আজ বুধবার | ৬ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১ | ৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ | রাত ৯:২৬

সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপিতে বির্তকিতরা!

ডান্ডিবার্তা | ০৭ মে, ২০২৩ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের প্যাণেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন শীলসহ ৭ জনকে অপহরণ করে খুন ও লাশ গুম করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ইকবাল হোসেনকে দলীয় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছে বিএনপি। তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক করে গত ৪ মে কমিটি ঘোষনা করেছে জেলা বিএনপি। সারাদেশসহ বিশ^ব্যাপী সমালোচিত নারকীয় এ হত্যাকান্ডের ৯ বছর পার হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল। ইকবাল শুধু সাত খুন নয় জেলা বিএনপির বর্তমান প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। ইকবালসহ আরো দু’জনের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে গত বছরের ২৫ এপ্রিল ঢাকার পল্টনে অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হত্যার উদ্দ্যেশে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করা হয়। তিনি অবস্য প্রাণে বেচে গেছেন। সাত খুনের ঘটনার পর ১৪ দিনের মাথায় ২০১৪ সালের ১২মে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিহত নজরুল ইসলামের বাড়ীতে এসে নিহতদের পরিবারকে সান্তনা দেন এবং আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অপরদিকে অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হত্যাচেষ্টার পর বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রিয় অনেক নেতা হাসপাতালে ছুটে যান অধ্যাপক মামুনকে দেখতে। সেখানেও তারা হত্যাচেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। রাজনৈতিক আধিপত্যের দ্বন্দে ঘটে নৃশংস এই দুই ঘটনা। ইকবাল হোসেন ঘটনা দুটির একটিতে এজাহারভুক্ত এবং অপরটিতে চার্জশীট ভুক্ত হওয়ার পরও বিএনপি তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও জনসাধারনের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে যে এমন জঘণ্য অপরাধের সাথে যার নাম জড়িয়ে আছে তাকে দিয়ে বিএনপি কী অর্জন করতে চায় ? ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে নিহত প্যাণেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক ইকবাল নজরুলের প্রার্থীতা বাতিলের চেষ্টা করেন। শেষ অবধি উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে নজরুল ইসলাম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে প্যাণেল মেয়র হন। সেই থেকে নজরুল-ইকবাল বিরোধের চরম পর্যায়ের সূচনা। সে সময়ে জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের সাথে গভীর সখ্যতা ছিল ইকবালের। ওই সময়ে ইকবালের রাজনৈতিক কোন পরিচয় ছিল না। নজরুলকে চিরতরে সরিয়ে দিতে নুর হোসেন-ইকবালের সখ্যতা : নুর হোসেনের সাথে প্যাণেল মেয়র নজরুলের বিরোধ শুরু ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা থেকে। সে সময়ে নুর হোসেন বিএনপি করতেন আর নজরুল ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। নজরুল ছিলেন এ,কে,এম শামীম ওসমান এমপির নুর হোসেনের ঘনিষ্ট হয়ে উঠে ইকবাল। এরপর ঘটে নজরুলসহ ৭ জনের নৃশংস খুনের ঘটনা। ঘটনার পরদিন ফতুল্লা থানায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ইসলাম ৬ জনকে এজাহারভুক্ত আসামী করে মামলা করে। মামলায় থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নুর হোসেন, থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী ইয়াছিন, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক আমিনুল হক ভুইয়া রাজু, নুর হোসেনের ব্যাবসায়ীক অংশীদার হাসমত আলী হাসু, ইকবাল হোসেন ও থানা শ্রমিকদলের সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। মামলার পর নুর হোসেন ভারতে পালিয়ে যায়। আর অন্য আসামীরা দেশেই অবস্থান করে। কিন্তু বার বার বাদীর আকুতির পরও তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারে উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতার করেনি। ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নুর হোসেন ছাড়া এজাহার নামীয় ইকবালসহ বাকী ৫ আসামীকে অব্যাহতি দিয়ে র‌্যাবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র দেয়। ১১ মে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে না-রাজি আবেদন করে মামলার বাদি বিউটি ইসলাম। ৮ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত না-রাজি আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর ৯ নভেম্বর জেলা জজ আদালতেও বাদীর রিভিশন আবেদন খারিজ হয়। এরপর উচ্চ আদালতে গিয়েও বাদী না-রাজির পক্ষে রায় পাননি। অভিযোগপত্র আদালতে গৃহিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নুর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর এজাহার থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইকবালসহ ৫ আসামী বীরদর্পে এলাকায় ফিরে আসে। নুর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডে অর্থ লেন-দেনের বিষয়টিসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি করেছিল মামলার বাদি। কিন্তু তাও করেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। নজরুলকে হত্যার পর এবং এই ঘটনায় নুর হোসেনের ফাসির আদেশের মধ্যদিয়ে দুই পক্ষের প্রতিযোগিতার পর্ব শেষ হয়েছে। এরপর শুরু ইবালের অপ্রতিরোধ্য উত্থান। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে নজরুলের স্ত্রীকে পরাজিত করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন। তখন অভিযোগ পত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইকবাল ছাড়াও অন্য ৪ আসামী ছিলেন একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং প্রভাবশালী। তারা সকলেই আওয়ামীলীগ হলেও ইকবাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিনের ঘনিষ্টজন হয়েও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পায়। এরপর থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠজন হয়ে উঠেন ইকবাল। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিউটি ইসলাম আর নির্বাচন করেননি। আবারো ইকবাল কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ইকবালও প্রতিদান হিসেবে মেয়র আইভীর নৌকার পক্ষে নির্বাচনে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। ২০১৬ সালে ইকবাল কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মিজমিজি এলাকায় একটি জমি নিয়ে বিরোধ মিটাতে ভুমিকা রাখেন। ইকবাল এলাকার মানুষের কাছে আব্দুল আউয়াল মিন্টু তার মামা বলে পরিচয় দেন। অপরদিকে গিয়াস উদ্দিন ও বিএনপির একজন কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে পরিচয় ও পরবর্তীতে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়। এদের সহযোগিতায়ই ইকবাল বিএনপির সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাধারন সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ প্রত্যাশী গিয়াস উদ্দিনের প্রতিযোগি মামুন মাহমুদ। মামুনকে হত্যা করে প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পেশাদার খুনিদের ভাড়া করে মামুন মাহমুদকে আক্রমন করা হয় বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন। গিয়াস উদ্দিনের পুত্র গোলাম কায়সার রিফাত, পিএস পল্টু কর্মকার ও ইকবাল এই পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করায় নিয়োজিত ছিলেন বলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন। রিফাতকেও বিএনপি পুরস্কৃত করে কৃষক দলের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে।বিএনপির তৃণমূলে শংকা : গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে যারা রাজপথে দলের পক্ষে আন্দোলন সংগ্রামে থেকে নির্যাতন ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তারা সকলেই ক্ষুব্ধ ও চরম হতাশ তাদের দলের ও নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে। তাদের শংকা এই চক্র কখন কোন পদপ্রত্যাশীকে সরিয়ে দেয় তা নিয়ে। এসব বিষয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, দলের জন্য আদর্শ ধারন করে নিবেদিত কর্মী হয়ে কাজ করছি ৪০ বছরের কাছাকাছি সময় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে দলের এমন হাজারো কর্মী আছে। আমার মত তারাও বিশ^াস করেন জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। অপরাধীরা যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে তারা হয়তো বার বার এই চেষ্টা করবে। আল্লাহ-ই আমার ভরসা। আমি নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করি না। আমার ভাবনা হল, জনগণের অধিকার আদায়ে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে নিজেকে কতটুকু বিলিয়ে দিতে পারছি। এসকল বিষয়ে দলীয় ফোরামে কথা বলবো। দল যেটা ভাল মনে করবে সেটাই আমার কাজ হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৪৮
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:২১
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৫৩
  • ১১:৪৫
  • ১৫:৪১
  • ১৭:২১
  • ১৮:৩৬
  • ৬:০৬
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা