আজ মঙ্গলবার | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১২ ফাল্গুন ১৪৩১ | ২৫ শাবান ১৪৪৬ | দুপুর ১২:০১

না’গঞ্জে হকার-প্রশাসনের কানামাছি খেলা!

ডান্ডিবার্তা | ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
অবৈধ দখলের শহরে পরিনত গয়েছে নারায়ণগঞ্জ। এই শহরের রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে সব জায়গায় এখন দখল আর দখল। মূলত নগরীর এই দখলবাজীকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির কারণে অনেক চেষ্টার পরও স্থায়ীভাবে এ সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা বলে দাবি নগরবাসীর। তারা জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসন একদিকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে যান। অন্যদিকে কিছুক্ষণ পরই ফুটপাতে বসে পড়েন হকার এবং সড়কে হয় অবৈধ পার্কিং। জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। অভিযান চলাকালে দেখা যায়, ফুটপাদের অবৈধ হকারদের উঠিয়ে দিয়ে তাদের মালপত্র এমনকি কাঠের যেই চৌকির উপরে তারা বেচাকেনা করেন সেগুলোও তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হকারদের পাশাপাশি সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল ডাম্পিং এবং প্রাইভেট কারের মালিকদের জারিমানাও করছেন তারা। কিন্তু অভিযান শেষে আবারো আগের অবস্থা। নগরবাসীর সাথে কথা হলে তারা এ বিষয়ে জানান, বিবি রোডসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাতগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা উঠছে। তাই সরকারি উচ্ছেদ তোয়াক্কা না করে চাঁদাবাজদের শেল্টারে আবারো ফুটপাত দখল করছে হকাররা। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিশ্রম বৃথা গেলেও লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেনীর চাঁদাবাজ চক্র। যারা পর্দার আড়াল থেকে নগরবাসীকে কষ্ট দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। স¤প্রতি বিকেলে শহরে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, আমাদের ডিসি স্যার এবার খুব সিরিয়াস এই বিষয়টি নিয়ে। আমরা তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে এই শহরকে যানজট মুক্ত করার জন্য। এর আগে নারায়ণগঞ্জে নতুন জেলাপ্রশাসক যোগ দেয়ার পর তিনি গণমাধ্যকর্মীদের বলেছেন, আমাকে যতো চাপই দেয়া হোক, কিন্তু শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করবো। এছাড়াও আড়াইহাজারে পৌরবাজারের পুরো এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে।’ গত রোববার দুপুরে ক্ষোভের সুরে কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমান উল্লাহ। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর মতো হাজারো মানুষকে প্রতিদিন এই সড়কের পাশের ফুটপাত দিয়ে চলার সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমান উল্লাহ বলছিলেন, হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাতেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে হাঁটার জায়গাও থাকে না। বছরের পর বছর এই ভোগান্তি চলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্থায়ী কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। পৌরবাজারের সামনের ফুটপাতটি পথচারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, না-কি হকারদের জন্য– তা বোঝাই মুশকিল। ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী হকারদের সাজানো দোকানে পথচারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। যদিও পৌর প্রশাসক বলছেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। আড়াইহাজার পৌরসভার সূত্র জানায়, রমজান সামনে রেখে যানজট নিরসনে ফুটপাত ও সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদে গত বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাত হোসেনের নেতৃত্বে এদিন অর্ধশতাধিক হকারকে উচ্ছেদ করা হয়। তাদের একদিনের মধ্যে সরে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয় প্রশাসন। এর আগে ফুটপাতে হকার বসতে নিষেধ করে মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনা না মানায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষ করে যাওয়ার পরপরই ফুটপাত ও সড়ক আবারও চলে যায় হকারদের দখলে। গত রোববার দুপুরে দেখা গেছে, নতুন করে আড়াইহাজার উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে ডাকবাংলো পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অর্ধশতাধিক দোকান বসেছে। এতে পথচারীদের চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়ে। একটি বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল রাব্বি বলেন, ‘দেখছেন, কীভাবে যেতে হচ্ছে। ফুটপাতে আমাদের চলাচল করা খুবই কঠিন। হকার-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতাদের যে ভিড়, এর মধ্যে হাঁটা সত্যিই কঠিন। একজন পথচারী হিসেবে চাই, অবশ্যই ফুটপাত দখলমুক্ত করা হোক।’ রাবেয়া আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় অনেক মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আবার কেউ কেউ ইচ্ছা করেই ধাক্কা দেয়। এতে খুবই বিব্রত হই। বিশেষ করে ফুটপাত ব্যবহারে নারীদের বিড়ম্বনা খুব বেশি।’ ফুটপাতে অবস্থান নেওয়া একাধিক হকার ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। পৌরবাজারের সামনে ফল বিক্রি করে সংসার চালান আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ফুটপাত থেকে তুলে দিয়েছিল। আবার পেটের দায়েই ফুটপাতে এসে বসেছেন। একই কথা আরেক ফল ব্যবসায়ী জোবায়ের হোসেন ও মুসা মিয়ার। তাদের ভাষ্য, সরকার কোথাও ব্যবসা করার আলাদা ব্যবস্থা করে দিলে তারা ফুটপাতে বসতেন না। ফুটপাতে বসলে মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হয়, তা তারাও বুঝেন। কিন্তু তারা যাবেন কোথায়? ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান চলছে বলে জানান ইউএনও সাজ্জাত হোসেন। তিনি বলেন, আড়াইহাজার পৌরবাজারের ফুটপাত ও রাস্তা দখল হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। এতে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা দেখা দেয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুটপাত দখলদার হকার ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হয়েছে। কেউ নতুন করে দখল করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা