রাজনীতে না’গঞ্জের রাজপথ উত্তাল

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আগামী নির্বাচন ঘিরে প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহ সরকার পতনের আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি ১০ দফা দাবী আদায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ এতোদিন বিএনপির নৈরাজ্যকে প্রতিহত করার জন্য শান্তি সমাবেশ করেছে। তারাও এখন আর শান্তি সমাবেশ না করে বিএনপিকে রাজপথে প্রতিরোধ করার ঘোষনা দিয়েছেন। আর এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এক উত্তাল পরিবেশ তৈরী হয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আওয়ামীলীগ মাঠে অপর দিকে খালেদা জিয়েকে কটুক্তির প্রতিবাদে ছাত্রদল রাজপথে রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল এক দফা দাবী ঘোষনা করেছেন লাল মনিরহাট জেলার সমাবেশ থেকে। তিনি বলেন, আর দশ দফা নয়, এখন এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নতুন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড আনিসুর রহমান দিপু বলেন, এই সরকারের অধীইেন নির্বাচন হবে। সেখানে জনগণ ভোটের মাধ্যমে যাকে রায় দিবে সেই আসবে। বিএনপিতো নির্বাচনে আসতেই ভয় পায়। তাদের জালাও পোড়াও আগুনের রাজনীতি মানুষ ভুলে নাই। আজকে বিএনপি কথায় কথায় আমাদের গনতন্ত্র শিখায়। নারায়ণগঞ্জে কোন বিএনপি নামক দলকে আমরা সন্ত্রাসী করতে দিবো না। সম্প্রতি ২১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাই স্কুল মাঠে মহানগর এবং জেলা বিএনপির জনসমাবেশে তিনি বলেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এখন একদফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব। তার এইে বক্তব্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সারাদেশে রাজপথ উত্তাল করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর এবং সকল থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রতিবাদে মিছিলের নগরীতে পরিনত করেছেন। বিএনপির এই নেতাকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। রীতিমত তারা রাজপথে নেমে মিছিলের মাধ্যমে পুরো জেলাতে এক উত্তাল পরিবেশ তৈরী করেছে। দলীয় সূত্রমতে জানা যায়, বিকেলে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন। জেলা আওয়ামী লীগের মিছিলে নেতৃত্বদেন সভাপতি আব্দুল হাই। একই সাথে এসময় মিছিলে এই বয়সে এসেও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আনিসুর রহমান দিপু স্লোগান তুলেন। এ যেন সেই আশির দশকের আন্দোলনের মত টকবগে তরুন যুবকে চলে গেছেন। তার স্লোগান নিয়ে স্থানীয় রাজনীতে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কেননা তিনি এখন যেই বয়সে আছেন সেই বয়সে রাজপথে নেমে আন্দোলন করার মত নয়। কিন্তু দলীয় সভানেত্রীকে হত্যার প্রতিবাদে মাঠে নেমে স্লোগান দিয়ে তরুন যুবকের মত বিক্ষোভ মিছিলে স্লোগান তুলেছেন। অথচ তার সমবয়সীয় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েও মাঠে নামতে দেখা যায় নাই সেই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিকে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের সকল থানায় উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল করেন। একই সাথে বিএনপির এই নেতাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তিদানের দাবী জানান তারা। দেখা যায় সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদলের নেতৃত্বে শহরে মিছিল বের হয়। বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। সেই সাথে মহানগর বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শওকত আলীর নেতৃত্বে মিছিল হয়, অপর দিকে সোনারগাঁ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাতের নেতৃত্বে মোগরাপড়া চৌরাস্তা মোড়ে প্রতিবাদ মিছিল হয়। তাছাড়া বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ফারাজি কান্দা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। পাশা পাশি সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের নেতৃত্বে চিটাগাং রোড সড়কে শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়। তাই আওয়ামী লীগের এই বিক্ষোভ মিছিলকে নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ গরম হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু বলেন, আজকে বিএনপি কথায় কথায় আমাদেরকে গনতন্ত্রের কথা বলে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তাদের ষড়যন্ত্র রাজপথে থেকে আমরা মোকাবেলা করবো। কেননা নারায়ণগঞ্জের মাটি বঙ্গবন্ধুর ঘাটি। এখানে কোন বিএনপিকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে দেয়া হবে না। তাদের রাজপথে প্রতিহত করা হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল বলেন, ‘যারা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা রাজপথে নেমে এসেছি, বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকবো। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচার না করলে রাজপথ ছাড়বো না।’ সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজপথের মধ্যে আমরা আজ জানিয়ে দিবো যে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ পিছিয়ে নেই। আমরা ওই সকল ব্যক্তিদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবো। কোন গোষ্টি আজ আমাদের নেত্রীকে হুমকি দিলে আমরা বসে থাকবো না। আগামী দিনে বিএনপির কোন ব্যক্তি যদি আওয়ামী লীগের কাউকে নিয়ে কটুক্তি করে তাহলে তার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, ‘বিএনপি; জামাতকে এদেশের রাজনীতিতে স্টাবলিশ করার কাজে লিপ্ত। ওরা রাজনীতির কোন পর্যায়ে পরে না। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, আর প্রতিবাদ করবো না। এসব কাজ করলে, যে যে অবস্থানেই থাকেন না কেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে।