বীরদর্পে ফিরছে আওয়ামী পন্থি আইনজীবীরা!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার আমলে আওয়ামীলীগের যেসব আইনজীবীরা সন্ত্রাসী স্টাইলে বিএনপি ও জামাতপন্থী আইনজীবীদের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছিল সেইসব আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা এখন কোর্টপাড়ায় বীরদর্পে আইন পেশা পরিচালনা করে আসছেন। তাদের ভিতরে বিন্দু পরিমান অপরাধবোধ নাই। তাদের ভাবখানা এমন তারা যেনো আবারো ক্ষমতায় এসে বিএনপি ও জামাতের আইনজীবীদের পেটাবে। এদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজের তৎকালীন শিক্ষার্থীরাও। সমিতির প্রতিটা নির্বাচনে আইন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসে বিএনপি জামাতের আইনজীবীদের উপর হামলা অংশগ্রহণ করতো আইন কলেজের তথাকথিত ভুয়া ভিপি হাসান ও জিএস আমজাদ। তারাও এখন কোর্টে পুরোদমে আইন পেশায় আছেন। এমন অভিযোগ সাধারণ আইনজীবীদের। আইনজীবীদের সূত্রে, ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারী ও ২০২৩ সালের ৫ জুন পৃথক দুটি ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে বিএনপি ও জামাতপন্থী আইনজীবীদের পিটিয়েছিলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। আইন কলেজের শিক্ষার্থী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এই হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল। সমিতির নির্বাচনে বিএনপি জামাতের প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি ধমকির ঘটনাও ঘটেছিল। কোর্টপাড়া থেকে বর্তমান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচএম আনোয়ার প্রধানকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণ করে দিনভর জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। একাধিকবার বিএনপি ও জামাতপন্থী আইনজীবীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ওমর ফারুক নয়নকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। বিএনপি-জামাতপন্থী আইনজীবীদের অভিযোগ- আইনজীবী সমিতির সাবেক দুই সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও মোহসীন মিয়া অর্ধশত মধ্যমসারির আইনজীবীদের পৃষ্টপোষকতা করতেন শুধুমাত্র বিএনপি-জামাতকে পিটিয়ে দমানোর জন্য। তাদের সহযোগী ছিলেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান ও রবিউল আমিন রনি। প্রতিটি নির্বাচনে আইনজীবীদের উপর হামলা করে মারধর করে জোরপূর্বক নির্লজ্জভাবে নির্বাচনে জয়ী হতেন তারা। তাদের নির্দেশে বিএনপি-জামাতের আইনজীবীদের উপর আওয়ামীপন্থী এসব আইনজীবীরা মারমুখী অবস্থানে ছিলেন সব সময়, বর্তমানে সেইসব আইনজীবীরা ধীরে ধীরে কোর্টপাড়ায় প্রবেশ করছেন। শুধু এসব আইনজীবীরাই নন, বহিরাগত সন্ত্রাসী মাদকাসক্ত ছিচকে চোর ছিনতাইকারীদের কোর্টে এনে তাদেরকে দিয়েও বিএনপি ও জামাতের আইনজীবীদের পিটিয়েছিলেন জুয়েল মোহসীন, মাহাবুব ও রনিরা। আইনজীবীরা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছে আওয়ামীলীগের শীর্ষ আইনজীবী নেতারা। শীর্ষ আইনজীবীদের অধিকাংশরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের হত্যার দায়ে হত্যা মামলার আসামী হয়ে পলাতক আছেন। শীর্ষ আইনজীবীদের নেতৃত্বে যেসব আইনজীবীরা অত্যাচার নির্যাতন করেছিলেন বিগত সময়ে, সেইসব আইনজীবীরাও কোর্টে আসেননি। যদিও বর্তমানে বেশ কিছু আইনজীবী কোর্টে ফিরেছেন যারা বিএনপি ও জামাতের উপর চরম নির্যাতনে ভুমিকা রেখেছিলেন। গেল বছর ২০২৩ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নিচ তলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন বিএনপির আইনজীবীরা। ওইদিন হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও মোহসীন মিয়া দোয়া মাহফিলও করতে দেয়নি। তারা বেয়াদব খ্যাত সুইটি ইয়াসমিনকে উস্কে দিয়ে জুনিয়র মধ্যমসারির বেশকজন আইনজীবীকে দিয়ে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের অপমান অপদস্ত করান। পরবর্তীতে জুয়েল মোহসীন সাউন্ড বক্স ভেঙ্গে ফেলে এবং দোয়া মাহফিলের ব্যানার ছিড়ে ফেলে। ওই দিন মহানগর বিএনপির আহŸায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঙ্গে চরম বেয়াদবী করেছিলেন আওয়ামীপন্থী শামীম হোসাইন, মেজবাহ উদ্দীন, আব্দুল মান্নান, মাহমুদুল হক মমিন, জুয়েল আজাদ, নূর জাহান, কামরুন নাহার ময়না, আসাদুল্লাহ সাগর, আলী আকবর, অঞ্জন দাস, সুমন মন্ডল, মিজানুর রহমান সজীব, আব্দুর রহিম, সুজন প্রধান, জনি গোপ, শরীফ হোসেন, ফয়সাল আহমেদসহ বেশকজন জুনিয়র আইনজীবী। বিএনপির অনেক আইনজীবীদের শারীরিকভাবে সেদিন লাঞ্ছিত করেন। এদের মধ্যে আলী আকবর প্রতিটা হামলায় সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আলী আকবর কোর্টপাড়ায় বীরদর্পে আইন পেশা পরিচালনা করছেন। ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারী আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে রাজাকারপুত্র খালিদ হায়দার খান কাজলের নেতৃত্বে বিএনপি ও জামাতের বেশকজন আইনজীবীকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। ওইদিনও উপরোক্ত আইনজীবীরা কাজলের নেতৃত্বে হামলা চালায়। সেদিন আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনি নোংরা গালিগালাজ করে পেটাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কোর্টপাড়ায় মানববন্ধন করতে গেলে বিএনপির ব্যানার ছিড়ে ফেলে মোহসীন মিয়া। সেদিনও বিএনপির ব্যানার টানাটানি করে ছিড়ে ফেলে মোহসীন মিয়ার জুনিয়র লিটন খন্দকার ও মিজানুর রহমান সবুজ সহ আরো বেশকজন জুনিয়র আইনজীবী। গত ১আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের শাস্তির দাবিতে কোর্টপাড়ায় মিছিল করে বিএনপি ও জামাতের আইনজীবীদের কর্মসূচিতে বাধা প্রদান ও হামলা চালানো হয়। আসাদপুত্র তুষারও বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন। সেদিনও উপরোক্ত আইনজীবীরা বিএনপি ও জামাতের আইনজীবীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাদের এসব অপকর্মের ভিডিও ফুটেজ প্রতিদিন বিএনপি ও জামাতের আইনজীবীরা ফেসবুকে প্রকাশ করে শুধুমাত্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।