ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আমার একটা মাত্র নাতি। ঘুমের থাইক্কা আমার নাতিডারে ওরা তুইলা আনলো। আমার নাতি তো ছাত্র না। কোন রাজনীতিও করে না। জোগালি কাজ কইরা আমারে খাওয়ায়। ওরে ধইরা আনলো কে পুলিশ! এমনই বিলাপ করে কান্না করতে দেখা যায় আদালতপাড়ায় গ্রেফতারকৃত আরিফের দাদীকে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় পুলিশের করা নাশকতা মামলায় সোনারগাঁ ও বন্দর থানার বিভিন্ন গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বজনদের গত রবিবার দুপুরে দেখা যায় আদালতপাড়ায় আহাজারি। সোনারগাঁ থানার নোয়াগা ইউনিয়নের জয়নাল মিয়ার ছেলে আরিফ(১৮)। পেশায় একজন রাজমিস্ত্রির সহকারী জোগালি। দাদী আর নাতি মিলেই আরিফের পরিবার। আরিফের আয়ের নির্ভর করে তাদের দুইজনের সংসার চলে। আরিফের দাদী জনু বিবির ভাষ্যমতে, আরিফ কোন রাজনীতি দলের সাথে সম্পৃক্ত না। সে কোন শিক্ষার্থীও না। দিন আনে দিন খায়। গত ২৩ জুলাই রাতে ঘুমন্ত আরিফকে বাসা থেকে তুলে আনে পুলিশ। কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। একয়দিন সে তার নাতিকে একবারও দেখেনি। আন্দোলনের দিনেও আরিফ রাজমিস্ত্রির সাথে কাজ করেছে। সারাদিন কাজ করে শরীরটা ভালো না লাগায় ঘুমিয়ে পড়ে বাসায় এসে। ঘুমন্ত আরিফকে পুলিশ গিয়ে তুলে নিয়ে আসে। আমি এখন খামু কি। আমার নাতি ছাড়া তো আর আমারে খাওয়ানোর কেউ নাই। আমার এতিম নাতিটারে কেন তোরা তুইলা আনলি রে। আমার নাতি তো তোগো কিছু করে নাই। কারো কোন ক্ষতিও করে নাই-এভাবেই বিলাপ করে আরিফের দাদী বলতে থাকেন। এসময় নাশকতা মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামীর মা আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে বলতে দেখা যায়। আল্লাহ তোগো বিচার করবো। তোগো বিচারের দিন আইসা পড়ছে। তোরা বিনা অপরাধে মানুষদের গ্রেফতার করতাসস। আমার পোলায় তো তোদের কিছু করে নাই। আল্লাহ তোগো বিচার করবো। খুনি হাসিনা আল্লাহ তোর বিচার করবো। এভাবে নিরাপরাধ মানুষদের এনে হয়রানি করতাস। আর কতদিন জুলুম করবি। জুলুমের শেষ সময় চলে আসছে। আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। এভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা থেকে নাশকতা মামলায় গ্রেফতার করা আসামীদের আদালতপাড়ায় স্বজনদের বিলাপ দেখা যায়। আদালতপাড়ায় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হতে দেখা যায়। চোখে-মুখে কষ্টের ছাপ নিয়ে সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে বসে ছিলেন বৃদ্ধা করিমন বেগম। কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে, মুহুর্তের মধ্যেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে শুরু করে তার। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার পোলায় কোন রাজনীতি করে না। আগেও করে নাই। গাড়ি চালাইতে গেসিলো, ধইরা লইয়া গেসে। আমার পোলাডাই আমার শেষ আশা ভরশা।’ তার ছেলে মো. হাসান (৩০)। দীর্ঘদিন ধরে বাস চালিয়ে সংসার চালাতো সে। পিতা হাবিবুল্লার মৃত্যুর পর খুব ছোটবেলা থেকে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া শুরু করে হাসান। সে ছাড়া পরিবারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই বলে জানান করিমন বেগম। হাসানকে ২৫ জুলাই রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশের দায়ের করা সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়। কোন ভাবে জানতে পেরে, পরের দিন ২৬ জুলাই থানায় গিয়ে ছেলের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হন বৃদ্ধা মা। সকাল থেকেই মায়ের সাথে বড় ভাই হাসানকে জামিন করাতে আদালতে ঘুরছে ছোট ভাই কবির। সে সিদ্ধিরগঞ্জের এক মাদ্রাসার ৯ম শ্রেনিতে পড়ালেখা করছে। করিমন বেগম জানান, ‘৭বছর বয়স থেকাই পরিবারের লেগা কাজ শুরু করে হাসান। প্রায় ১০ বছর ধইরা বাস চালাইয়া পরিবার চালায়। সে তো কোন রাজনীতি করে না, তাকে কেন ধইরা নিয়া আইলো জানি না। আমার শ্বশুর ১ শতক জায়গা ৩ ভাইরে দিয়া গেসে। সেখানেই আমরা থাকি। সে ছাড়া তো আমগো পরিবারে উপার্জন করার কেউ নাই। উকিল কইলো জামিন হইতে পারে। দেহি আল্লাহ কি করায়।’ গতকাল সোমবার করিমন বেগমের মতো অনেকেই নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে নেওয়ার পর তাদের প্রিয়জনকে খুঁজতে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে আদালত প্রাঙ্গন। একই থানার মামলায় ২৬ জুলাই রাতে রূপগঞ্জের চনপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাদির (৩৫)কে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত কাদির পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। পিতার নাম আব্দুল মুজিদ। কাদিরের বড় বোন পারভিন জানান, গত শুক্রবার রাতে আমার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসছে। তাকে বিএনপির লোক বলে চালান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জ পুলিশ কইলো, তারা নাকি আমার ভাইকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পাঠাইছে। এখনো থানায় যাই নাই, আগে কোর্টে আসছি। এখনো কোন খোঁজ পাই নাই। এখানে না পাইলে থানায় গিয়া জিগামু। আমার ভাই কোন রাজনীতি করে না।’ এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় আরও বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে। তাদের অভিযোগ অনেকটা এমনই। তারা সবাই নি¤œ আয়ের মানুষ বলে দাবি করছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই বলেও জানান তারা। প্রিজন ভ্যানে করে আসামীদের কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পরেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে, ২৯ জুলাই দুপুর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি থানায় ২৯টি মামলা হয়েছে; যেখানে পাঁচ হাজারের বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হাবিবুর রহমান বাদল বাংলাদেশের স্বৈরশাসকের পতনের ৪০ দিন পার হলো। এ লেখা যখন লিখছি, তখন আওয়ামী শাসনের ৪০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটে। ছাত্ররা কোটা বাতিলের দাবিতে প্রথমে আন্দোলনে নামলেও পরবর্তিতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম আর লুটপাটের অবসান দাবি করে আন্দোলন বেগবান করে। এই আন্দোলনে এক সময় ছাত্রদের সাথে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ঘুষ. দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের কারনে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলে মুখ খুলতে পারেনি। জুলাই বিপ্লবের পর তাদের প্রত্যাশা ছিল সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তবর্তিকালিন সরকার গঠনের পরও চাঁদাবাজদের দৌরাত্বের অবসান হয়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ধাক্কায় কেবল চেহারা আর নামের বদল ঘটেছে, চাঁদাবাজি বন্ধ […]
হাবিবুর রহমান বাদল: সাংবাদিকতার নামে দলবাজি করলে শেষ পরিনতি কি হয় মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মোজাম্মেল হক বাবুকে নিয়ে আলোচনা করার তেমন কিছু নেই। মাঠ পর্যায়ে কিংবা ডেক্সে সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা তার না থাকলেও একজন মেধাবী মানুষ হিসাবে তাকে বলা চলে। মোজাম্মেল বাবু কবে কোথায় সাংবাদিকতা করেছেন তা জানা না থাকলেও […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯