গর্ত থেকে বেরিয়ে ফনা তুলছে আ’লীগ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সম্প্রতি আওয়ামীলীগের অপতৎপরতা বেশ লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা হুট করে বেরিয়ে হঠৎ ঝটিকা মিছিল করে আবার লুকিয়ে পড়ছে। আর আওয়ামীলীগের এমন কর্মকান্ডে বিএনপির এক নেতা বলেন, আমাদের সাবধান থাকতে হবে। কারণ আওয়ামীলীগ গর্ত থেকে বেরিয়ে আবার ফনা তুলছে। তারা সুগোপ পেলেই ছোবল দিবে। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ পর এবার ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ¯েøাগানে রাজপথে মাস্ক ও কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ে প্রথম মিছিলে দেখা মিলেছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের। গত ২১ এপ্রিল ফতুল্লায় ভোরে যুবলীগের মিছিলের প্রস্তুতিকালে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত ২৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জে প্রথম শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থান ও সরকারি দপ্তরের দেয়ালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানো হয়। পোস্টারে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ লিখনীতে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘গডফাদার’ খ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ছবি দেখা যায়। এর তিনদিন পর ২৭ জানুয়ারি সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে সাঁটানো হলো আজমেরী ওসমানের পোস্টার। তার পোস্টারে একই ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ ¯েøাগান দেখা যায়। ওই সময় ছাত্র-জনতা ও ছাত্রদল বিরোধীতা করলেও চুপচাপ পরিবেশে কয়েকদিন পর ফেব্রæয়ারি শুরুতে লাগাতার কর্মসূচী ঘোষনা দেয় আওয়ামীলীগ। এতে লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ সহ অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচী পালন করে। পুরো দেশ যখন সরগরম হয়ে পড়ে তখন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর ফাঁকে গত ২৮ মার্চ রাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ‘জয় বাংলা’¯েøাগানে মাস্ক ও কাপড় পরিহিত সমর্থকরা মিছিল বের করে। এর আগে তারা মশাল মিছিল বের করে। অন্তর্বতী সরকারকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে ফেব্রæয়ারি মাস জুড়ে ১৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এরপরই ১ ও ৪ ফেব্রæয়ারি বন্দর উপজেলা কলাগাছিয়া ও থানার সোনাকান্দায় কর্মসূচি হিসেবে লিফলেট বিতরণ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। ৪ ফেব্রæয়ারি রাতে অভিযান চালিয়ে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ এই চারজনকে আটক করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন, ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজু, ২০ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জামান মিয়া, তাঁর সহযোগী সাইফুল ইসলাম ও ফারুক হোসেন। আওয়ামীলীগ পতনের পর প্রথম হরতাল কর্মসূচীতে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলা মশাল মিছিল বের করে। আওয়ামীলীগের ভেরিফাই ফেসবুকে প্যাজে একটি ভিডিও প্রকাশ করে নড়ে চড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি। আকাঁবাকাঁ একটি সড়কে মশাল মিছিলে হরতাল সমর্থনে তাদের ¯েøাগান ছিলো। ৫ আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর আড়াইহাজারে প্রথম রাজপথে মিছিল করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। ২০ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মিছিলের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ১৯ এপ্রিল আড়াইহাজারের খাককান্দা ইউনিয়নে কৃষকলীগের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল গ্রামের রাস্তা ধরে দুই তিন মিনিটের জন্য এই ঝটিকা মিছিল বের করে।
জানা যায়, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মোল্লা সমর্থকরা এই মিছিলটি বের করে। তবে হাবিবুর রহমান মিছিলে উপস্থিত ছিলেন না। এসময় আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নামে ¯েøাগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। এদিকে মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ছাত্র জনতার মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২১ এপ্রিল আড়াইহাজারে সাগর হাসান (২৫) নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উপজেলার কল্যান্দী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাগর উপজেলার কল্যান্দী শেখ বাড়ি এলাকার কবির হাসানের ছেলে। উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। গণ-অভ্যুত্থানের পর সোনারগাঁয়ে হাইওয়েতে মিছিল করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় মাস্ক ও কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ২১ এপ্রিল ভোরে সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ছাত্রলীগের ২০/২৫ জন নেতাকর্মী মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। পরিচয় গোপন করতে প্রত্যেকেরই মুখ কালো মাস্ক কিংবা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। ভোরে মহাসড়কে দশ থেকে পনেরো মিনিটের মত মিছিল দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন তারা। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে ভিডিওটি প্রচার করা হয়। মিছিলে “শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে” “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ¯েøাগান দিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। গণ-অভ্যুত্থানের পর ফতুল্লার লিংক রোডে মিছিল বের করে ছিলো আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ২১ এপ্রিল ফতুল্লায় ভোরে আওয়ামী লীগের এক কর্মীসহ ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে আসামিদের আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন তিনি আগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে অংশ নিতেন। আটকরা হলেন, ঠিকাদার ও যুবলীগ নেতা আবুল (ছাত্র হত্যায় অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেলের সহযোগী), মোল্লা জাফর, সোহাগ, উজ্জ্বলসহ ৭ জন। জানা যায়, সোমবার ভোরে শিবু মার্কেট এলাকায় মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। গোপন সূত্রে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের আটক করে পুলিশ। গত ২৩ জানুয়ারি অয়ন ওসমান ও ২৭ জানুয়ারি আজমেরি ওসমান শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শেখ হাসিনাই আস্থা ¯েøাগানে পোষ্টার সাটিয়ে আলোচনা উঠে আসেন। পরবর্তিতে ২৮ মার্চ রাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ‘জয় বাংলা’ ¯েøাগানে মাস্ক ও কাপড় পরিহিত সমর্থকরা মিছিল বের করে। এর আগে তারা মর্শাল মিছিল বের করে।