গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘসময় রোদে না থাকার পরামর্শ
ডান্ডিবার্তা | ০৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
রমজানের শেষ সময়ে এসে বেড়েছে তাপমাত্রা। গত কয়েকদিন ধরেই
বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। রোজা রেখে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে চাকরি,
ঈদের কেনাকাটা ও নানান কাজে। তবে ঘর থেকে বের হয়েই তীব্র
দাবদাহে অস্বস্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ঘরে থাকা মানুষেরও গরমে
হাঁসফাঁস অবস্থা। এরই মধ্যে ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগে হিট
অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যাও। প্রচÐ গরমে কর্মজীবী ও
শ্রমজীবী মানুষের বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে। একটুতেই
শরীর ঘেমে ভিজে উঠছে। তবে রোজার সময় হওয়ায় দিনের বেলায় পানি
পানের সুযোগ পাচ্ছেন না রোজাদাররা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত
ঘাম ও তীব্র রোদে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই জরুরি
প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ
দিয়েছেন তারা। হিট স্ট্রোক হচ্ছে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে
তৈরি হওয়া এক ধরনের জটিলতা। গরমে অতিরিক্ত ঘামলে মানুষের শরীর
ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। এর ফলে ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক, কলেরা,শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, সর্দি-জ্বর, হাঁপানি, গ্যাসের
সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ত্বকে সমস্যাসহ নানান ধরনের
অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও
অন্তঃসত্ত¡াদের এ ঝুঁকি বেশি। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮
ডিগ্রি ফারেনহাইটের কিছু বেশি। এটি ১০৪ ডিগ্রি
ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলেই হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সমস্যায়
তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
দীর্ঘসময় রোদে থেকে কাজ করেন রিকশাচালক ও ফুটপাতের
দোকানিরা। তীব্র তাপের কারণে বেশি ভুগছেন তারা। হাসান নামের
এক রিকশাচালক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পেটের দায়ে বের হতে হয়।
শুরুতে রোজা রেখে রিকশা চালিয়েছি। এখন যে গরম কাজ করে রোজা
রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রচুর পানির পিপাসা লাগে, গলা শুকিয়ে
আসে।’ ফতুল্লা লিংক রোড এলাকায় ফুটপাতে জিন্সের প্যান্ট বিক্রি
করেন আজাদ বলেন, ‘দিনে ক্রেতাদের ভিড় কম থাকলেও দোকান খোলা
রাখতে হয়। বাইরে যে রোদ, কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ প্রচÐ গরম মানুষের জন্য
কোন ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে- এমন প্রশ্ন ছিল প্রখ্যাত
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং
ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহর কাছে। তিনি বলেন,
‘যখন শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫ এর উপরে উঠে যায়, তখন
শরীরে ঘাম হয় না; মাথাব্যথা হয়, অস্থিরতা দেখা দেয়, বমি বমি ভাব
দেখা দিতে পারে, লাল র্যাশের মতো দেখা দেয়। এছাড়া বুক ধড়ফড়,
শ্বাসকষ্ট, শরীরে ক্লান্তিভাব দেখা দেয়, চোখে ঝাপসা দেখা যায় এবং
অবসাদ হয়। একসময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায়
অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সঙ্গে সঙ্গে
চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘প্রচÐ
গরমে মানুষের বিভিন্ন ধরনের অসুখ, সর্দি-কাশি, জ্বরও হচ্ছে। এর
সঙ্গে প্রচÐ গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও যুক্ত হয়েছে। হিট
স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত তাদের বেশি যারা দীর্ঘসময় রোদে থাকেন।
এছাড়াও বয়স্ক এবং যারা ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন
ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের ঝুঁকিও কোনো অংশে কম নয়।’ গরমে
রোজা রেখে যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে অধ্যাপক ডা. এবিএম
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যারা রোজা রাখেন তাদের ইফতারের পর প্রচুর পানি ও
শরবত খেতে হবে। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে
হবে। শরীরে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে লবণ মিশ্রিত পানি খেলে
ভালো হয়, বিশেষ করে স্যালাইন খেতে হবে। বেশি গরমের সময় ব্যায়াম
বা ভারী কায়িক পরিশ্রম বর্জন করা ভালো। আর যারা কায়িক পরিশ্রম
করেন তারা যেন কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নেন। তবে গরমে বাইরে বের নাহওয়াই ভালো। যদি কাজের প্রয়োজনে বাইরে বের হতেই হয় তাহলে যেন
আরামদায়ক কাপড় পরে এবং ছাতা নিয়ে বের হন। এছাড়া গরমে শিশু ও
বয়স্কদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে।’ প্রচÐ গরমে
রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ
(আইসিডিডিআর’বি) হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক
রোগী আসছেন হাসপাতালে। গত ৯ দিন ধরেই এ হার বাড়ছে বলে
জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও
ইনস্টিটিউটেও বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা
জানান, শীতকালের তুলনায় গরমকালে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে
যায়। এসময় জ্বর, ডেঙ্গু, ডায়রিয়াসহ শিশুদের নানান রোগ বেড়ে
যায়। শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা.
জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনের গরমে
শিশুদের ডায়রিয়াসহ ঠান্ডা-জ্বর, নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের
রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। গরমকাল আসলে মা-বাবাদের একটু
সচেতনভাবে শিশুদের পরিচর্যা করতে হবে। রোদে বের হতে দেওয়া যাবে
না। এসময় শিশুদের ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন,
গ-ুকোজ এবং পুষ্টিকর রসালো ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীর
থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া
বিশুদ্ধ ও ফোটানো পানি পান করতে হবে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর বা
পচাবাসী খাবার খাওয়া যাবে না।’