ওদের টার্গেট শেখ হাসিনা

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, ২০২৪সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনাই আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের টাগেট সরকার ফেলে দেয়া নয়, তাদের টার্গেট শেখ হাসিনাকে ফেলে দেয়া। ওরা শ্লোগান দেয় বাংলার মাটিতে, ৭৫এর হাতিয়ার গর্জে উঠে আরেক বার। কারণ শেখ হাসিনা এদেশের আগামী প্রজন্মের সম্পদ, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত। তাই ফখরুল সাহেবরা লন্ডনের নির্দেশে মরণ খেলায় নেমেছেন। আপনারা খেলবেন আমাদের সাথে। কবে খেলবেন বলেন। আমরাও খেলতে চাই। আপনারা ধ্বংসের পক্ষে আমরা খেলবো ধ্বংসের বিপক্ষে। আপনারা খেলবেন সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে আমরা খেলবো অসাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক জন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। স্বাধীনতা বিরাধী, জঙ্গীবাদ ও দেশ ধ্বংসের প্রতিবাদে আয়োজিত ‘জেগেছে নারায়ণগঞ্জ, জাগবে বাংলাদেশ’ শিরোনামে আয়োজিত ঐ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীল। এর আগে দুপুর ২টা থেকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহর, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে যোগ দেন। প্রায় দেড় লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগমে পুরো জনসভা জনসমূদ্রে পরিণত হয়। দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকার শত শত নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থলে জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শহর স্থবির হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিককালে নারায়ণগঞ্জ শহরে এতবড় জনসমাবেশ দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু সড়কের অধিকাংশ জায়গায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়। এক ঘন্টারও বেশী সময় শামীম ওসমান এমপি তার দেয়া বক্তব্যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সমাবেশে শামীম ওসমান বিএনপি-জামাতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, লন্ডন থেকে নির্দেশ আসছে আর সেই নির্দেশে আপনারা বাংলাদেশে বসে লাফাচ্ছেন। লাফানোর আগে চিন্তা করেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়েছেন। লন্ডন থেকে যিদি হুকুম দিচ্ছেন ছেলে হয়ে তো আসলেন না বাংলাদেশে। বুকে কলজে নাই নাকি সাহস নাই। আপনি লন্ডনে আরামে থাকেন নিজের ছেলের বউ তো বড় নামকরা ডাক্তার। শাশুড়ী তো মায়ের মতই। তিনিও তো আসতে পারতেন, আসলেন না। তাদের একজন মেয়েও আছে। দাদীকে দেখতে তো একবারও আসলেন না। যারা তার কথায় নাচছেন তারা কি ভেবেছেন যারা মায়ের জন্য আসে না আপনি বিপদে পড়লে সে কি আপনার জন্য আসবে? শামীম ওসমান বলেন, আমাদের রাজনীতি করার কথা ছিল না বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে। বঙ্গবন্ধু আর পনেরো বছর পেলে বাংলাদেশ জাপানের মত উন্নত দেশ থাকত। আপনারা আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ করেন এটা বলব না। আমি বলব শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের স্বপ্ন না। শেখ হাসিনা আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশের ভবিষ্যত। গত ১৬ আগষ্ট জাতির জনকের কন্যা বলেছেন চতুর্দিক থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আরেকটি পঁচাত্তরের একুশে আগষ্টের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে। জাতির পিতার কন্যাকে বলতে চাই হতে পারেন আপনি নীলকন্ঠী। চেষ্টা করেছি আপনার মত হওয়ার। খোকন সাহাকে নাকি ন্যাংটো করে ঘোরাবে। বলেন, তার আগে চিন্তা করবেন। রাজনীতিতে এই ভাষা চলে না। আপনারা ভাবছেন আপনারা এ ভাষায় কথা বললে আমরা আপনাদের আঘাত করব। আমরা তা করব না। আমাদের ভূল থাকলে ভূল ধরিয়ে দেন। আপনারা তা করছেন না। শামীম ওসমান এসময় বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রীর চা খাওয়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, নো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নো। আপনি নীলকন্ঠি, বিষ খেয়ে হজম করতে পারেন কিন্তু চেষ্টা করেও আমরা নীলকন্ঠি হতে পারবো না। কোকো মারা গেল জাতির পিতার কন্যা গেলেন তার বাসায় সহানুভূতি জানানোর জন্য। তাকে অপমান করা হল। আপনি আবারও বলছেন গণভবন পর্যন্ত আসলে চা খাওয়াবেন। এটা হতে পারে না। যারা আপনাকে হত্যার চেষ্টা করে যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সংসদে বসায় বাংলার মানুষ চায়না আপনি তাদের চা খাওয়াবেন কি করে? ৮১ সনে নেত্রী যখন দেশে ফিরে আকুতি মিনতি করলেন নিজ বাড়িতে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়বেন। তখন গেইটটা জিয়াউর রহমান খুলতে দেয়নি। সেখানে বসে একটু কান্নার সময়ও দেননি। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা আর্তনাদ করে কেঁদেছিলেন। আরেক বোন শেখ রেহানা তো কাঁদতেও পারেননি। আপাকে বললাম অনেক হয়েছে আমাদের ছুটি দেন। তিনি বললেন, তোদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনি বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উচু করে দাঁড় করাতে কাজ করে যাচ্ছেন।   আপনি গণতন্ত্রের কথা বলেন ওরা এটাকে দুর্বলতা ভাবে। শামীম ওসমান এসময় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান দেশে আসলেন। ২২টি সংগঠন গেল, গিয়ে বলল র‌্যাব এটা করেছে সেনাবাহিনী এটা করেছে। এটা কেন বলতে ভুলে গেলেন যে, আমাদের দেশে ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা এসে বসে আছে। পুলিশ রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। এই র‌্যাবের ভূমিকা আপনারা অস্বীকার করতে চান? রোহিঙ্গা ইস্যুতো সবচেয়ে বড় বিষয়। বার্মায় গিয়ে কেন বলেন না রোহিঙ্গা ফেরত নাও নয়ত স্যাংশন দেয়া হবে। সামনে কঠিন সময় আসছে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ওরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা ওদের জায়গায় ঠিক আছে। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিভক্ত। বলেছিলাম আমি শ্লোগান দিব আপনারা বক্তৃতা দিয়েন। সবাই তো বুঝল না। অনেকেই বুঝেও না বোঝার ভান করেন। তারা আমাদের হুমকি দেন। শেখ হাসিনাকে ২১বার মারার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী কত মানুষকে হত্যা রেপ করা হয়েছে পত্রিকায় পাবেন। তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার। নারায়ণগঞ্জে যারা আওয়ামী লীগ করেন। শেখ হাসিনার বদৌলতে বড় বড় পদ পেয়েছেন। আসুন মাঠে নামুন। ২০২৪ সালে জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় আসলে আমাকে বলবেন আমি সরে যাবো। পদ পদবী আপনারা নিয়েন। তোলারাম কলেজের ভিপি ছিলাম। তখন নয়শ টাকার জন্য ফরম ফিলাপ করতে পারিনি। আমার বড় ভাইকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ঢাকার রাজপথ দখল করবেন। আমরা কি হাতে চুরি পড়ে বসে আছি। আমাদের মহিলারাই যথেষ্ট। হয়ত কিছু স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি মরবে। বাঁচব কীনা জানি না। কালকে নাও থাকতে পারি। যা করার করেন, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। শামীম ওসমান বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। প্রথমে রোহিঙ্গা সমস্যা আসল। তারপর আসল কোভিভ। অনেক আতেল সুশীলরা বলেছিলেন টিকা পাবেনা, ১০লাখ মানুষ মরবে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই টিকা পেয়েছে। সাউথইস্ট এশিয়ার মধ্যে প্রথম ও সারা বিশ্বে পঞ্চম হলেন শেখ হাসিনা। এরপর হলো বন্যা। মানুষের কষ্ট হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে। যেখানে যুক্তরাজ্যের জিডিপি ৩০০বছরের ইতিহাসে কমে গেছে, সেখানে আমরা আল্লাহর রহমতে এখনও ভালো আছি। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহমুদকে ঢাকায় কস্তুরি হোটেলের সামনে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। স্থানীয় জনতা তাকে পাকড়াও করে পুলিশে দিয়েছেন। সেই ছেলেটা একজন পেইড কিলার। সে বলেছে আমার এলাকারই একজন এক্স এমপির ছেলে তাকে টাকা দিয়েছিল। ধরা পড়ে গেছে নয়ত এটা নিয়ে আবারও ত্বকী হত্যার মত নাটক সাজাতো। ইতোমধ্যে টিভির প্রতিবেদনে অনেক কিছু প্রকাশিত হয়েছে। অনেক কিছুই বের হয়ে এসেছে। শামীম ওসমান আরো বলেন, যারা অশুভ খেলা খেলার চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাটি শেখ হাসিনার ঘাটি ছিল এবং থাকবে। আওয়ামী লীগে সবাই ভাল মানুষ না, খারাপ লোকও আছে। কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদের বুজুর্গ ইমামকে আওয়ামী লীগের পদবী ব্যবহার করে কটুক্তি করেছে। আমাকে ইমামরা প্রশ্ন করেছেন কেন। আমি আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি ক্ষমা করে দিবেন। অনেকেই ক্ষমা চাইতে শেখেনি। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, দপ্তর সম্পাদক এমএ রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা, মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসরাত হাজার স্মৃতি, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল প্রমুখ।