রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় চার ঘন্টার অভিযান

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
রূপগঞ্জে বরপা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি চার তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩টি বোমা উদ্ধার করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ৪ তলা ভবনের ৩য় তলার একটি এপার্টমেন্ট থেকে বোমাগুলো উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে এটিইউ বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা বাড়ির সামনে ফাকা জায়গায় বোমাগুলো এক এক করে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তবে এ অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। সকাল থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে এটিইউয়ের সদস্যরা। এটিইউর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, চারতলা ভবনটির মালিক সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেন। তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট টার্গেট করে অভিযান চলানো হয়। এখানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা আস্তানা গেড়েছে বলে তথ্য ছিল। অভিযান শুরুর আগে ছানোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, “গত ৮ ও ৯ জুন নেত্রকোণা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের একটি দোতলা বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার কক্সবাজার থেকে এক নারী জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। “পরে ওই নারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের বরপা আড়িয়াবো এলাকায় চিহ্নিত করা হয় চারতলা এ ভবন। সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়িটি ঘেরাও করা হয়। তিনি বলেন, “এ ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ‘বোমা তৈরিতে এক্সপার্ট’ এক ব্যক্তিরও অবস্থান রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। অভিযান শুরুর আগে বাড়ির সব সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। ভবনটির নিচতলার ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, তিনি তিন বছর আগে এ বাড়িতে ভাড়ায় ওঠেন। ভবনের মালিক জাকির হোসেনের পরিবারের কেউ এ বাড়িতে থাকেন না। তিন মাস আগে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া ওঠেন। তাদের পরিবারে চারজন সদস্য; স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান। মধ্য বয়সী গৃহকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত তিনদিন ধরে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ রয়েছে। গত তিনমাসে সন্দেহজনক কোনো গতিবিধি নজরে পড়েনি বলে জানিয়ে শাহনেওয়াজ বলেন, “সকালে পুলিশের লোকজন বাড়ি ঘিরে রেখেছে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পরে তারা এ ভববনে জঙ্গির উপস্থিতির কথা জানিয়েছে এবং আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে নিরাপদে বের করে আনছে। এটিইউর সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) মাহফুজুল আলম রাসেল অভিযানের বিষয় নিশ্চিত করেন। রাসেল বলছিলেন, “গত সোমবার রাতে কক্সবাজার থেকে এক নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাড়িটি চিহ্নিত করা হয়। ঘটনাস্থলে এটিইউ ও সোয়াট টিম ছাড়াও রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সদস্যরাও রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) হাবিবুর রহমান বলেন, জাকির হোসেন নামে এক সৌদি প্রবাসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রূপগঞ্জের বরপা আড়িয়াব এলাকায় এসে চারতলা বাড়ি করেন। পুরো বাড়িটিতে ভাড়াটিয়ারা বসবাস করেন। তিনি আরো বলেন, চার ঘন্টার এই অভিযানে এটিইউ ও সোয়াটের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ি থেকে তিনটি শক্তিশালী বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, “অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ভবনটি ঘিরে রাখার খবরে জেলা পুলিশের সদস্যরা সেখানে অভিযানে অংশ গ্রহণ করে। এসপি মো. সানোয়ার হোসেন আরো বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল এখানে একাধিক জঙ্গি সদস্য থাকতে পারে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এই বিল্ডিংটি শনাক্ত করি। আমরা বৃষ্টিতে বিঘিœত হয়েও এই বিল্ডিংকে ঘেরাও করি। আমরা বিল্ডিয়ে ইভাকুয়েট (খালি) করছি। এরপর আমরা এখানে স্পেসিফিক কেউ আছে কিনা জানতে পারবো। কোন রুমে আছে বা আছে কিনা এখনো। আমাদের কাছে থাকা তথ্য মতে কিছু সরঞ্জাম আছে তাদের কাছে সে খুঁজবো। এখানে যে আছে সে একজন প্রশিক্ষক। তার কাছে বোম সংক্রান্ত বিষয়ে জানা শোনা আছে। সেই প্রস্তুতি রেখেই আমরা বাড়ি খালি করছি। আমরা বাড়ির গ্যাস লাইন ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেই। তারপর আমাদের সোয়াট টিম ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালিয়ে ৩টি তাজা বোমা উদ্ধার করে। তবে ভিতরে কাউকে পাওয়া যায়নি।