না’গঞ্জে শক্ত অবস্থানে জামায়াত

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দলটি জনগণের বিরোধী হিসেবে পরিচিতি করানো হয়। সেই দলের কৌশলে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, নতুন স্বাধীনতা ফিরে এনেছে জামায়াত। গত ছয় মাস যাবৎ দেশের মানুষের কাছে জামায়াতে ইসলামী এক সু-শৃঙ্খল দল হিসেবে রূপ নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৭ ফেব্রæয়ারি জামায়াতে ইসলামী বিশাল জনসভার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল হিসেবে পোক্ত অবস্থানে ফিরছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামী সকল স্তরের নেতারা জনসম্মুখে ফিরেছেন। প্রায় ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় জামায়াতে ইসলামী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগেও জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধও করে ফ্যাসিস্ট তকমা পাওয়া শেখ হাসিনার সরকার। তবে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সুদিন ফিরে আসে। প্রায় দেড় যুগ পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরে দলটি। এতে নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামী সকল ইউনিটের নেতা-কর্মীরা জনসম্মুখে এসেছেন। প্রতিনিয়ত করেছেন কর্মী সমাবেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি। আওয়ামী লীগের পতনের পর নারায়ণগঞ্জ শহর সহ উপজেলায় দলীয় কার্যালয়গুলো চালু করেছে জামায়াত। নতুনভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতৃত্বে আগেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে চষে বেড়িয়েছেন। সংগঠনটি শক্তিশালী রূপ নিতে জেলায় মহানগরে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। মাত্র কয়েক মাস আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটি এখন রাজনীতি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অন্তর্র্বতী সরকার আমলে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে। নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলের প্রক্রিয়াও চলমান। প্রায় এক যুগ ধরে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক যে স্থবিরতা এসেছিল তা দ্রæত কাটিয়ে উঠতে চায় জামায়াত। এজন্য দলটি নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়োর পক্ষে নয়। বিগত বছরগুলোতে নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশেপাশে এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবির নেতা-কর্মীদের সাহসী ভূমিকা দেখা গেছে। পুলিশের সাথে একাধিক সংঘর্ষে অনেক নেতা-কর্মীরা জীবনবাজী পর্যন্ত হয়েছিলো। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাপাত্তা। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জে নানা অপকর্মে জড়িয়ে অনেকটা বিতর্কের মুখে পড়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এমন সুযোগে নিজেদের কর্মকাÐে জনসমর্থন বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে জামায়াত। দলটি মনে করছে, জনসাধারণের কাছে নিজেদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের এখনই সময়। এজন্য ইতোমধ্যে কিছু ইতিবাচক কর্মকাÐের মাধ্যমে বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছে জামায়াত। দেশের সংখ্যালঘুরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখছে দলটি। হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর পাহারা দেওয়া থেকে শুরু করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে জামায়াত। হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির নেতারা। তাদের আশ্বস্ত করেছেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলেও সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের কোনো সমস্যা হবে না। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের সাথে নারায়ণগঞ্জে এসে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ওই সময় তিনি হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা সহ বিভিণ্ণ আশ্বাস দেন। শেখ হাসিনার পালানোর পর দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনে ৫ আগস্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যোগাযোগ রেখেন জামায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ৭ ফেব্রæয়ারি নারায়ণগঞ্জে প্রথম জনসভা করে জামায়াতে ইসলামী দলের শৃঙ্খলা প্রকাশে পেয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে। ২৯ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। মুহাম্মদ আবদুল জব্বার আমির নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াতের রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটে মুহাম্মদ আবদুল জব্বার আমির নির্বাচিত হন। মহানগর আমির আবদুল জব্বার মজলিসে শুরার সাথে পরামর্শ করে মাওলানা আব্দুল কাইয়ুমকে নায়েবে আমির, ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইনকে সেক্রেটারি এবং মাওলানা জামাল হোসাইন ও এইচ এম নাসির উদ্দিন কে সহকারী সেক্রেটারি মনোনীত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ। আর ২০২৫-২০২৬ সেশনের জন্য নির্বাচিত নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর মজলিসে শুরার সকল সদস্য উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।