। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সেখান থেকে চলে যায়। সেই সভায় ২৩ ফেব্রæয়ারি নারায়ণগঞ্জে একটি বড়-সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সমাবেশকে সফল করার লক্ষে রাতেই সফি হোসেন খান ও কাজী মজিবর শ্রমিক জমায়েতের জন্য মিল এলাকায় চলে যান। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে পর দিন সারা বাংলায় হরতাল আহবান করে কেন্দ্রীয় ভাষা-সংগ্রাম পরিষদ। ২২ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহর হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী। সকাল থেকেই মিছিল আর মিছিল। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, খুনি নূরুল আমীনের ফাঁসি চাই,’ ‘রক্তের বদলে রক্ত চাই,’ ‘এম.এইচ কোরেশীর রক্ত চাই’ ইত্যাদি শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হতে থাকে। এম.এইচ. কোরেশী তখন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁরই নির্দেশে ২১ ফেব্রæয়রি ঢাকায় গুলি চালানো হয়েছিল। ‘সকাল দশটার দিকে বাবুরাইল থেকে আফজল হোসেন, আব্বাস আলী ও আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। এ মিছিলে আবুল কালাম আজাদ ও মহিউদ্দিনকে যথাক্রমে এম.এইচ. কোরেশী ও নূরুল আমীন সাজিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে রেখে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করিয়ে জুতা পেটা করা হয়। পথে পথে জনতা তাদের প্রতি বিদ্রƒপাত্মক ধ্বনি দেয়। মিছিলটি টানবাজার হয়ে কালীর বাজারে যাওয়ার পথে এক জুতার দোকান থেকে নূরুল আমীনের দিকে দোকানের জুতা ছুঁড়ে মারা হয়। জুম্মার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে গায়েবানা জানাজা ও শহীদদের উদ্দেশ্যে দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিকেলে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মহিলারাও সে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। নারায়ণগঞ্জে ২৩ ফেব্রæয়ারিও পূর্ণ হরতাল পালিত হয় এবং পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী বিকেলে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান তোলারাম কলেজের স্থানে চাষাঢ়া মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো ছাত্র-জনতা সমাবেশে জড়ো হন। গোদনাইল শ্রমিক-অঞ্চল থেকে বিভিন্ন মিলের কয়েক হাজার শ্রমিক সমাবেশে যোগদেন। মমতাজ বেগম ছাত্রী ও শিক্ষকদের একটি বিশাল মহিলা দল নিয়ে সমাবেশে এসে যোগ দেন। সমাবেশের সকল বক্তা তীব্রভাবে নূরুল আমীন সরকারের সমালোচনা করে বক্তৃতা করেন। শ্রমিক নেতা ফয়েজ আহাম্মদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন সফি হোসেন খান, নাজির মোক্তার, সোলায়মান, এফ.রহমান, খোরশেদ আহমদ, আবদুল কাদের, সুলতান মাহমুদ মল্লিক, জানে আলম প্রমুখ। পরদিন ‘নারায়ণগঞ্জের বিরাট জনসভায় মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবি’ শিরোনামে আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় ‘তুলারাম কলেজের রিক্যুইজিশন করা জমিনে এক বিরাট জনসভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা জনাব ফয়েজ আহমদ। শ্রমিক নেতা সোলায়মান, এফ.রহমান, সফি হোসেন খান, খোরশেদ আহমদ প্রমুখ বক্তাগণ প্রদেশের বর্তমান মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবি করেন।’ নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা পরবর্তীতে সারা বাংলার আন্দোলনকে প্রভাবিত করে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা