আজ শনিবার | ১ মার্চ ২০২৫ | ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ | ২৯ শাবান ১৪৪৬ | সকাল ১১:২৭

সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন সেলিম ওসমান

ডান্ডিবার্তা | ০১ মার্চ, ২০২৫ | ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বাংলাদেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান। ইতোমধ্যে তার মালিকানাধীন তিনটি বাড়ি বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনটি বাড়িই কিনেছেন ফকির অ্যাপারেলস’র মালিক ফকির মনিরুজ্জামান। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উইজডম অ্যাটায়ার্সও তিনি ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অনুসন্ধান বলছে, এ কাজগুলো তিনি করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন এবং গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতনের পর। যদিও সেলিম ওসমানের বিপুল সম্পদের মধ্যে আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি, ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব সম্পদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, সরকার পতনের পর সাবেক এ সংসদ সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী সেলিম ওসমান ২০১৪ সালে তার বড়ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর সদর-বন্দর আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ সদস্য প্রার্থী হন এবং জিতে যান। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সাবেক এ সংসদ সদস্য নিট ব্যবসায়িদের সংগঠন বিকেএমইএ’রও টানা ১৪ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রভাবশালী এই ব্যক্তি বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হতেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় চিঠি পাঠিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। যদিও তিনি এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হননি। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও একাধিক সূত্র বলছে, তার ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হলেও সেলিম ওসমান দেশেই আত্মগোপনে আছেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকায় অবস্থিত সেলিম ওসমানের নয় শতাংশের উপর নির্মিত তিনতলা বাড়ি ৫ আগস্টের দিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হামলা চালায় বিক্ষুব্দ ছাত্র-জনতা। তিনতলা বাড়িটির অবস্থা এখন করুণ। নীল রঙের কাঁচে ঘেরা এ বাড়িটিতে জনরোষের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। স¤প্রতি সরেজমিনে বাড়িটির সামনে গিয়ে প্রধান ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। ভেতরে একজন দারোয়ান থাকেন বলে পাশের এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা জানান। কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর বেরিয়ে এলেন এক ব্যক্তি। নিজের নাম আতাউর রহমান জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, তার বাড়ি দিনাজপুরে। দশদিন হয়েছে তিনি বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। বারান্দায় একটি চৌকিতে মশাড়ি টানানো দেখা যায়। সেখানেই থাকেন আতাউর। আতাউর জানান, তিনি বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছেন ফকির গ্রæপের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে। যদিও তিনতলা বাড়ির সামনে কোনো নামফলক দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা কয়েকজন ব্যক্তি জানান, সরকার পতনের পর এ বাড়িটি দেশের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফকির অ্যাপারেলসের মালিক ফকির মনিরুজ্জমানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন সেলিম ওসমান। একই এলাকায় আরও দু’টি আলিশান পাঁচতলা বাড়িও একই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছেন সাবেক এ সংসদ সদস্য। দু’টি বাড়ির সামনে ‘ক্রয়সূত্রে এই বাড়ির মালিক ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড’ লেখা সাইনবোর্ড সাঁটানো পাওয়া যায়। সরকার পতনের পর এ দু’টি বাড়িতে কোনো ভাঙচুর বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। একটি বাড়ির তত্ত¡াবধায়ক (কেয়ারটেকার) অনিমেষ মন্ডল বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলে সেলিম ওসমানের তিনতলা বাড়িটি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার পর ক্ষুব্দ জনতা এ বাড়ির দিকেও এসেছিল। তখন এ বাড়ি দু’টি আগেই বিক্রি হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের নিভৃত করা হয়। এ বাড়িটি ছিল সেলিম ওসমানের, তবে এখন এটি ফকির অ্যাপারেলস’র মালিক ফকির মনিরুজ্জামানের মালিকানায় রয়েছে বলে জানান অনিমেষ। যদিও সেলিম ওসমানের বাড়ি দু’টি বিক্রির খবর আগে জানতেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় একাধিক নারী ও পুরুষ বলেন, সরকার পতনের পরে বাড়িগুলোর সামনে ‘ক্রয়সূত্রে এই বাড়ির মালিক ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড’ সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। এর আগে তারা জানতেন না, সেলিম ওসমান বাড়িগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। শহরে থেকে দূরে ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকায় সেলিম ওসমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘উইজডম অ্যাটায়ার্স’। সুবিশাল জায়গাজুড়ে এ পোশাক কারখানাটি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে উৎপাদন কার্যক্রমও চলছে। এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিও ৫ আগস্টের পর বিএনপি পন্থী এক ব্যবসায়ী নেতার কাছে ভাড়া হিসেবে দিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সেলিম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে আরও অনেক সম্পদ থাকার তথ্য উল্লেখ করেন। সেলিম ওসমানের স্ত্রীর নাম নাসরিন ওসমান। এই দম্পতির কোন ছেলে নেই, তাদের তিন কন্যা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে তার মধ্যে তিনটি চলমান বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তার বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তার উপর নির্ভরশীল স্ত্রী ও কন্যার আয় ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সেলিম ওসমানের নগদ ও ব্যাংকে জমা টাকাসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৮০২ টাকা। স্ত্রী ও কন্যার নামে একই খাতে সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৮০৭ টাকা। তার স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১০৮ শতাংশ জমি এবং ৯ শতাংশ জমির উপর ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ৩ তলা বাড়ি। এছাড়া ঢাকার ইনার সার্কুলার রোডে ১৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজে ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ। তার স্ত্রী ও কন্যার নামে জমি রয়েছে ২ হাজার ৬১৩ শতাংশ। এর মধ্যে খুলনার ফুলতলা উপজেলাতেই রয়েছে ২ হাজার ৪৩৪ শতাংশ কৃষি জমি। তাদের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে স্ত্রীর নামে ধানমÐিতে ৩৯ লাখ টাকা মূল্যের ৪২৮৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং থ্রি স্টার ফার্ম হাউজে এবং উইজডম ট্রেডাসে প্রায় ১১ কোটি টাকার বিনিয়োগ। ধানমÐিতে তিন মেয়ের নামে রয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার তিনটি ফ্ল্যাট। সেলিম ওসমানের নিজের ও স্ত্রী-কন্যার নামে দেনা ও ঋণ ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা। এদিকে, বিগত সরকার পতনের পর গত বছরের ২১ আগস্ট সেলিম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে সেলিম ওসমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দের কথা জানানো হয়। সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমান এবং তাঁদের সন্তান অনন্যা শারমিন, ফারহানা শারমিন ও রুমানা শারমিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তাঁদের হিসাবের তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিএফআইইউ।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা