আজ শনিবার | ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৮ মাঘ ১৪৩১ | ১ শাবান ১৪৪৬ | সকাল ৭:১৩

রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

ডান্ডিবার্তা | ২৪ আগস্ট, ২০২২ | ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি  কিশোর গ্যাং বর্তমানে সমাজের একটি বড় সমস্যা। রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাং একটি আতঙ্কের নাম।  রূপগঞ্জ জুড়ে নামে বেনামে গড়ে উঠা পঞ্চাশটির মতো সংগঠনের অনেকেই স্কুল কলেজের গন্ডিও পার হয়নি। জানা গেছে ইতিমধ্যে কিশোর গ্যাং এর ডেঞ্জার গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে র‌্যাব-১১ আটক করেন। এদের আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে মূল হোতারা। সূত্রে জানা যায়, এই ডেঞ্জার গ্রুপের হোতা হিসাবে কাজ করছে সাওঘাট এলাকার শাহজাহানের ছেলে নাজমুল (২৫)। সাওঘাট ভুলতা ফিলিং স্টেশনের পাশে নামে মাত্র ওয়ার্কসপ বসিয়ে নাজমূল কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে আসছে। তার রয়েছে বিশাল কিশোর গ্যাং, সে কারনে তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। সচেতন মহল মনে করেন কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। নাজমুলের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিদিন উপজেলার কোন না কোন এলাকায়, কেউ না কেউ তার এই কিশোর গ্যাং তান্ডবের শিকার হচ্ছে গোলাকান্দাইল এলাকা জুড়ে। যে বয়সে তাদের স্কুল কলেজে যাবার কথা, খেলার মাঠে থাকার কথা, বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মধ্যে দিয়ে প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে কিশোররা এখন ছুরি-চাকু এমনকি আগ্নেয়াশ্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, মাস্তানি করে, সব সময় তারা মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করা, মেয়েদের উত্তপ্ত করা, মহল্লায় নুতন ভাড়াটিয়া দেখলেই বিভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বাসার ভিতরে গিয়ে করা হয় হেনস্থা, তাদের ভাষায় যাকে বলে “ফিটিং” দেয়া। শুধু তাই নয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দিনভরই চলে তাদের আড্ডা , নারীদের দেখে করা হয় অশালীন মন্তব্য, আবার আদিপত্য বিস্তারের জেরে নিজেদের মধ্যে মারামারি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটে অহরহ,পাড়া মহল্লায় কিশোর যুবক গ্যাংগুলো এভাবেই ভয়ংকর হয়ে ওঠছে দিনকে দিন । রূপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি জনপদে বর্তমান সময়ে অনেকটা ফিল্মিস্টাইলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উঠতি বয়সের বিপদগামী এসকল কিশোরের গ্যাং। দিবারাত্রি তারা মাদক বেচাকেনা, সেবন, ডিজে পার্টি ও চুরি, ছিনতাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে এই গ্যাংয়ের কিশোররা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দলবেঁধে দিনের বেশিরভাগ সময় গার্মেন্টস চলাকালিন লাঞ্চের সময় এবং স্কুল-কলেজের সামনে কারণে অকারণে সময় কাটাচ্ছে। সুযোগ বুঝে গ্যাংয়ের সদস্যরা স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও গার্মেন্টস কর্মী নারীদের উত্ত্যক্ত করছে। বিশেষ করে উপজেলার তারাব পৌরসভা, যাত্রামুড়ার বেড়িবাধ, আলোচিত তিন’শ ফুট এলাকা, কাঞ্চন, হাটাব, দাউদপুর ও ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের আনাগোনা মারাত্মক হারে বেড়েছে। উঠতি বয়সের এ কিশােররা মাদক কারবার, এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা, অপরাজনীতি, সঙ্গদোষ, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে। গার্মেন্টস শেষে বেতন নিয়ে রাতে বাড়ি ফেরার পথে অনেকেই এই কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডবের শিকার হচ্ছে। ছিনতাই করে নিচ্ছে হাতের ফোনসহ সারা মাসের বেতনও। সম্প্রতি শিরিন আক্তার নামে একজন গার্মেন্টস কর্মী কাজ করেন স্কয়ার গার্মেন্টসে, রাতে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে বিশ্বরোড ফকির কটন মিলস সংলগ্ন এলাকায় আসলেই শিকার হন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। তার কাছ থেকে কয়েকজন কিশোর বেতনের সব টাকা নিয়ে যায়। মদনপুর ইপিলিয়নে কাজ করেন সোনিয়া নামের এক মেয়ে, সে যাত্রামুড়া এলাকার ভাড়াটিয়া , তারাবো পৌরসভার নিউ ঢাকা আসলে সে কিশোর গ্যাং এর শিকার হন। এসময় তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন, সে দিতে না চাইলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে থাকে। স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাং বৃদ্ধি বা বেপরোয়া হওয়ার পেছনে সম্পৃক্ততা রয়েছে স্থানীয় বড় ভাইদের। এছাড়াও কারও না কারও রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে সংঘবদ্ধ এই কিশোর গ্যাং চক্র। বর্তমানে যাত্রামুড়া বেরিবাধ একটা বিশাল আলোচিত স্থান, এখানে প্রতিদিন বিকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার যুগলের মিলন মেলা বসে। সেই সুবাদে কিশোর গ্যাং সদস্যদের ফিটিং চলে বেশি একটু সন্ধ্যা নামলেই হাতিয়ে নেয় টাকা পয়সা । ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় এ কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নতুন বাড়ি করলে মিষ্টির কথা বলে টাকা আদায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে নেয়া, মার্কেটে আসা অপরিচিত যুবক যুবতী ক্রেতাদের আটক করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে ফিটিং দেয়াও তাদের কাজ। পঞ্চাশটি কিশোর গ্যাংয়ের অবাধ বিচরণ এখন ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাজুড়ে। আতঙ্কিত উপজেলার বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া। কিশোর গ্যাং রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ দাবী করেন অভিজ্ঞমহল। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, আমরা কিশোর গ্যাংয়ের কোন অভিযোগ পাইনি, যদি অভিযোগ পাই তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, আমরা কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস। যেকোনো মূল্যে আমরা তা নির্মূল করার চেষ্টায় আছি। আমরা গত দু’মাসে নারায়গঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, চিটাগাংরোড, ভুলতা গাউছিয়া এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকটি গ্রুপকে ধরেছি। কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা