
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আনন্দ ভরে ঈদ করেছে দেশের মানুষ। তবে ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের পরিবারগুলোম মধ্যে। এবার ঈদে তাদের বুকে আনন্দ ছিল না ছিল শুধু চাপা কান্না। অনেকে হারিয়েছেন মা. অনেকে বাবা, অনেকে ভাই, অনেকে সন্তান আবার অনেকে তার প্রিয় স্বামী হারিয়ে এবারের ঈদে ছিল তারা বাকরুদ্ধ। জুলাই আন্দোলনের সময় মাত্র আড়াই মাস বয়সে মাকে হারায় ১০ মাসের ফুটফুটে সুয়াইবা। তার জীবনের প্রথম ঈদ চলে গেল। অথচ এই আনন্দের দিনটি মাকে ছাড়াই কাটাতে হয়েছে তাকে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু সুমাইবার মায়ের হয়নি। তাকে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করেছে বিদায়ী স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে অতর্কিত গুলি বর্ষণকারীরা। তবে সুমাইবার বাবাও তার খোঁজখবর নেন না বলে জানিয়েছেন শহীদ সুমাইয়ার পরিবার। এজন্যই মা-বাবাহীন সুমাইবার ঈদ কেটেছে নানি-খালা-মামার কোলে। ২০ বছরের তরুণী গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন সুমাইয়া। স্বামী মো. জাহিদ ও আড়াই মাসের মেয়ে সুয়াইবাকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকার ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। দেশব্যাপী ছাত্র-জনতা যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল তখন নিজ বাড়ি থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন সুমাইয়া। মায়ের বাড়িতে তার অবস্থানকালে ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা। ২০ জুলাই বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকায় মায়ের বাসায় ঘরে শিশু মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনের দৃশ্য দেখছিলেন সুমাইয়া। বারান্দায় দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে আচমকা আকাশে ওড়া হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া একটি গুলি বারান্দার গ্রিল দিয়ে ঢুকে তার মাথায় লাগে। এসময় রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন সুমাইয়া। তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সড়কেই মৃত্যু হয় তার। এদিকে সুমাইয়ার শোকে তার পরিবারে ঈদ উৎসবের ছিটেফোটাও নেই। সুমাইয়ার বড় বোন জান্নাত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বোন না থাকায় এবার আমাদের ঈদের আনন্দও নেই। পুরা রমজান মাসে আমরা কোনো কেনাকাটা করিনি। সুয়াইবার যেখানে তার মায়ের আদর-যতœ পাওয়ার কথা, সেখানে আমার মা আর আমরা তার খেয়াল রাখি। আমরা যেমনই করি মা তো মা-ই। আমার বোন মারা যাওয়ার পর বাচ্চাটা যাকেই দেখতো তাকিয়ে থাকতো। আমাদের ধারণা ও তার মাকে বুঝতে পারতো। আমাদের সবচেয়ে বড় দুঃখ আমরা সবাই ঈদ করছি কিন্তু আমার বোন নেই। মা প্রায় সময় আমার বোনের কবরের সামনে গিয়ে কান্নাকাটি করে। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মিরাজ হোসেনের পরিবারে। তাদের পরিবারে ঈদের আমেজ আসেনি। অসুস্থ মিরাজের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে মানুষের দরজায় দরজায় দৌড়ানো পরিবারটির ঈদের জন্য নেই আলাদা কোনো প্রস্তুতি। নতুন পোশাকও কেনা হয়নি কারো। একমাত্র বোনের উপার্জিত অর্থের সবটাই যাচ্ছে মিরাজের চিকিৎসায় এর ওপর চেপে রয়েছে ঋণের বোঝা। তাই এবারের ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে দেখা হচ্ছে না তাদের। মিরাজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের ঈদ বলতে কিছু নেই। দুঃখে ভরা জীবনে খাবার খাওয়া আর ঔষধের টাকা জোগাতে ঋণের বোঝা মাথায় নেওয়া লেগেছে। তাই ঈদের আনন্দ বা আমেজ নেই। পাওনাদারদের চাপের ওপরে রয়েছি। মিরাজ হোসেন ১৪ বছরের কিশোর। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ২০ জুলাই বিকেলে শিমরাইল-আদমজী চাষাঢ়া সড়কের ভূমিপল্লী সামনে দাঁড়িয়ে জনতার ক্ষোভের দৃশ্য দেখছিল সে। আচমকা একটি গুলি এসে মিরাজের পেটের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। বিষাক্ত বুলেটের আঘাতে বুকের তিনটি হাঁড় ভেঙে যায় তার। অপারেশনের সময় পেটে সেলাই লেগেছে ২৯টি। এখন কোনোরকম চলাফেরা করলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি ছেলেটি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে মিরাজের একমাত্র বোনের উপার্জনে তার চিকিৎসা চলছে। এদিকে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকার যে অনুদান পেয়েছিলো মিরাজের পরিবার, তা এরই মধ্যে চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে বলে জানান স্বজনরা। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারানো ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপের পরিবারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। রিয়া গোপের মা বিউটি ঘোষ মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আপনারা শুধু আমার শিশু মেয়েটার জন্য দোয়া করবেন, আমি আর কিছু চাই না।” রিয়া গোপ নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকার ব্যবসায়ী দীপক কুমার গোপের একমাত্র কন্যা ছিলেন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই গণ আন্দোলনের সময় দুপুরে নিজেদের পাঁচতলা বাড়ির বারান্দায় খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হয় রিয়া। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে দ্রæত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পাঁচদিন আইসিইউতে থাকার পর ২৪ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, শহরের ডিআইটি এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ওই সময় শামীম ওসমান তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান এবং শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তাদের হামলায় রিয়া গোপ গুলিবিদ্ধ হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, আন্দোলনকারীদের দমাতে হেলিকপ্টার থেকেও টিয়ারগ্যাস ও গুলি ছোড়া হয় বলে জানা গেছে। এভাবে নারায়ণগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারগুলিম মধ্যে ঈদ আনন্দ দেখা যায়নি। সকলেই ছিল মর্মাহত। তবে সকলেই এ গণহত্যার দ্রæত বিচার দাবি করেন।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯