আজ শনিবার | ১ মার্চ ২০২৫ | ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ | ২৯ শাবান ১৪৪৬ | বিকাল ৩:০৬

ওরা মানচিত্রে থাবা দিবে

ডান্ডিবার্তা | ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকাল পৌনে চার টা। ততক্ষণে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেইল গেইট এলাকার আওয়ামীলীগ কার্যালয় থেকে আশপাশের প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত শুধুই মানুষ আর মানুষ। পুরো নারায়ণগঞ্জ যেন সমবেত হয়েছে এক মঞ্চে। ‘বীর বাঙালী ঐক্য গড়ো, বাংলাদেশ রক্ষা করো’ আর জয় বাংলা শে¬াগানে প্রকম্পিত হচ্ছিল পুরো নগরী। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের জনসভা বলতে বিশাল সমাগম, এমনটাই ধারণা ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু সেই ধারণাকেও যেন পাল্টে দিয়েছে গতকাল শনিবারের জনসভা। নতুন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন শামীম ওসমান নিজেই তার আহবানে অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের এই জনসভাকে ঘিরে। এমনকি মঞ্চে যখন প্রধান অতিথি স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখনও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মী ও সমরথকরা মিছিল নিয়ে আসছিলেন জনসভায় যোগ দিতে। কিন্তু নগরীর মূল পয়েন্টে প্রবেশের সুযোগ না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছেন নগরীর শহীদ মীনার, সলিমুল¬াহ সড়কসহ আশপাশে। এই জনসভা উপলক্ষে তোরণ, পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে সারা শহর মোড়ানো হয়েছিল একদিন আগেই। সেই সঙ্গে গতকাল শনিবার সকাল থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল-স্লে¬াগানে সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল পুরো নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ শহর হয়ে উঠে উৎসব মূখর। পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে আবার কেউ লঞ্চে করে সোনারগাঁ, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দরসহ শজরের আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষ জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শামীম ওসমানের সমাবেশে যোগদেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় অস্থায়ী মঞ্চ থেকে শুরু হয় সমাবেশ। সাড়ে ৩টার আগেই জনস্রোতে সমাবেশস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শহরের একপান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। মহা সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। তিনি যখন বিকেল ৪টায় বক্তব্য দিতে শুরু করেন তখনও শেষ হয়নি মিছিল আসা। শহরের বিভিন্ন স্থান ততক্ষণে লোকে লোকারণ্য। এদিকে সমাবেশ জুড়ে ছিল বীর বাঙালি ঐক্য গড়ো, বাংলাদেশ রক্ষা কর স্লোগানের এক নতুন আওয়াজ। অনেকে এ আওয়াজকে দেশ রক্ষার আহ্বানের নতুন জাগরণ হিসেবে নিয়েছেন। সমাবেশে যখন শামীম ওসমান মঞ্চে উঠে এ শ্লোগান দেন তখন তার সঙ্গে পুরো জনসমুদ্র একই শ্লোগান দেন। এতে তার ঘোষিত সেই ঘণ্টা বেজে যায়, যা বার্তা দেয় দেশ রক্ষার। জনসভায় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শেখ হাসিনা শুধু আমাদের নেতা নন। শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতা, সারা বিশ্বে তার প্রশংসা। আমাদের দেশকে তিনি কোন জায়গা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেশ আজ চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে অনেক ক্রাইসিস আমরা মোকাবিলা করতে পারি। বঙ্গবন্ধুর আমলে জাহাজ ঘুরিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছিল। আজ আমরা সব দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট। আজ সে দেশের প্রেসিডেন্ট বলেন, যদি উন্নত হতে চাও বাংলাদেশকে অনুসরণ করো। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবো। আমার গর্ব করি, এই প্রজন্ম নিয়ে। স্মার্ট বাংলাদেশের মূল কারিগর হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সব সময় আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে। শামীম ওসমানের পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার সন্তানরা আজ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সাবমেরিন কেবল দিয়ে তথ্য পাচার হয়ে যাবে। আমাদের ডিজিটাল হওয়ার দরকার নেই। আজ সেই সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগে আমরা বিদেশে গেলে বলতো, তোমাদের পরে পাস দেব, অন্যদের আগে দিত। এখন আমরা বিদেশে গেলে মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আমরা বাংলাদেশের মানুষ। সমাবেশে শামীম ওসমান বলেন, ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল; আমাদের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখুন, তিনিই আমাদের স্বপ্ন। অক্টোবর নাগাদ ওরা মানচিত্রে থাবা দেবে, ক্ষমতায় আসার জন্য নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য ওরা এটা করবে। শামীম ওসমান বলেন, যারা বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে চায়, তাদের বলতে চাই, আমরা কারও পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াইনি। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে পার্টি অফিসে ঢুকে মনির ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা বিচার পাইনি। নিজের এই হাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে পঞ্চাশটা লাশ দাফন করেছি। অনেককেই কবরস্থানে নিয়ে যেতে পারিনি। শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, সেই সময় দেশি-বিদেশিরা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ওই বেঈমান শকুনরা ষড়যন্ত্র করছে। শামীম ওসমান আরও বলেন, বোমা হামলার পর আমি বুঝিনি যে, আমি বেঁচে আছি। আমাদের কী অপরাধ ছিল? খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পার্লামেন্টে আমাকে দেখে নেবেন। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশ, এই নারায়ণগঞ্জে আমাদের যারা ’৭৫ এর পর বড় হয়েছি, আমাদের জীবন প্যালেস্টাইনের যুবদকদের মতো হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দুই হাত উপরে তুলে কাঁদছিলেন। বলেছিলেন আমার বাবা-মাকে যেখানে মেরেছে, সেখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাই। তারা সেখানে নফল নামাজ পড়তে দেয়নি। যারা আমাদের জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে, তাদের সাথে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারব না। আমরা আমাদের বাংলাদেশকে বাঁচাতে চাই। নারায়ণগঞ্জে অনেকে আওয়ামী লীগ সাজতে চান, কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠে নামে না। মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমাদের বাসায় ফোন করেছিল। আমার মা সেদিন খুনি মোশতাককে বলেছিলেন, সে (শামীম ওসমানের বাবা) যদি আপনার মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়, প্রথমে চেষ্টা করব তাকে হত্যা করতে, নয়ত নিজে আত্মহত্যা করব। আমি সেটার সাক্ষী। মনসুর আলী যে রুমে ছিলেন, আমার বাবাও সেখানে ছিলেন। তাকে অজু পর্যন্ত করতে দেয়নি। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কায়সার হাসনাত, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা