আজ শনিবার | ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৮ মাঘ ১৪৩১ | ১ শাবান ১৪৪৬ | সকাল ৬:৪৪

না’গঞ্জে কোভিডের টাকা আত্মসাত!

ডান্ডিবার্তা | ২৪ আগস্ট, ২০২২ | ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রবেশ করলেই প্রথমেই চোখে পড়বে এমন সততামূলক সাইনবোর্ড। টাংগানো রয়েছে সিভিল সার্জনের সিঁড়ি কোটায়। আশ্চর্য হলেও সত্য সিভিল সার্জনের নিয়ন্ত্রণাধীন সত্যেকটি শাখার দূর্ণীতির চরম প্রমাণ হাতে থাকার পরও তারা দূর্ণীতি মুক্ত বলে সাফাই গেয়ে দূর্ণীতিকে আরো উৎসাহিত করছে। এখানে এই দপ্তরের প্রায় সকল কর্তাগণ প্রমাণ করছেন তারা কতটা ভয়ংকর অপরাধী। খোদ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সিভিল সার্জন দপ্তরের দুইজন নিজের মনমানি করে চলেন।” সম্প্রতি নগরীতে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিয়ান আর দুই জনের চরম বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই নানা অপকর্মের চিত্র তুলে ধরেছেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের অপকর্মে অতিষ্ঠ নগরবাসীর হাজার হাজার অভিযোগ কোন অবস্থাতেই কর্ণপাত করেন না এই দপ্তরের কর্নকুম্ভের চক্র  অসংখ্য এমন অভিযোগের পর এবার উঠেছে কোভিড ১৯ এর অর্থ আত্মসাৎ করার গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ। “হয়তো ম্যাডিস্টার ক্লিনিকের মতোই নামকাওয়াস্তে গঠিত তদন্ত কমিটি ধামাচাপা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যে ছিলো তা প্রমাণ করতে।” চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা উল্লেখিত মন্তব্য করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. অনিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক সাতাশজন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অধিনস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে মিলে এই কর্মকর্তা ২২ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও লিখিত দিয়েছেন বঞ্চিত টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। অভিযোগের তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন। যদিও অভিযুক্ত কর্মকর্তা অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখ করে পরিচয় প্রকাশ না করে ডাকযোগে গত ১৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্যকর্মীরা। একই অভিযোগ জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে স্বাস্থ্যকর্মীরা উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিরতিহীনভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে করোনার টিকা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়ে ওয়ার্ডভিত্তিক ৫০টিরও বেশি টিকা দিবসে টিকা প্রদান করেছেন। এছাড়া রুটিন করে উপজেলা স্থায়ী কেন্দ্রে শুরু থেকে এই স্বাস্থ্যকর্মীরাই টিকা দিচ্ছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে ৪ দিন এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬ দিনের হিসেবে টাকা পেয়েছেন। এরপর আর কোন টাকা পাননি স্বাস্থ্যকর্মীরা। অভিযোগে তারা বলেন, ‘তবে জানতে পেরেছি আরো আটটি বিলের টাকা এবং ২০২১ সালের অগাষ্ট থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১১ মাসের স্থায়ী কেন্দ্রের বিল এসেছে। কিন্তু এ বিল থেকে আমাদের একটি টাকাও দেয়া হয়নি। এই টাকাগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অনিক বিশ্বাস, এমটি ইপিআই নাজিম উদ্দিন এবং হেড ক্লার্ক জাহাঙ্গীর বাদশা, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইসমাইল মিলে আত্মসাৎ করেছে।’ অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘এমটি ইপিআই নাজিম উদ্দিন প্রতিটি ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শককে (এএইচআই) দিয়ে ৮৫০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প কিনিয়ে বিলে লাগিয়ে স্বাক্ষর নিয়েছেন। সবগুলো বিলের কাগজপত্র নাজিম উদ্দিনের কাছে আছে। কোনো বিলই এখন পর্যন্ত কাউকে দেননি। নাজিম উদ্দিনের দুর্নীতির কথা লিখে শেষ করা যাবে না। সে গত ১১ মাস যাবৎ অফিস টাইমের পর টাকার বিনিময়ে করোনার ভ্যাকসিন দিয়ে যাচ্ছেন। শিশু টিকার কার্ড ও শিশুদের টিকা এনজিওদের কাছে বিক্রি করেন।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া ওই অভিযোগে বঞ্চিত স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, ‘নাজিম উদ্দিন ও ইসমাইল সবসময় কর্মীদের বিরুদ্ধে স্যারের (ইউএইচএফপিও) কানে কুমন্ত্রণা দেন আর কমিশন নেন। নিজেদের মধ্যে সমাধানের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে লিখতে বাধ্য হলাম। স্যার আমরা মাঠকর্মীরা অনেক কষ্ট করে মাঠে থেকে কাজ করি। এতো কষ্টের টাকা যদি অফিসের এসি রুমে বসা লোকেরা যদি আত্মসাৎ করে খায় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? তাই আমাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে অপরাধীদের যথাযথ আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রার্থনা করছি যেন ভবিষ্যতে ছোট কর্মচারীদের অধিকার খর্ব করতে কেউ সাহস না পায়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘১৯ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৩ জন পোর্টার ম্যান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করেছেন। দৈনিক ভিত্তিতে তাদের টাকা পাওয়ার কথা। ডিজি অফিসের লাইন ডিরেক্টরের তথ্যমতে সব টাকা উপজেলা পর্যায়ে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু একটি টাকাও আমরা পাইনি। এইরকম ২৭ জন কর্মী আমরা বঞ্চিত। আত্মসাতের টাকার পরিমাণ ২২ লাখেরও বেশি। জানুয়ারি মাসেরও ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার একটি বিল আসে। এই টাকাটাও পাইনি। অথচ নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য উপজেলায় টাকা দেওয়া হয়ে গেছে।’ তারা আরও বলেন, ‘নাম প্রকাশ করলে কর্মস্থলে রোষানলের শিকার হবো ভেবে লিখিত অভিযোগে কারও নাম উল্লেখ করিনি। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় প্রত্যেক কর্মীই ক্ষুব্দ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করায় স্বাস্থ্য কর্মীদের দিয়ে লিখিতও নিয়েছেন। আমাদের কোন অভিযোগ নেই, টাকা-পয়সার কোন সমস্যা হয়নি- এইরকম একটা কাগজে লিখে কয়েকজনের স্বাক্ষর নিয়েছেন ডা. অনিক বিশ্বাস। কিন্তু আমরা তো কেউ টাকা পাইনি। এইভাবে কারও কষ্টের টাকা আত্মসাৎ হলে সিস্টেমের কিছু তো আর থাকলো না। আমরা এর প্রতিকার চাই।’ তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনিক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘কোন কোন বিল তোলা হয়েছে সেইটা এই মুহুর্তে বলতে পারবো না। আমি তো সবগুলো ফাইল দেখিও না। যেসব টাকা এসেছে সবগুলোই দেওয়া হয়েছে। টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য না।’ তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এমন অভিযোগ তুলে একটি লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান। অভিযোগের তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি বেনামে করা হয়েছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই একটি তদন্ত কমিটি করেছি। সপ্তাহখানেক ধরে তারা তদন্ত করছেন।’ সিভিল সার্জন বলেন, ‘টিকাদান কিংবা যেকোন প্রোগ্রামের টাকাগুলো সাথে সাথেই আসে না। প্রোগ্রাম হয়ে যায় কিন্তু টাকা আসে ছয়মাস পরে। প্রোগ্রামের সময় কিছু সমন্বয় করা হয়। যেমন মাইকিং এর টাকা নিজ পকেট থেকে দেওয়া হয়। এইসব পরে সমন্বয় করা হয়। আর আমি নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেছি জানুয়ারিতে। অভিযোগের প্রসঙ্গগুলো তারও আগের। তবে শক্তিশালী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা