বিজয় কেড়ে নিল একরাত্রে

শিরিনা আক্তার রীনা

সৃষ্টির সৌন্দর্য আর স্রষ্টার সৃষ্টি এক অপরুপ সুন্দর আর অনুরাগ অনুভবে মিশ্রিত। হাজারো লাখ – কোটি সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে সীমাহীন চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা ও কামনা বাসনা।এমনই এক অতৃপ্ত মনের হাহাকার আর প্রাপ্তির লোভনীয় মনোভাব প্রকাশ এই গল্পের। একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা আকাশ আর নীলা।দু’জন দু’জনকে ভালবাসে কতটুকু কেউ জানে না।প্রেম গিয়েছে কোন সীমানায় না অসীমে তাও জানে না। তবে নিঃসন্দেহে তারা স্বচ্ছ ও পবিত্র দু’জন প্রেম পিপাসু।নীলা বায়না ধরলো একদিন তার আকাশের কাছে “একরাত্রি ” যাপনের। নিঃস্বার্থ ভাবে উজাড় করতে চাইলো আকাশের বুকে নিজেকে।অনেক কাকতি-মিনতি,আকুলতা ও আবেগে একাকার “একরাত্রি “। আকাশ  ও সারা দিল ” একরাত্রি “যাপনের। চলছে আকাশের জল্পনা কল্পনা, কত কি উচ্ছ্বাস -উদ্দীপনা। ভালবাসার নীলা কে দিবে তার অনেক চাওয়া আর প্রতীক্ষার ” একরাত্রি “।লুকোচুরি আর লুকোচুরি, নানা রকমের সাজসজ্জা আয়োজন যেমনটি তার প্রিয়া চেয়েছে তার কাছে।কিন্তু সাধ্যের বাইরে ও যেতে পারছে না। কারন তারা দুজনেই মধ্যবৃত্ত আর মধ্যবৃত্তরা সব চাইলেও পায় না।কারন পাওয়া না পাওয়ার মধ্যেই চলে মধ্যবৃত্তের জীবন যাপন।চলছে কেনাকাটা চলছে পরিকল্পনা আরও কত কি স্বপ্ন বুনা। কি করবে কি ভাবে দু’জন দু’জনার সামনে নিজেদের প্রকাশ করবে আকাঙ্ক্ষার “একরাত্রি “। কে কতটা আদরে সাজিয়ে তুলবে এমন জল্পনা -কল্পনা শর্তহীন,, স্বার্থহীন অনেক চাওয়া পাওয়ার ” একরাত্রি “র বাসর রচনা।টাকা পয়সার ও যোগার হলো, কোথায় ” একরাত্রি “যাপন করবে তা-ও নির্ধারণ করা হলো।কিন্তু সবই আকাশ  একার প্রচেষ্টায় করে চললো।শুধু ভালবাসার মানুষের ইচ্ছে আর অনুরাগ অনুভবের মূল্য দিতে।প্রতিটা সত্যিকারের প্রেমিক মনে হয় এমনই হয়, নিজের মনের মানুষের সামান্য ইচ্ছেকে বিশাল করে গরে তুলে মনের  রাজ্যে।মৃত্যুর ভয় লোকলজ্জা আর অর্থসংকট  তোয়াক্কা করে না। অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে দুজনের জীবনে এলো অনেক প্রতীক্ষার ” একরাত্রি “।দুজনের চোখে মুখে স্বপ্ন পূরণের ঝলমলে হাসি। আর তখনই শুরু হলো পাকবাহিনীর হামলা। বাংলা মায়ের ওপরে ঝাপিয়ে পড়লো হানাদার বাহিনী। আকাশ  বাংলার বুকে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা আনবে বলে ” একরাত্রি ” ভুলে চলে গেল মুক্তিযুদ্ধে।দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ চললো বাংলা মায়ের বুকে।আকাশ ও হারিয়ে গেলো সমস্ত আশা আকাঙ্খা বুকে নিয়ে। ভুলে গেল অনেক চাওয়া পাওয়ার “একরাত্রি “। অনেক কিছু ঘটে গেল দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধে। আকাশ যুদ্ধ শেষে সবুজের বুকে লাল পতাকা  নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনলো ঠিকই। কিন্তু তার ভালবাসার মানুষটির” একরাত্রি ” ফিরে পেলনা।যুদ্ধ কেড়ে নিলো অনেক আকাঙ্খা  আর প্রতিক্ষার যত্নে সাজানো দুটি অবুঝ ও প্রেমময় প্রেমিক প্রেমিকার “একরাত্রি “। পরিশেষে বলতে হয় সব বিজয় ত্যাগের বিনিময়েই আসে।আর কিছু কিছু ত্যাগ খুবই কঠিন রুপ ধারন করে। আর তার বিনিময়ে কত মূল্য দিতে হয়েছে” একরাত্রি”র পরিবর্তে হাজারো “রাত্রি। “তারপরেও সর্বস্ব হারিয়ে আকাশের ঠোঁটে বিজয়ের হাসি বিজয়ের  উল্লাস। আর নীলা তখন নিঃশেষ হানাদার আর রাজাকারদের নিষ্ঠুর নির্যাতনে।ক্ষত বিক্ষত নীলার শরীর, মন, আর ভালবাসা।আত্মহনন ছাড়া যেন কোন উপায় নেই নীলার জীবনে।মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডেকে যাচ্ছে আকাশের সেই মিষ্টি নীলাকে।যে নীলা দিনের পর দিন কাটিয়ে দিত আকাশের চোখে তাকিয়ে হাত দুটো কে বুকে রেখে। আজ নীলার পাশে কেউ নেই নোংরা একটা শরীর ছাড়া। যে শরীরের ভার বহন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।চলছে নীলা অজানা গন্তব্যে আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে।হঠাৎ চুপিসারে পিছন থেকে দু’ হাতে ঝাপটে ধরে নীলা কে।এক টানে বুকে টেনে জরিয়ে ধরে নীলাকে আকাশ।মুখ থুবড়ে আকাশের বুকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে পাথর সম নীলা…… আহ্ কি নিদারুণ নিষ্ঠুর এই মিলন দুজনের। তুমি কোথায় ছিলে আমার ” একরাত্রি” র  প্রেয়সী।আকাশের বুকে মাথা রেখে শুরু হয় নীলার গল্প বলা।

বিজয় উপভোগ করা মানুষেরা কখনোই জানতে পারে না।এই বিজয় কতজনের কত কি কেড়ে নিয়েছে।