আজ শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ | দুপুর ১:৫৭

প্রয়াত সামসুজ্জোহা ছিলেন গণমানুষের নেতা

ডান্ডিবার্তা | ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

হাবিবুর রহমান বাদল

দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাÐারী প্রয়াত নেতা একেএম সামসুজ্জোহার ৩৭তম মৃত্যু বাষির্কী আজ। আজকের এই দিনে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সামসুজ্জোহার পাশাপাশি তিনবারের সাংসদ প্রয়াত নাসিম ওসমানের অভাবও অনুভব করছেন। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামসুজ্জোহার অগ্রণী ভ‚মিকা ছিল। বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতা একেএম শামসুজ্জোহা শুধু নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের অকৃত্রিম বন্ধুই ছিলেনা,  তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের আমৃত্যু বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ঠিক এই গুনটি নাসিম ওসমানের মধ্যেও ছিল। পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতি তার শুধু শ্রদ্ধাবোধই ছিল না, সেই সাথে সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকদের সুখ-দু:খের খবর রাখতেন নিয়মিত। যে গুনটি সামসুজ্জোহার মধ্যেও ছিল। নাসিম ওসমানের অকাল মৃত্যু নারায়ণগঞ্জে পেশাদার সাংবাদিকরা তাকে এখনো শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করেন। এদিকে তোষামোদকারীরা সব সময় কাজ না জেনেও নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারে ভাল ভাবে, যা কোন নিষ্ঠাবান, সৎ সাংবাদিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমানে তোষামোদের সাংবাদিকতা চলছে। এ অবস্থার অবসান না হলে শুধু সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং সেই সব রাজনীতিবীদরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যারা তোষামোদিতে তুষ্ট থাকেন। একেএম সামসুজ্জোহা তোষামোদি সাংবাদিকতা পছন্দ করতেন না। যে গুনটি নাসিম ওসমানের মধ্যেও ছিল। সামসুজ্জোহার মতো রাজনৈতিক কর্মকাÐ ও আন্দোলনের পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর নজির এখন তেমন চোখে না পড়লেও তৎকালীন সময়ে আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছি, তারা সব সময়ই একেএম শামসুজ্জোহার সানিধ্য ও সহযোগীতা পেয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে একেএম শামসুজ্জোহা রাতে যখন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফিরতেন তখন ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদেরকে বিভিন্ন অফিসে ঘুরে ঘুরে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে আসতেন বলে সেই সময়কার কর্মরত সাংবাদিক ভাইদের কাছে শুনেছি। আমি এ বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদের সুসময়ে পেশাদার সাংবাদিক ছিলাম না। যখন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেই তখন তিনি বিরোধী দলের নেতা। কিন্তু তার পরও যখনই তিনি সময় পেতেন ছুটে আসতেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পুরাতন ভবনটিতে। আর এসেই আমাদের খোঁজ খবর নিয়ে গল্প জুড়ে দিতেন। দিলখোলা মানুষ একেএম শামসুজ্জোহা আমাদের দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভীষন ধরনের দুর্বলতা ছিল। সময় পেলেই প্রেসক্লাবে এসে আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতেন। প্রয়াত সামসুজ্জোহা বিজয়ের মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধের উপর সংবাদ প্রকাশ করার জন্য উৎসাহিত করতেন। তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এসেই চিরাচরিত হাসি দিয়ে বলতেন একটু চা খাওয়াও। এর পর ৬ দফা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। এমনকি আওয়ামী লীগ কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো তা বলতেও ভুলতেন না। একেএম সামসুজ্জোহা স্বাধীনতার পর প্রথম বঙ্গকণ্ঠ নামে একটি আধুনিক মানের সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। যার সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান।
সর্বশেষ একেএম শামসুজ্জোহা সম্ভবত মৃত্যুর আগের বছর প্রেসক্লাবের আসেন কৃতি ছাত্রদের এক অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠান শেষে তার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে কিভাবে আহত হয়েছেন। ’৭৫-এর পরবর্তী ঘটনায় ৪ নেতাকে হত্যার সময় কিভাবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেন ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে। একেএম শামসুজ্জোহা তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে ছিলেন কিংবদন্তি। তিনি তার  রাজনৈতিক জীবনে এমন কি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত শুধু দিয়েই গেছেন। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পকেটে টাকা নিয়ে বের হলেও যখন ফিরতেন তখন পকেট খালি হয়ে যেত। কোন নেতা কিংবা কর্মীর বাড়িতে চুলা জ্বলেনি তা নিজে খোঁজ খবর নিয়ে বাড়িতে টাকা পৌঁছে দিতেন। এমন কি জোহা সাহেবের দুর্দিনেও কোন নেতাকর্মী খালি হাতে তার কাছ থেকে ফিরেছেন এমন নজির নেই। একেএম সামসুজ্জোহা ৩৭তম মৃত্যু বাষির্কীতে ডান্ডিবার্তার পক্ষ থেকে তার বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই শ্রদ্ধা। প্রার্থণা করি আল্লাহ্ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন। আমীন। অথচ ইদানীংকালের নেতাদের অবস্থা বিপরীত। নেতারা আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘরে বসে থাকেন। হরতালের সময় পাঞ্জাবী কিংবা শার্টে ময়লা লাগবে মনে করে ক্যামেরাম্যানদের সামনে ফটোসেশন করে নেতাকর্মীদেরকে রাজনৈতিক ময়দানে একা ফেলে রেখে ঘরে ফিরে যান। এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত বলে দলের নেতাকর্মীদের অভিমত।
সম্প্রতি এক নেতা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, জোহা ও চুনকার মতো নেতাদের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুর্দশা কাটবে না। বর্তমান নেতাদের উচিত তাদের  আদর্শকে অনুসরণ করা। তাদের সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলের ভীত মজবুত করলেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রামে সফল হবে। তাই বর্তমান নেতাদেরকে প্রয়াত দু’নেতার সংগ্রামী জীবন ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি। কারণ তারা সাংবাদিকদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতেন আর আজকের কোন কোন নেতা সন্ত্রাসীদের উস্কে দেন সাংবাদিকদের পেটাতে। বর্তমানে সংবাদকর্মীদের অনেক রাজনৈতিক নেতা-ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন। অথচ জোহা সাহেবের মতো নেতারা নারায়ণগঞ্জের সংবাদকর্মীদের সুখে দুঃখে কাছের মানুষ হিসাবে শামসুজ্জোহা আমৃত্যু কাছে টেনেছেন। অথচ এখনকার অবস্থা যে ভিন্ন। তা বলার অপেক্ষা রাখে না।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৫৭
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৫
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২
  • ১১:৪৭
  • ১৫:৩৬
  • ১৭:১৫
  • ১৮:৩১
  • ৬:১৬
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা