আন্দোলনে নেই বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ
ডান্ডিবার্তা | ০৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষঢ়ায় শহীদ জিয়া হলে রাতের আঁধারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হলেও বিএনপির নেতারা শুধু বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তারা এখনো শহরে কোন প্রকারের প্রতিবাদ মিছিল বা আন্দোলনের রূপ রেখা দেখাতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু ম্যূরাল ভাঙ্গার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক চাষাড়ায় অবস্থিত জিয়ার শেষ স্মৃতি জিয়ার হলের ম্যূরাল ভাঙ্গা পরির্দশন করেন মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। আর সেখানে থেকে তারা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য এ.কে এম শামীম ওসমানকে ম্যূরাল ভাঙ্গার নীল নকশাকারি আখ্যা দিয়ে ক্ষান্ত হয়ে পরেন।
কিন্তু সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে একত্রিতভাবে রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। যা নিয়ে হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে জেলা জুড়ে। তাছাড়া বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলছে, তারা কঠোর আন্দোলন পালনে মাঠে নেমে যে পরিমানে নির্যাতিত হয়েছে যা নিয়ে এখনো সকলেই আতঙ্কিত যার কারণে এখন বড় আকারে রাজপথে
জমায়েত হয়ে ম্যূরাল ভাঙ্গার প্রতিবাদ করতে পারছে না বিএনপির নেতাকর্মীরা। অপর দিকে ঘটনার ২ দিন পেরিয়ে গেলে ও এখনো জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের পেইডে বা রাজপথে একত্রিত হয়ে কোন প্রকারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়নি। তা ছাড়া মহানগর বিএনপির দেওয়া ৭২ ঘন্টার মধ্যে জিয়ার ম্যূরাল কি আবারো পূর্ণরূপে ফিরে যাবে তা নিয়ে ও রয়েছে নানা সংশয় কারণ তাদের এই ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি
হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, তারা নাকি ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণ ও আমি তাদের আল্টিমেটামের শক্তি দেখতে চাই। তার এমন বক্তব্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা লড়ে চড়ে বসে আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের আওয়ামী লীগ নেতারা ও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। তারা জিয়ার ম্যূরাল ভাঙ্গার বিষয়ে কোন প্রকারের মন্তব্য করতে চাচ্ছে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দুষলেও সেখানে কোন প্রকারের হস্তক্ষেপ করছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা। এদিকে বিএনপির অভিযোগকৃত আওয়ামী লীগের সেই সাংসদ সদস্য ও এই ম্যূরাল ভাঙ্গার দায় তার কাঁধে দিলে ও
তিনি নিতে চাচ্ছে না। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলছেন, এটি বিএনপির নেতাকর্মীরাই ভেঙ্গে আমাদের উপরে দায় চাপিয়ে দিতেচাইছেন। এদিকে আল্টিমেটামের ২৪ ঘন্টার বেশি পাড় হয়ে গেলে ও এখনো কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়া নেই। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল দুই দলের নিরবতায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে নগরজুড়ে। জানা গেছে, এর আগে গত ৪ ফেব্রæয়ারি জাতীয় সংসদে নিজ ভাষণে নারায়ণগঞ্জে জিয়া হলের জায়গাটিতে মাঠ তৈরি করে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার স্মৃতি হিসেবে ছয় দফা মঞ্চ করার প্রস্তাব দেন। সেই ভাষণে শামীম ওসমান বলেন, যারা জাতির পিতার ছয় দফার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেই সিনিয়র নেতারা এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, জাতির পিতা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। সেটা একটি ‘বালুর মাঠ’ নামে মাঠ ছিল। সেখানে ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওটার স্মৃতি মুছে দিতে ‘নারায়ণগঞ্জ মিলনায়তন’ নামে একটি অডিটরিয়াম করেন। আমরা বাধা দিয়েছিলাম, মার খেয়েছিলাম, আমাদের মধ্যে অনেকে জেলেও
গিয়েছিল। কিন্তু আমরা ঠেকাতে পরিনি। এরপর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেটাকে আবার ‘জিয়া হল’ নাম দেন। তিনি বলেন, এই জায়গাটি হচ্ছে জেলা প্রশাসকের অধীনে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের দাবি, জাতির পিতার পদচিহ্ন ওখানে পড়েছিল। ছয় দফা আমাদের স্বাধীনতার সনদ ছিল। ওখানে নারায়ণগঞ্জে আপনার তত্ত¡াবধানে, জেলা
পরিষদের মাধ্যমে ওইখানে একটি ভবন হোক এবং সেই ভবনের নাম ‘ছয় দফা ভবন’ রাখা হোক। এরপরে গত ১৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমার বাবা এ কে এম সামসুজ্জোহা ৩৭ বছর আগে মারা গিয়েছেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে বুকে গুলি খেয়েছেন। যার কথা বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে বার বার লিখে গেছেন। জাতির পিতার কন্যাও তার বক্তব্যে যার কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ৬ দফা আন্দোলনের যে সমাবেশ হয়েছিল নারায়ণঘঞ্জ টাউন হল ময়দানে সেটার সভাপতিত্ব করেছে আমার বাবা সামসুজ্জোহা।আমি ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জে ৬ দফা মঞ্চ করব। দলমত নির্বিশেষে সেখানে নারায়ণগঞ্জের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে সঠিক ইতিহাস জেনে আমাদের প্রতি সম্মান দেখায়। জিয়া হলকে নিয়ে সরকার দলীয় সাংসদের একের পর এক বক্তব্যের পরেও এর প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোন নেতা এ নিয়ে কথা বলেননি। এ ঘটনার প্রতিবাদও জানাননি। তাছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছে, এমপি শামীম ওসমান দীর্ঘদিন যাবৎই জিয়া হল নিয়ে নানা বক্তব্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তখন বিএনপিরনেতাকর্মীরা নিশ্চুপ থাকায় আজকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ
জিয়ার ম্যূরালে আঘাত পরেছে। এদিকে আঘাতের পর ও যে বিএনপির রাজপথে নেমে এটার প্রতিবাদ করবে সেই ক্ষমতা ও নেই তাদের। যা
নিয়ে বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পরছেন। সকলেই
বলছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার শেষ স্মৃতির উপরে আঘাত আসলে ও
যেহেতু কোন প্রকারের প্রতিবাদ হয় না। তাহলে বিএনপির নেতা বা
কর্মীদের উপরে আঘাতের প্রতিবাদ কতুটুক হবে সেটা নিয়ে ও
প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।