আজ বৃহস্পতিবার | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | ২৭ শাবান ১৪৪৬ | রাত ২:৫১
শিরোনাম:
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে    ♦     পরিবারসহ শামীম ওসমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা    ♦     নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলে বিরোধী নেই    ♦     নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের উদ্যোগে শহীদ দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন    ♦     চুরি-ছিনতাই দমনে নাগরিক প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলুন    ♦     শেখ হাসিনার নির্দেশে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটেছে: মামুন মাহমুদ    ♦     বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল বিএনপির দীর্ঘ সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ    ♦     শেখ হাসিনার দোসররা এখনো সক্রিয়    ♦     জেলা বিএনপির সমাবেশে বজলুর রহমানের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ    ♦     সেনা প্রধানের সর্তকবার্তা    ♦    

রূপগঞ্জে লাখো মানুষের ভোগান্তি পঁচা পানি!

ডান্ডিবার্তা | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
জেলেপাড়ার মোহন ক্ষোভের সুরেই বলেন, দাদা আমাগো গরীবগো লাইগ্যা সরকার নাই। বালু গাঙ্গের (নদ) পচা পানি আমাগো সব শেষ কইরা দিছে। গাঙ্গতন মাছ ধইরা বেইচ্যা আগে সংসার চালাইতাম। যেই পচা আইলো, আমাগো কপালও খাইলো। সরকার হেইডা দেহেনা। এই পানিই আমাগো জীবন-মরণ। এ ক্ষোভ শুধু মোহনের নয়। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের তীরবর্তী ৫০ গ্রামের প্রায় লাখো মানুষের। ৫০ গ্রামের দুঃখ বালু নদের পচা পানি। রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ ও রূপগঞ্জের কোলঘেষে প্রবাহমান প্রাণভোমরা বালু নদ এখন দূষণ-দখলে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নদে এখন মাছ নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রব্য। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বেড়েছে রোগ-বালাই। পচা পানির গন্ধে তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। বিপন্ন হয়ে গেছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। দূষণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নদ দখলের প্রতিযোগীতাও চলছে।
যেভাবে দূষণ ঃ শীতলক্ষ্যার মোহনা ডেমরা থেকে বালু নদের শুরু। ডেমরা এলাকা থেকে বালু নদ টঙ্গীতে গিয়ে তুরাগ নদের সঙ্গে মিশেছে। বালু নদ থেকে আবার দুটি ছোট নদ নড়াই ও দেবধোলাই ঢুকেছে ঢাকার রামপুরায়। এ ছোট নদ দুটি দিয়ে ঢাকার মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, তেজগাও, সবুজবাগ, মতিঝিলসহ বিশাল এলাকার শিল্প ও পয়োনালার বর্জ্য এসে রামপুরা ব্রীজের নিচ দিয়ে পড়ছে বালু নদে। বছরের পর বছর আবর্জনা পড়তে পড়তে এ পানি এখন আলকাতরার মতো কালো হয়ে গেছে। ঢাকা ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, বালু নদের মোট দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে দৈনিক ১০ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য, ৫৬ কোটি ঘনমিটার বর্জ্য মেশানো পানি, বিভিন্ন কল-কারখানার ৪৫০ ঘনফুট বর্জ্য প্রতিদিন এ নদে পড়ছে। এছাড়া বালু, নড়াই ও দেবধোলাইয়ের ওপর রয়েছে সহ¯্রাধিক ঝুলন্ত পায়খানা। এসব থেকে আরো ৫০০ ঘনফুট পয়োবর্জ্য নদের পানিতে মিশছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু নদের তীরবর্তী বালুরপাড়, নগরপাড়া, দড়িকান্দি, বাবুরজায়গা, ফকিরখালী, মুড়াপাড়া গ¹ানগর, দেবৈ, নাগদারপাড়, গৌড়নগর, ত্রিমহনীসহ বিভিন্ন গ্রামগুলোর মানুষের সঙ্গে কথা বলে পচা পানির কারণে তাদের নানা সমস্যার চিত্র ফুটে ওঠে। গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আজও নাগরিক সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি। নারকীয় পরিবেশের সঙ্গে বোধকরি এর তুলনা করা চলে। সুস্থভাবে বেচে থাকার অধিকারটুকুও যেন তাদের নেই। ভাগ্যদেবী অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের ভালভাবে বেচে থাকার সুযোগটুকুও কেড়ে নিয়েছে। কৃষক গরু-ছাগল গোসল করাচ্ছে। রূপগঞ্জের মাঝখান দিয়ে শীতলক্ষ্যা প্রবাহিত হলেও বালু নদের একপাড়ে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ। অন্যপাড়ে ঢাকার খিলগাওয়ের নাসিরাবাদ, ডেমরা, বেড়াইদ ও ডুমনী ইউনিয়ন। নদের উভয় তীরজুড়ে ফসলের ক্ষেত। একসময় এসব জমিতে অধিক ফলন ফলতো। পচা পানির কারণে এখন ফসলের উৎপাদন কমে গেছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। কথা হয় বর্গাচাষী রতন মিয়া ও শাহজালাল মিয়ার সঙ্গে। তারা বলেন, আগে জমিনো বিঘায় ধান পাইতাম ৪০ মণ। অহন অয় ১৮ মণ ২০ মণ। পচা পানি ক্ষেতে দেওনে আলীর (চারার) গোড়া মোডা অইয়া যায়। মশা আর মাছির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের লাখো মানুষ। দিনের বেলায়ও মশা থেকে নিস্তার নেই। রক্ষা নেই মশারী খাটিয়েও। সবিতা রাণী দাস বলেন, দাদা আর কইয়েন না। কিয়ো-যে আমরা আছি, হেইডা ভগবান ছাড়া কেউ জানে না। দিনোতো মশা লাগঅই। রাইত অইলে আর শান্তি নাই। মুশরি টানাই, কয়েল ধরাই, ধূয়া দেই। হের পরেও মশা কমেনা। আবার লগে মাছিতো আছই। বালুরপাড় এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, অন্তত মশা থেকে সবাই বাচতে পারতাম, তাহলেও শান্তি পেতো মানুষ। সরকার হাজারে-হাজারে মানুষের দুঃখ কি দেখবে না? নদের তীরঘেষে রযেছে কয়েকটি জেলে পল্লী। পাঁচশতাধিক জেলে পরিবার এখন নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বছরের ৬ মাস তাদের কাটতে হয় অর্ধহারে-অনাহারে। আর এর অন্যতম কারণ নদের পচা পানি। পচা পানি তাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। একসময় নদে মাছ ধরে জেলে পরিবাগুলো জীবিকা নির্বাহ করতো। পচা পানির কারণে নদে এখন মাছ নেই। নুরা মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পচা পানি আমগো শেষ কইরা দিছে বাজান। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বালু নদের পানি এখন বিষে পরিণত হয়েছে। এ পানিতে কার্বনডাইঅক্সাইড ও মনোঅক্স্রাইডের পরিমাণ অনেক বেশি। কোন জীব প্রাণীই বাচতে পারবেনা। বালু নদের দু’তীরে ঘুরে দেখা যায়, শিল্পকারখানার মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর দু’পাড় অবৈধভাবে দখল নিয়ে বালু ভরাট করেছে। আবার কেউ কেউ শিল্পকারখানা , স্থাপনা, বাড়িঘর, দোকানপাট এমনকি পাকা টয়লেটও নির্মাণ করেছে। নদীতে সরকারিভাবে সীমানা নির্ধারণ দেওয়া থাকলেও একে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই প্রভাবশালীরা দানবের মতো দখলে নিচ্ছে। বালু নদের দক্ষিণপাড়া এলাকায় বিশাল অংশজুড়ে ইষ্টার্ণ পেপার মিল দখলে নিয়েছে। বক্তব্য নিতে ইষ্টার্ণ পেপার মিলের দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। এ নদের দূষণ বন্ধ করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। নদের পচা পানি রোধ, পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে এবং লাখো মানুষকে বাচাতে দি হ্যাঙ্গার প্রজেক্টসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, পরিবেশবিদ ও ব্যক্তিরা এগিয়ে এসেছিলেন। পঁঁচা পানি নিয়ে মহাসমাবেশও হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাড. গোলজার হোসেন বলেন, পচা পানি আমাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা-বালু বাচাও আন্দোলনের নেতা ও কলামিষ্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, পচা পানি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সভা, মানববন্ধন ও আন্দোলন করেছি। পচা পানি রোধ না হওয়া পর্যন্ত এসব চলবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বালু নদের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। তবে পচা পানি দূর করতে হলে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের প্রয়োজন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা