আজ বৃহস্পতিবার | ৬ মার্চ ২০২৫ | ২১ ফাল্গুন ১৪৩১ | ৫ রমজান ১৪৪৬ | দুপুর ১:৫৯
শিরোনাম:
স্বেচ্ছাসেবক দলে বির্তকিতরা সক্রিয়    ♦     সেই পুরনো চেহায় শহরের যানজট পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা আড্ডায় ব্যস্ত    ♦     আওয়ামী অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী দেলু বিএনপি নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে    ♦     সি‌দ্ধিরগ‌ঞ্জে কৃষকদ‌ল নেতার ছত্র-ছায়ায় নু‌র হোসেনের ক‌্যাডার‌ ইউসুফ সক্রিয়    ♦     ইয়াবাসহ স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আটক    ♦     সিদ্ধিরগঞ্জে ছাত্র হত্যা মামলায় পিতা-ছেলে পলাতক    ♦     সাবেক মন্ত্রী দস্তগীর গাজী ও তার স্ত্রীর নামে দুদকের ২ মামলা    ♦     যানজট নিরসনে বিকেএমইএ ও চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশকে ২৫ লাখ টাকা অনুদান    ♦     সিদ্ধিরগঞ্জে চুরি ছিনতাই প্রতিরোধের দাবিতে মানববন্ধন    ♦     ফতুল্লায় চাদাঁর দাবীতে মসজিদের নির্মান কাজে বাধা    ♦    

এক যুগেও ত্বকী হত্যার বিচার মিলেনি

ডান্ডিবার্তা | ০৬ মার্চ, ২০২৫ | ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গণঅভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পর এক মাসের ব্যবধানে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় ছয়জনের গ্রেপ্তার ন্যায়বিচারের জন্য আশা জাগিয়েছিল নিহতের পরিবারে। তবে, অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর সাত মাসেও এই হত্যা মামলাটির তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। ফলে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাÐের ন্যায়বিচার নিয়ে পুনরায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, এমনকি হত্যাকাÐের এক যুগ পরেও ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২ বছর পূর্তিতে আগামী ৬ ও ৭ মার্চ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এর আগে, ২৮ ফেব্রæয়ারি বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি পাঠাগারের সামনে থেকে অপহরণ হন ১৭ বছর বয়সী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ২৯৭ পেয়েছিলেন। তবে, অসাধারণ এই ফলাফল জানতে পারেনি ত্বকী। ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে অনন্য মেধাবী এই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বর্ষপূর্তির একদিন আগে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব জানিয়েছিল, এই হত্যা মামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। যেকোনো দিন আদালতে জমা পড়বে অভিযোগপত্র। কিন্তু গত ১১ বছরেও সেই অভিযোগপত্র আর জমা পড়েনি। ত্বকী হত্যায় প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের বাঁচাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’ এই তদন্ত আটকে ছিল বলে বরাবরই অভিযোগ করেছেন ত্বকীর পরিবার। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনার পর অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি একধরনের গতি পায়। গত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকাÐের সাথে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, তারা সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। আজমেরী ওসমান প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা। তাদের মধ্যে আজমেরীর সহযোগী কাজল হাওলাদার একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া, আজমেরীর গাড়িচালক মো. জামশেদ, আত্মীয় আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে জামাই মামুন, সহযোগী শাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া ও ইয়ার মোহাম্মদ রিমাÐে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে আছেন। গত সেপ্টেম্বরের মামলাটির অগ্রগতি নিয়ে আলাপকালে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেছিলেন, ‘প্রচ্ছন্ন চাপে’ অনেক বছর আটকে থাকলেও তারা এখন মামলাটির তদন্ত দ্রæত শেষ করতে চান। তিন মাসের মধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও, তা সম্ভব হয়নি। গত ২ মার্চ এই হত্যা মামলাটির নথিপত্র ৮১ বারের মতো আদালতে উঠেছে, কিন্তু অভিযোগপত্র জমা পড়েনি। ইতোমধ্যে তদন্তকারী সংস্থাটির অধিনায়ক এবং মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দু’জনই বদলি হয়েছেন। বর্তমান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মামলার বাদী ত্বকীর বাবার সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, তিনিও আমাদের সহযোগিতা করছেন। ৫ আগস্টের পর এ মামলায় আমরা ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে অতিসত্বর তদন্ত শেষ করার। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিবো।” তবে, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে এখনও আশাবাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, “একবছরের মাথায় র‌্যাবের তদন্তে সব বেরিয়ে এসেছিল। ওসমান পরিবারের টর্চার সেলে ত্বকীকে কীভাবে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলা হলো সবই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল র‌্যাব। কিন্তু যখনই শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেন, তখনই এই মামলার সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।” “অন্তর্বতী সরকার গঠনের পর এই মামলায় ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, একজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। মামলাটা এগোচ্ছে, আশা করি দ্রæতই শেষ হবে। তবে, দায়সারা নয়, দোষি সকলকে অর্ন্তভুক্ত করে নির্ভুল অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে সময় নিক। এতদিন যেহেতু অপেক্ষা করা গেছে, আরও কিছুদিন যাবে।” ২০১৩ সালের ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে ওই বছরের ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে সম্পূরক অভিযোগ জমা দেন। পরে রফিউর রাব্বির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। ত্বকী হত্যার কয়েকমাসের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েবউদ্দিন জ্যাকি, রিফাত বিন ওসমান ও সালেহ রহমান সীমান্ত। সবাই পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর লিটন এবং ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা থেকে হত্যা পর্যন্ত সব ঘটনার বিবরণও দিয়েছিলেন। ত্বকী হত্যার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর কয়েক দিন আগে র‌্যাব জানিয়েছিল, তারা হত্যার রহস্য ভেদ করেছে এবং এমনকি একটি খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনও তৈরি করেছে। ২০১৪ সালের মার্চে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা র‌্যাবের খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে ফাঁস হয়। ত্বকী হত্যার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন আগে, র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তাদের কাছে ১১ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে এবং এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র যেকোন দিন আদালতে জমা দেওয়া হবে। এরপর ওই বছরের জুনে সংসদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ওসমান পরিবারের পাশে’ থাকার ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য রাখলে ত্বকী হত্যা মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। র‌্যাবের ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ত্বকী হত্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সরাসরি হত্যাকাÐেও অংশ নিয়েছিলেন আজমেরী। তার নির্দেশে, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ তার সহযোগীরা ত্বকীকে অনুসরণ করে এবং তাকে অপহরণ করে শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে উইনার ফ্যাশনে তার ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে যায়। পরে ওই রাতে, আজমেরী এবং তার সহযোগীরা ১৭ বছর বয়সী ত্বকীকে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বস্তায় ভরে আজমেরীর গাড়িতে করে চারারগোপ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাত একটা থেকে দেড়টার মধ্যে ঘাতকরা নৌকায় করে লাশ নিয়ে কুমুদিনী জোড়া খাল এলাকার শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। পরদিন ৮ মার্চ নদী থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রফিউর রাব্বি তার সমর্থকদের নিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালায়। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারেন শামীম ওসমান। ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট আজমেরীর ‘উইনার ফ্যাশন’ অফিসে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা জিন্স, পিস্তলের বাট এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করে র‌্যাব। র‌্যাব কর্মকর্তারা দেয়াল, সোফা ও আলমারিতে বেশকিছু গুলির চিহ্নও দেখতে পান। ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ত্বকী হত্যায় ১১ জন অভিযুক্তের প্রত্যেকের ভূমিকার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা