জাকির চেয়ারম্যানের জামাত কানেকশন!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে জামাত-শিবিরকে আশ্রয় প্রশ্রয়সহ জামাতের অন্যতম অর্থদাতা বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। জাকির হোসেনের জামাত-শিবিরের সাথে দহরম মহরম অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। জামাত নেতাদের সাথে তার সখ্যতার কথা এখন আর রাখডাক নেই। জামাতের পৃষ্টপোষক হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য বিভিন্ন কায়দায় নির্বাচনে সে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে নব্য আওয়ামীলীগার বনে যান। তার বিরুদ্ধে আলীটেকের মাঠ পর্যায়ের একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে সে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেও আওয়ামীলীগের কোন কর্মকান্ডে জাকির চেয়ারম্যানকে দেখা যায় না। এমনকি সম্প্রতি আলীটেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সম্মেলনেও তার কোন ভ’মিকা ছিল না। তার আশেপাশে যারা আছে তারা হয় জামাত-শিবির ঘরানার নয়তো সরকার বিরোধী দলের সাথে জড়িত। অথচ এই জাকির চেয়ারম্যানই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার কিছু দিন পর প্রকাশ্যে বলেছেন, তার নির্বাচনী মার্কা নৌকা না হলে আরো বেশী ভোটে বিজয়ী হতেন। সম্প্রতি তার এক ঘনিষ্ট সহচর ও জামাতের সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর জাকির চেয়ারম্যানের জামাত কানেকশন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের একান্ত সহযোগী নাজির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জের কাউন্টার টেরোরিজমের বিশেষ ইউনিট। গ্রেফতারকৃত নাজির হোসেন আলীরটেক ইউনিয়নের ডিক্রিরচর গ্রামের বাসিন্দা মৃত জিকির আলীর ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলীরটেক ইউনিয়নে জাকির হোসেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও মূলত তার একান্ত সহযোগীদের প্রায় সকলেই বিএনপি ও জামাতের লোকজন। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচীতেও তাদের দেখা যেত। গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতা নাজির হোসেনকেও আলীরটেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেত। আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। জাকির চেয়ারম্যানকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা হাইব্রিড আওয়ামীলীগ নেতা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। আলীরটেক এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বহুরূপী। নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও তার বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামকে অর্থ দিয়ে সহযোগীতা করার অভিযোগ রয়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন জ্বালানো ও লুটপাটের ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর দায়েরকৃত মামলার আসামি আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। এছাড়া এর আগেও একটি মামলায় জাকির হোসেনের পাশাপাশি নাজির হোসেনও আসামী ছিলেন। প্রায় এক বছর পূর্বে একটি অনুষ্ঠানে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত আলীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসাইন বলেন, ‘আমি নৌকার প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করলে অনেক বেশি ভোটে নির্বাচিত হতাম’। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ। গত বছরের ২৭ মার্চ চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। নোটিশে স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান। পরে আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতাকে ম্যানেজের মাধ্যমে সে যাত্রায় রক্ষা পান জাকির হোসেন। ২০২২ সালের ৭ মে রাতের অন্ধকারে চেয়ারম্যান জাকিরের নির্দেশে তার লোকজন সরকারী সহায়তায় নির্মিত ডিক্রীরচরের কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ ময়দানের চারপাশের দেয়াল রাতের অন্ধকারে বুল ডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠে। বিগত দুই যুগ ধরে হাজারো মানুষ পবিত্র ঈদের দিনে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন। ঈদগাহ উন্নয়নে সরকার কর্তৃক ১০ লাখ টাকা অনুদানও দেয়া হয়। ঈদগায় দেয়া হয় বাউন্ডারি ওয়াল। কিন্তু চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সেই ঈদগাঁও দখল করে মার্কেট নির্মাণের পায়তারা করেন বলে অভিযোগ উঠে। তার অফিসে বসে আলীরটেক ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি আব্দুর রহমান ও জামায়াত নেতা নাজিরকে দিয়ে দোকান বরাদ্ধের একটি তালিকাও করে ফেলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টি এমপি মহোদয়ের দৃষ্টি গোচর হলে সেই ঈদগাহের ওয়াল পরবর্তীতে জোড়া তালি দিয়ে যদিও ঠিক করে দেয়, এর পরে আবার সেই ঈদগাহ মাঠের ভিতরে অবৈধ বাজার বসায়ে সেখান থেকে বড়ো অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে! এদিকে জাকির হোসেনের একান্ত সহযোগী জামায়াত নেতা নাজির হোসেনের নিজের তেমন কোনো বড় ব্যবসা না থাকলেও অবৈধ টাকায় ডিক্রীরচরের গোরস্থান সংলগ্ন এক বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। তারা আয়ের উৎস নিয়েও এলাকায় নানা গুঞ্জন রয়েছে। গত ২৭ মার্চ রাতে নাজির হোসেনকে শহরের জিমখানা এলাকার মসজিদ মার্কেট থেকে সিটিটিসির একটি টিম গ্রেফতারের পরে তাকে ছাড়াতে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন অনেক চেষ্টা তদবির করলেও শেষ পর্যন্ত তার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তবে গ্রেফতারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের অর্থও খরচ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজমের ওসি খোকন চন্দ্র সরকার জানান, গত ২৭ মার্চ এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জামায়াত শিবিরের নাশকতার মামলায় কারাগারে রয়েছে।