ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সিদ্ধিরগঞ্জের আতঙ্কের আরেক নাম কিশোর গ্যাং পানি আক্তার বাহিনী। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডসহ আদমজী এলাকার বাসীন্দারা। এদিকে কিশোর গ্যাং ‘টেনশন গ্রুপ’ এর ৭ সদস্য গ্রেফতার হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি কিশোর গ্যাং আক্তার ওরফে পানি আক্তার বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের প্রতিটি দফতরে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি হাতে কিশোর গ্যাং ‘টেনশন গ্রুপ’এর প্রধান রাইসুল ইসলাম সীমান্তের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। জানা যায়, ভিডিওতে অস্ত্র ও গুলি হাতে থাকা ওই যুবকের পিতা নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের বড় ছেলে। রাইসুল ইসলাম সীমান্ত সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি ২নং ওয়ার্ডের সক্রিয় কিশোর গ্যাং ‘টেনশন গ্রুপের প্রধান। বাবা শফিকুল ইসলামের শেল্টারে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সীমান্ত। সীমান্তের এমন ভিডিও ভাইরালের পরপরই নরেচরে বসে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিশোর গ্যাং ‘টেনশন গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও পানি আক্তার বাহিনীকে গ্রেফতার না করায় স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আক্তার ওরফে পানি আক্তার সুুমিলপাড়া এলাকার মৃত করিম কসাইয়ের ছেলে। সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে চাঁদা আদায়ের সময় ‘পানি আক্তার ও আশরাফ উদ্দিন বাহিনীর’ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১ এর সদস্যরা। এ সময় পানি আক্তার বাহিনীর কাছ থেকে চাঁদাবাজির নগদ অর্থ উদ্ধার করে র্যাব। গ্রেপ্তার পানি আক্তার বাহিনীর সদস্যরা হলো, হৃদয় মিয়া (২৫), বাবু (৩০), নূর হোসেন (২৩), মো. হাসান (২১) এবং রাসেল (৩০)। চাঁদাবাজির সময় র্যাবের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় পানি আক্তারসহ তার আরও সাত সহযোগী। পরবর্তীতে র্যাব তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেন। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের চিহ্নিত এক সন্ত্রাসীর নাম পানি আক্তার। একসময় ঝাড়ে করে ভ্যান দিয়ে পানি সাপ্লাই করতো বলে সিদ্ধিরগঞ্জে সে পানি আক্তার নামে পরিচিতি পায়। এলাকায় মাদক ব্যবসা, কিশোরগ্যাং তৈরি, ইভটিজিং, আদমজী ইপিজেডে অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেয়া, অবৈধ ডিশব্যবসা নিয়ন্ত্রনসহ অসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং লিডার পানি আক্তারের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কাউন্সিলর মতির অনুসারী হিসেবেই এলাকায় বেশ পরিচিত পানি আক্তার। দিন দিন পানি আক্তারের কিশোরগ্যাং বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদমজী ইপিজেডের এক কর্মকর্তা জানান, আদমজী ইপিজেডে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইপিজেডের কাস্টমসের যোগসাজসে মূল্যবান মালামাল পাচারের সাথে জড়িত এই পানি আকতার। সে দীর্ঘদিন ধরে আদমজী ইপিজেডের ভেতরে ইপিক গার্মেন্টসের ডিজিএম নূর নবীর সাথে গোপন আতাঁত করে মালামাল বের করছে। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে পানি আক্তার দিনের পর দিন এই অপকর্ম করে যাচ্ছে। ডিজিএম নূর নবী দীর্ঘদিন যাবৎ পানি আক্তারের সাথে ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ হিসেবে ইপিজেড থেকে কোটি কোটি টাকার মালামাল ইপিক গার্মেন্টস থেকে অবৈধ ভাবে বের করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব মালামাল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে গার্মেন্টস পণ্য (মালামাল) বের করা হয়। পানি আক্তার, ডিজিএম নূর নবী ও কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্ডারের চেয়ে অতিরিক্ত মালামাল পাচার করা হয়। এতে পানি আক্তার চক্র লাখ লাখ টাকার মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে। ইপিজেড ব্যবসায়ীরা জানান, এরকম দুধর্ষ সন্ত্রাসীরা ইপিজেডের শান্ত পরিবেশকে দিনদিন অশান্ত করে তুলছে। এদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্টনাইটে সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাং লিডার পানি আক্তার ও আইলপাড়া এলাকার শাকিল গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে একাধিকবার সন্ত্রাসী পানি আক্তার ও শাকিল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এর জের ধরে থার্টি ফাস্টনাইটে রামদা, চাপাতি, চাকু, লোহারপাইপ, হকিস্টিকসহ অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের নিয়ে শাকিল গ্রুপের উপর হামলা চালায়। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গোলা গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি দোকান। এলোপাথাড়ি কোপানো হয় এলাকার নীরিহ যুবকদের। এতে ১০/১৫ জন আহত হয় বলে জানা যায়। তবে অজ্ঞাত ইশারায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ পানি আক্তার বাহিনীর কাউকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। অপরদিকে, গত বছরের ৩ জানুয়ারী সুমিলপাড়া মুনলাইট গামেন্টেস এর পিছনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের একটি অফিস ভাংচুর করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পানি আক্তার বাহিনী। এতে আগুনে পুড়ে যায় পুরো অফিস সহ অফিসে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি শামীম ওসমানের ছবি। অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের জুন মাসে সুমিলপাড়া মুনলাইট রেললাইন চৌরাস্তা এলাকায় নারী পোশাক শ্রমিকদের উত্ত্যক্ত করে আসছিলো ক্যাডার পানি আক্তারের সহযোগীরা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পানি আক্তারের সহযোগী শামীম মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতো। এতে বাঁধা দেয় ছোট মিজান ও তার লোকজন। এরই জেরে পানি আক্তার ও তার বাহিনীর লোকজন চাপাতি, রামদা, রড, লাঠিসোটা নিয়ে মিজান গ্রুপের উপর হামলা চালায়। এতে ১০/১৫ জন আহত হয়। হামলার ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ পানি আক্তারকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় বেশ কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন একাধিক মামলার আসামি কিশোর গ্যাং লিডার সন্ত্রাসী পানি আকতার। এলাকাবাসী জানায়, পানি আক্তার এলাকার ত্রাস। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে রয়েছে তাঁর বেশ সখ্যতা। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি জোড়দার হলে এই বাহিনী থেকে তাঁদের মুক্তি মিলবে। এই সন্ত্রাসীর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতার করার জন্য জেলার সকল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি গত ৫ আগষ্ট সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রতিপক্ষের উপর হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ইসমিতা এন্টার প্রাইজের মালিক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা তাঁতী লীগের সভাপতি মো: লিটন। যার মধ্যে পানি আক্তারকে ২ নং অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী আদমজী ইপিজেডস্থ চার্মিং ফ্যাক্টরীর এনএস কন্সন্ট্রাকশন এর সাপ্লাইয়ার ইসমিতা এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ লিটন ও তার বন্ধু মোঃ সেলিম মজুমদার গত ৪ আগষ্ট দুপুরে আদমজী ইপিজেডস্থ চার্মিং ফ্যাক্টরীর ভিতরে প্রবেশ করলে অভিযুক্তরা এসে ভুক্তভোগীদের কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। এবং অভিযুক্তরা বলেন ইপিজেডে ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলে হুমকি প্রদান করেন। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত আক্তার ওরফে পানি আক্তার তার প্রাইভেটকার যোগে দেশীয় অস্ত্র সুইচ গিয়ার, দা, লাঠি, হকিস্টিক, লোহার রড নিয়ে ইপিজেডের ভিতরে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে তাদের দাবীকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের উপর হামলা চালায় পানি আক্তার বাহিনী। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, একই দিন বিকেলে ইপিজেডের ভিতরে হামলার ঘটনার জের ধরে অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং লিডার আক্তার ওরফে পানি আক্তারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন যুবক দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা তাঁতী লীগের অফিস ব্যাপক ভাংচুর করে। এসময় অফিসে লাগানো বঙ্গবন্ধুর ছবি, প্রধানমন্ত্রীর ছবি, এমপি শামীম ওসমানের ছবি ও থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাকর্মীদের ছবি ভাংচুর করাসহ অফিসে লাগানো সিসি ক্যামেরা ভেঙে হার্ডডিস্ক ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং অফিস ভাংচুর করে অফিসের কেবিনেটের ড্রয়ারে থাকা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, এরা অপ্রতিরোধ্য, পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে অবাধে চলাফেরা করে। এমন কোনো অপরাধ নাই যা তারা করে না। বয়স দেখলে বুঝার কোনো উপায় নেই এদের অপরাধ কী ভয়ঙ্কর হতে পারে। এরা যেকোন তুচ্ছ ঘটনায় চড়াও হচ্ছে যে কারো ওপর। অনেকের কাছে এরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে এলাকার সম্মানিত মানুষও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। পুলিশের তালিকায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ মামলা হলেও গ্রেফতারের বাইরে থেকে যায় তারা। অভিযোগ রয়েছে, বীরদর্পে তাদের অপকর্ম চলমান থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের অকল্পনীয় পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনও ভাবেনি তার সরকারের শুধু পতনই ঘটবে না, বরং তাকে চুপিসারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আওয়ামীলীগের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর পরই আওয়ামীলীগের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যায়। এর […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯