
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কোণঢাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে তারাও বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ চেয়ারম্যান এখনো গ্রেপ্তার হোননি যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করার অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তারের কয়েকদিনের মধ্যে কয়েকজন চেয়ারম্যান জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছেন। যাদের মধ্যে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান অন্যতম। শহীদ পরিবারের ভাষ্য, জড়িতদের অবশ্যই সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার। তা না হলে তাদের আত্মা শান্তি পাবে না। তথ্যমতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দায়েরকৃত মামলায় বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম ডালিম এবং কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধাভোগী হয়েছেন তারা বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একসময় ধরাকে সরাজ্ঞান করে নানা রকমের অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষজনকে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। তারা হলেন, আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ফজর আলী, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু, কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন আত্মগোপনে থাকলেও দুই একজন চেয়ারম্যান দল পাল্টে আবার আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছেন। পুলিশসূত্রে জানা যায়, গত ৪ মার্চ অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি মাকসুদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে গতকাল বুধবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এক হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে, গত ১৮ ফেব্রæয়ারি আড়াইহাজার থেকে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম ডালিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে, গত ১৬ ফেব্রæয়ারি বন্দর ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার দেলোয়ার হোসেন প্রধান জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি পদে ছিলেন। তিনি এবং মাকসুদ চেয়ারম্যান দুজনই ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে ফেরার চেষ্টা করছেন আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এবং কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু। এদের মধ্যে মনিরুল আলম সেন্টু মামলা থেকে রক্ষা পেতে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। সেই সঙ্গে গত ৫ই ফেব্রæয়ারি বিএনপি থেকে নিজের বহিষ্কারাদেশ বাদ দিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর নিকট আবেদন করেন। আর জাকির হোসেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেছেন। সেই নীরিখে গত কয়েকদিন আগে আলীরটেক ইউনিয়নের এক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে জাকির চেয়ারম্যানের হয়ে বক্তব্য প্রধান করেন অ্যাডভোকেট টিপু। অথচ তাকে গ্রেপ্তার করার খুঁজছে পুলিশ। অন্যদিকে, মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন কয়েকজন চেয়ারম্যান। যেন কারও কিছু বলার নেই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার থাকাবস্থায় তাদের দ্বারা কত মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা যেন বলার অপেক্ষা রাখে না। সূত্র বলছে, দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের দ্বারা মানুষজন নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন প্রকাশ্যেই সভা সমাবেশ করে বেড়েয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ এই মাকসুদ হোসেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন। একসময় ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত থাকলেও বন্দর উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মাকসুদ হোসেনের সম্পর্ক নষ্ট হয়। তারপরেও আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতার আশ্রয়ে তার দাপট যেন কমেনি। তবে অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালী ওসমানের পরিবারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে জেলায় উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের একটি চক্র গড়ে উঠেছিলো। যারা সবসময় ওসমান পরিষদের সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকতেন। ওসমান পরিবারের সদস্যরা যে কমান্ড করতেন তা একবাক্যে মেনে নিতেন। সেই সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বলে বেড়াতেন নারায়ণগঞ্জে কোনো দল নেই। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার যা বলবে তাই হবে। ওসমান পরিবারের বাইরে কোনো কথা হবে না। যার মধ্যে কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন অন্যতম। তিনি সোনারগাঁয়ের চেয়ারম্যান হলেও সবসময় ওসমান পরিবারের অনুসারী ছিলেন। এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর পতন হওয়ার সাথে সাথেই ওসমানের পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। ওসমান পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেলেও ওসমান পরিবার ঘেঁষা এসকল চেয়ারম্যান বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক বৈষম্যবিরোধী মামলা হলেও গ্রেফতার হচ্ছিল না। তবে গত এক মাসের মধ্যে তিন চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে বাকিদের মধ্যে গ্রেপ্তারের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জে বদিউজ্জামান নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী মোসাম্মৎ আদুরী খাতুন বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামীর তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমিরী ওসমান, শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের সাথে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী রয়েছেন। তাদের মধ্যে জাকির হোসেনের পক্ষে মহানগর বিএনপির কোনো কোনো প্রকাশ্য সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, বন্দরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভ‚মিকা পালনকারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করা হয়। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর পিতা মতিউর রহমান বাদী হয়ে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এছাড়াও তার নামে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তবে এখনো গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ফজর আলী, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯