আধুনিক না’গঞ্জ গড়তে ব্যর্থ আ’লীগ!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট মুখে মুখে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার আশ^াস দিলেও তা বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা। মন্ত্রী, সাংসদগণ, মেয়র পৃথক ভাবে দাবী করে আসছেন তারা ব্যাপক উন্নয়ণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে নানা সমস্যায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জবাসী। নতুন বছরের জরার্র্জিনতা আর রাজনৈতিক মান-অভিমান তথা পরস্পর বিরোধী অবস্থান ভুলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে দলমত র্নিবিশেষে সকল জনপ্রতিনিধিরা যার যার অবস্থানে থেকে নতুন প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করবেন এটাই প্রত্যাশা ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর। কিন্তু দ্বাদশ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ততই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। সাংসদ শামীম ওসমান, সাংসদ সেলিম ওসমান ও সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা একই বলয়ে থাকলেও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী পৃথক বলয়ে অবস্থান করে দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের কারণে নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যে পরিবারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতি মাথা উচু করে দাড়িয়েছে সেই ওসমান পরিবার বিরোধীরা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছেন কিছু স্বার্থন্বেষীমহল। যদিও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের ভূমিকা অতুলনীয়। এরপরও জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরোধে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। জানাগেছে, একসময়ের প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিল। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ইংরেজ বেনিয়ারা শুধুমাত্র ব্যবসা করে অর্থ উর্পাজনের লক্ষ্যে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে আস্তানা গেড়ে ছিল। ইংরেজ বেনিয়ারা নারায়ণগঞ্জ থেকে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা দেশে নিয়ে যেত। সেই ঐতিহ্যমন্ডিত নারায়ণগঞ্জ এখন হতশ্রী শহরে পরিনত হয়েছে। বিগত ৪৪বছরে নারায়ণগঞ্জ হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। স্বাধীনতার পর থেকে একে একে মেইল,ট্রেন, স্টিমার র্সাভিস, নৌ-বন্দর, পাটশিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা-বানিজ্য অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে। এখন একমাত্র নীটশিল্প ছাড়া নারায়ণগঞ্জের গর্ব করার মতো কিছু নেই বললেই চলে। অথচ বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা হয়েছে এই নারায়ণগঞ্জ থেকে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সর্বক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। অথচ সেই নারায়ণগঞ্জের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল ক্ষমতায় থাকা সত্তেও অনেকটা অবহেলিত বলা চলে । নারায়ণগঞ্জে বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। নেই কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়। শহরের প্রানকেন্দ্রে বাস-ষ্ট্যান্ড থাকায় বন্দরবাসীর দূর্ভোগের অন্ত নেই। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে পরিবহন স্ট্যান্ড। আর এসকল পরিবহন স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। অথচ এই অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী নগর উন্নয়ণে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিলেও শহরের প্রধান সমস্যা অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অনীহা দেখাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সাংসদ সেলিম ওসমান ও সাংসদ শামীম ওসমানও কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। অথচ তারা চাইলেই কয়েক ঘন্টার মধ্যে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ সম্ভব বলে মনে করছেন নগরবাসী। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন যেসব রাস্তাঘাট করছে তার আয়ু কতদিন থাকবে তা খোদ মেয়রও বলতে পারবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে? অথচ নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ সত্যিকার অর্থে গড়ে তুলতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ দেশের একটি মডেল টাউন হিসেবে পরিচিত হত। অথচ রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে নারায়ণগঞ্জবাসী কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।