আজ শুক্রবার | ১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬ | বিকাল ৫:২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদা দিয়ে মহাসড়কে চলছে অবৈধ লেগুনা

ডান্ডিবার্তা | ২৩ মে, ২০২৩ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবৈধভাবে চলছে লক্কর ঝক্কর লেগুনা। মহাসড়কে এসব লেগুনা বেপরোয়াভাবে চলাচল করলেও রহস্যজনক কারণে হাইওয়ে পুলিশ নিবর। লেগুনা শ্রমিক মালিকদের দেওয়া তথ্যানুসারে এসব লেগুনাকে ঘিরে মাসে চাঁদা আদায় হয়ে থাকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। যা পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করার কথা বলে উত্তলন করা হয়ে থাকে। আর এ টাকার অধিকাংশই ভাগবাটোয়ারা করে নেয় চাঁদাবাজ আতিক, পরশ ও পলাশ সিন্ডিকেট। তবে চাঁদা আদায়কারীরা অর্ধ্ব কোটি টাকা আদায় করতে নতুন মিশনে মাঠে নেমেছেন বলে জানান মালিক-শ্রমিকরা। বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে দৈনিক গাড়ি প্রতি ৪৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় শুরু করলেও বর্তমানে চাঁদা আদায় করছে ৭০০ টাকা। তাদের ভাষ্যমতে, শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টিআই শরফুদ্দিনকে মোটা অংকের অনৈতিক সুবিধা শিমরাইল মোড়ে মহাসড়ক দখল করে বিশাল একটি অংশে লেগুনার স্ট্যান্ড করা হয়েছে। এর ফলে শিমরাইল মোড়ে আহসান উল্লাহ মার্কেটের সামনে মহাসড়কের বাইলেন সুবিধা নিতে পারছেন না অন্য কোনো পরিবহন চালকরা। এটি লেগুনা, সিএনজি ও অটোরিক্সার দখলে রয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কের উপরে নারায়ণগঞ্জের বন্ধু পরিবহন, আদমজী কোমল বাসস্ট্যান্ডও বহাল তবিয়তে রয়েছে এই টিআইয়ের অনুকম্পায়। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের যাত্রবাড়ি থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় পর্যন্ত প্রায় দু’শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। প্রায় গাড়িরই নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। হাতেগোনা ৪/৫ টি ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও বাকি বাসগুলো চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হেলপাররা। অধিকাংশ লেগুনা লক্কর ঝক্কর হওয়ায় এবং কোন রুট পারমিট না থাকায় কোন লাইসেন্সধারী ড্রাইভার এ গাড়ি চালাতে অগ্রহী হয়না। ফলে অপ্রাপ্ত ও অদক্ষ বয়স্ক হেলপারদের মাধ্যমেই চলছে লেগুনা। যাদের অধিকাংশই আবার মাদকাসক্ত। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো লেগুনা চলাচলের কোন রুট পারমিট নেই কর্তৃপক্ষের। লেগুনা মালিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দুই শতাধিক যাত্রীবাহী লেগুনা চলাচল করছে। প্রতিটি লেগুনা থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ৭ শ’ টাকা করে। যার মধ্যে চিটাগাংরোডে চাঁদা নেয়া হয় ৬০ টাকা। এ টাকার মধ্যে লাইনম্যান খরচ বাবদ জন্য ৪০ টাকা নেয়, চাঁদাবাজ পরশ ও আতিক নেয় ২০ টাকা। সাইনোবোর্ডে লাইনম্যানের জন্য ২০টাকা, যাত্রাবাড়ীতে লাইনম্যানের জন্য ৭০ টাকা আর জিপি চাঁদা ৪শ’ ৫০টাকা। অপর চাঁদাবাজ পলাশের জন্য গাড়ি প্রতি চাঁদা আদায় করা হয় ১শ’ টাকা। এছাড়াও ষ্টিকার লাগানোর জন্য গাড়িপ্রতি মাসিক চাঁদা ১ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই পরিসংখ্যান মতে ষ্টিকারসহ ২০০ গাড়ি থেকে মাসে চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। লাইনে নতুন গাড়ি প্রবেশ করতে হলে সালামি দিতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে সালামি বাবদ হাতিয়ে নেয় কমপক্ষে ২০থেকে ২৫ লাখ টাকা। আদায়কৃত এ চাঁদার টাকাটা পুলিশ প্রশাসন ও চাঁদাবাজরা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেন। তবে চাঁদাবাজ আতিক বলছেন ভিন্ন কথা, গাড়ি দুই শতাধিক হলেও প্রতিদিন সব গাড়ি চলেনা। শতাধিক গাড়ি নিয়মিত পাওয়া যায়। পলাশ ও পরশের নির্দেশে এসব গাড়ি থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় হয়। এসব টাকা লাইন চালু রাখতেই খরচ হয়। তিনি নিজেও এ টাকার একটি অংশ নিয়ে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে লেগুনা মালিক সমিতির নামে এসব লেগুনা চলছে। সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোডে দায়িত্বে রয়েছেন আতিকুর রহমান আতিক ওরফে টেম্পু আতিক, সাইনবোর্ড এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন হাসানুজ্জামান পরশ, যাত্রাবাড়ীতে লেগুনা মালিক সমিতির সভাপতি পলাশ। চিটাগাং রোড লেগুনা মালিক সমিতির নামে আতিকুর রহমান আতিক ওরফে টেম্পু আতিক মনির, শহিদ, আব্দুর রহমান, জুয়েলসহ আরও কয়েকজনকে দিয়ে চাঁদা তোলে। সাইনবোর্ড ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলে পরশ ও পলাশের সিন্ডিকেট আরিফ, সাঈদ, কাউসার, অনিক, শাহ আলম, নয়নসহ কয়েকজন চাঁদাবাজ চাঁদা আদায় করে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাড়ির মালিকের অভিযোগ, মাসিক ১ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে গাড়ির সামনের গ্লাসে ষ্টিকার লাগাতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। ষ্টিকার না লাগিয়ে গাড়ি সড়কে চলাচল করতে পারেনা। করলে চালকদের মারধর, গাড়ি ভাংচুর ও আটকিয়ে রাখে সমিতির নেতারা। জসিম নামে এক লেগুনা চালক বলেন, বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। চাঁদা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাইনবোর্ড যাত্রাবাড়ি লাইনে পরশ ও পলাশ সিন্ডিকেট এবং শিমরাইল লাইনে আতিক সিন্ডিকেট এর লোকজন চাঁদা উত্তোলণ করে। হাসানুজ্জামান পরশ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেসব গাড়ি মালিকরা অভিযোগ জানিয়েছে তাদের আমার সামনে নিয়ে আসেন। লাইনম্যানদের খরচের জন্য শিমরাইল ও সাইনোবোর্ডে টাকা নেওয়া হয়। এটাকোনো চাঁদা নয়। জিপি ৪শ’ ৫০ টাকা করে নেয় যাত্রাবাড়ীতে মালিক সমিতি। গাড়ি দু’শতাধিক হলেও দৈনিক সবগাড়ি রাস্তায় চলে না। তবে দৈনিক চারটি গাড়ি থানা পুলিশকে রিকুইজিশন হিসেবে দিতে হয়। লেগুনা মালিক সমিতির অপর এক নেতা বলেন, প্রশাসনের লোক ও সাংবাদিকদের বিশ ত্রিশটি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি থেকে জিপি নেওয়া হয় অর্ধেক। অনেকে দেয়না। লাইনম্যানদের জন্য কিছু টাকা তোলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ি থেকে চিটাগাংরোড পর্যন্ত দুই শতাধিক লেগুনা চলে ‘পরশ, পলাশ ও আতিক সিন্ডিকেট’কে চাঁদা দিয়ে। চাউর রয়েছে চাঁদাবাজি করেই পরশ হীরাঝিল এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক জমি, পাঁচ-সাতটি লেগুনাসহ মাত্র কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। বিভিন্ন পরিবহন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার হলেও হাসানুজ্জামান পরশের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি এখনো। পরশের হয়ে মোড়ে মোড়ে চাঁদা তোলে তার লোকজন। সিদ্ধিরগঞ্জ আজিবপুর বাগানবাড়ী এলাকায় নূরু মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমান আতিক ওরফে টেম্পু আতিক দীর্ঘদিন যাবৎ লেগুনা থেকে চাঁদা আদায় করে হয়েছেন বাড়ি ও গাড়ির মালিক। রয়েছে সাত-আটটি লেগুনা পরিবহন। প্রশাসনের ভয়ে মাঝে মাঝে এলাকা থেকে গা-ঢাকা দেন আতিক। তবে কিছুদিন পরেই ফেরেন মহাসড়কে চাঁদাবাজ রূপে। সে একটি হত্যা মামলার আসামি। একসময় সে পুলিশের দুর্ধর্ষ সোর্স ছিল। এর সুবাধেই আতিক জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধ কর্মকান্ডে। মাদক, দেহব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সুদ ব্যবসা করা আতিকের পেশা। সুদে টাকা লাগিয়ে বহু মানুষকে নিঃস্ব করেছে আতিক। অন্তত বিশ বছর ধরে আতিক চাঁদাবাজি করে আসছে। বর্তমানে সে মহাসড়কের আতংক। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট লেগুনা পরিবহনের মালিক শ্রমিকরা। এরআগে টেম্পো থেকে চাঁদাবাজি করায় তিনি টেম্পো আতিক হিসেবে পরিচিতি পান। এরআগেও লেগুনায় চাঁদাবাজির অভিযোগে টেম্পু আতিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মহাসড়কে চাঁদা না পেয়ে লেগুনা গাড়ির চালক ও মালিককে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিমরাইল মোড় ও সাইনবোর্ডে দায়িত্বে থাকা কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) শরফুদ্দিনের সাথে আলাপ চলাকালে কৌশনে লেগুনা চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অনিহা প্রকাশ করে শুধু বলেন, আগে যেভাবে চলছে এখনো সেভাবেই আছে। আমরা বিভিন্ন সময় লেগুনা আটক করছি, রেকারিং করছি, মামলা দিচ্ছি। যেটা অইনগত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা সেটাই ব্যবস্থা নিচ্ছি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৪৬
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:২৩
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৫১
  • ১১:৪৫
  • ১৫:৪৩
  • ১৭:২৩
  • ১৮:৩৮
  • ৬:০৪
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা