
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজেকে প্রাণবন্ত করে সাবলীলভাবে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সামনে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কিছু কথা বলতেন। তিনি প্রায়ই কবিতার ছন্দে বলতেন-‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’ পরিবারের সদস্যদের পাশে রেখে প্রায়ই বলতেন-‘সন্তানদের জন্য আমি কোনো সম্পদ করিনি, তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি।’ দলের এবং দলের বাইরের মানুষদেরও তিনি সবক দিতেন দুর্নীতি না করার। শেখ হাসিনার সেই কথার সুরে আওয়ামীলীগ নেতারা কথা বললেও করতেন তার উল্টোটা। সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন এক রকম শূন্যহাতেই ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সামনে আসতে থাকে হতবাক করার মতো তথ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দোসরদের বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি ও লুটপাটের তথ্য সামনে আসতে থাকে। একে একে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের সব পর্যায়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির সম্পদও প্রকাশ্যে আসে। অনেকে গ্রেফতার হন। আত্মগোপনে ও দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন অনেকে। তবে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের এবং আশপাশের অতি ঘনিষ্ঠজনদের সম্পদ সবে চাউর হতে শুরু করেছে। প্রথমবারের মতো সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনা পরিবারের অবিশ্বাস্য সম্পদের ফিরিস্তি শুনে সবাই বিস্মিত হন। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই তার বক্তৃতায় নীতিকথার নানা বাণী শোনাতেন। যার সঙ্গে এখন বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকারান্তরে শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যের আড়ালে ছিল প্রচÐ ধূর্তামি ও প্রতারণা। মানুষকে বোকা বানানোতে তিনি পটু ছিলেন। ফলে খুব বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে রসিয়ে রসিয়ে তিনি এসব কথা বলতেন। অনেক সময় কথার সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষা যুক্ত করে প্রলুব্ধ করতেন সাধারণ মানুষকে। এসব কথার মারপ্যাঁচ এবং উন্নয়ন ফিরিস্তির আড়ালে তিনি ছিলেন মূলত আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট। শেখ হাসিনা প্রায় বলতেন-দেশে ও দেশের বাইরে তার কোনো সম্পদ নেই। শেষ জীবনেও তিনি ঢাকা ছেড়ে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে থাকতে চান। তবে এসব মিষ্টি কথায় সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারলেও বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ঠিকই তার এসব ভÐামি বুঝতে পেরেছিল। শিক্ষিত-সচেতন মানুষও তার ভÐামি বুঝতে পারতেন। ফলে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর একে একে শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও আশপাশের মানুষের নামে যখন দেশ-বিদেশে থাকা বিশাল সম্পদের তথ্য সামনে আসছে, তখন তারা অন্তত অবাক হচ্ছেন না। তবে এতটা সম্পদ করে ফেলছেন তা ছিল অনেকের কাছে কল্পনাতীত। মূলত বাস্তবতা হলো-তিনি ও তার পরিবার ক্ষমতায় গিয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে দেশে ও বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। অথচ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সব সময় তিনি সততার বুলি আওড়াতেন। জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা ক্ষমতার জবাবদিহিহীন অপব্যবহার, দুর্নীতি ও প্রতারণানির্ভর চোরতন্ত্রের দৃষ্টান্ত। এই বিষয়গুলো আমরা তখনই জেনেছি বা জানা গেছে। কিন্তু এভাবে হয়তো সামনে আসেনি। প্রচার হয়নি। ক্ষমতার একচ্ছত্র অপব্যবহার করে গড়ে তোলা বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য গোপন রাখতে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এমনকি তার (শেখ হাসিনার) এসব অপকর্ম জাস্টিফাই করার জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের যুক্তিও তুলে ধরতেন। যার সবই ছিল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। একই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের পর থেকে আমি আর আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দলই মনে করি না। তারা একটা গ্যাং অব ক্রিমিনালসে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা সেই ক্রিমিনালদের নেতা ছিলেন। ফলে তিনি যখন এসব কথা বলেছেন, এগুলো আমরা বিশ্বাস করতাম না। এগুলো শুনতাম আর হাসতাম। কারণ যে সরকারের ছোটখাটো লোকজন অকল্পনীয় পরিমাণ সম্পদ গড়েছে, যার পিয়ন চারশ কোটির মালিক, ফলে সেই মানুষটার পরিবারে কী থাকতে পারে সেটা আমরা ঠিকই বুঝতাম। এখন সেগুলোর প্রমাণ বা ডকুমেন্টগুলো পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, তবে আমি মনে করি-এখনো তেমন কিছুই (শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সম্পদ) খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্ত করলে ধীরে ধীরে আরও অনেক কিছু পাওয়া যাবে। তবে বেনামে থাকার কারণেও সব কিছু পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা ভারত সফর শেষে গণভবনে ২৫ জুন (২০২৪) সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটাই ছিল তার শেষ সংবাদ সম্মেলন। ওইদিনও বিভিন্ন বিষয়ে তিনি যথারীতি বক্তৃতাবাজি করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার মেয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে, অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো সাময়িক ব্যাপার। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেচি না। দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। তার জন্য আগে একবার ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। কিন্তু আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি এর-ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না।’ এদিন শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা-পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। তা সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেলল যে, শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। বোধহয় নেশার মতো পেয়ে যায়।’ এছাড়া বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর তিনি ২০৪১ বা ২১০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে কী কী করবে- সেসব পরিকল্পনার বয়ান দিতেন। এ সময় নিজের অভিলাষ তুলে ধরে শেখ হাসিনা জনগণের কাছ থেকে বাহাবা নিতে চাইতেন। টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাকালীন বারবার নিজেকে দেশের সবচেয়ে ‘জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা’ দাবি করতেন। গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে ২২ জুলাই নিজ কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা বলেছিলেন, ‘আন্দোলনের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনা পালায়নি, পালায় না।’ এর আগে চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকেই বলেছে প্রধানমন্ত্রী পালিয়েছে, শেখ হাসিনা পালায় না।’ ১ আগস্টও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যেও শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। এদিকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও আশপাশের মানুষের নামে এখন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে দেশ-বিদেশে বিশাল অঙ্কের সম্পদের তথ্য সামনে আসছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্যমতে, সংস্থাটি শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জব্দ করা ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা পেয়েছে। এছাড়া ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দলিলমূল্যে রাজউকের ৬০ কাঠা প্লট এবং ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ আটটি ফ্ল্যাট অবরুদ্ধ করা হয়েছে। অপরদিকে শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্নাশ ফান্ড’-এর অস্তিত্বও মিলেছে। হাসিনা পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া ৬টি মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে এবং পরিবারের ৭ সদস্যকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের সন্তানদের নামে এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মিলে মোট প্রায় ৫৮৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে তাদের নামে মোট ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৫৭৮ কোটি টাকা অবরুদ্ধ এবং সুধা সদনসহ ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বাড়ি ও জমি ক্রোক করা হয়েছে। গাজীপুরে একের পর এক রিসোর্ট ও বাগানবাড়ির সন্ধান মিলছে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা পরিবারের সদস্যদের। বিভিন্ন সময়ে কেনা এসব রিসোর্ট ও বাগানবাড়ি করা হয় অবসর সময় কাটানোর জন্য। সরকার পতনের পর কয়েকটি রিসোর্ট ও বাগানবাড়িতে বিক্ষুব্ধ মানুষের হামলার ঘটনাও ঘটে। যুক্তরাজ্যে রেহানাকন্যা টিউলিপের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠা এবং তার পদত্যাগের পর দেশেও রেহানা পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য মিলেছে। দুদকের তদন্ত কমিটি হয়েছে ডিসেম্বরে। মাত্র চার মাসের তদন্তে এত সম্পদের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আরও তদন্ত করলে এর চেয়ে কয়েকগুণ সম্পদের তথ্য সামনে আসবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯