আজ মঙ্গলবার | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১ | ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ | রাত ২:৩৯

আ’লীগের পরিনতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে

ডান্ডিবার্তা | ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১:৪০ অপরাহ্ণ

হাবিবুর রহমান বাদল
এক সাগর রক্সের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে কোন প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি তথা বৈষম্য থাকবেনা এমনটা প্রত্যাশা ছিল প্রতিটি বাঙ্গালীর। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশবাসীর সেই প্রত্যাশা পূরন হয়নি। দুর্নীতি, অপশাসন আর দলীয় করণের মাধ্যমে দেশকে তলানীতে নিয়ে যায় আওয়ামীলীগ। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ছিল পতিত আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ। আওয়ামীলীগ বিরোধীদের দমন পীড়নের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে দলীয় করণ এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, যে কারণে দেশের সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ এই জনতাকে সরকারের দু:শাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি রাজপথে নামাতে বার বার ব্যর্থ হয়। আওয়ামীলীগ বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের সর্বত্র দুর্নীতি আর লুটপাট চালায়। ক্ষমতা আকড়ে রাখতে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এহন কোন কর্ম করে নাই যার ফলে দেশকে চরম বিপর্যয়ের পথে নিয়ে যায়। যে কারণে দেশবাসী ফুসে উঠে। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আপামর জনসাধারণ এমনকি স্কুলের ছোট শিশুরাও রাজপথে নেমে আসে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থকতে একের পর এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলনকারীদের দমনে গণহত্যার নিদের্শ দেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে উঠে যে, শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে রুখতে পুলিশের গুলি শেষ হয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ৫ আগষ্ট দুপুরে অনেকটা গোপনেই দেশ থেকে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার এই বর্বরতা ও পালিয়ে যাওয়া আগামী প্রজন্ম এনিয়ে নতুন করে গবেষনা করবে। আর তাই সাধারণ মানুষ ৫ আগষ্টকে শেখ হাসিনার পলায়ন দিবস হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। আজ ৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা তথা তার অনুসারিদের পলায়নের মাস পূর্তি। এর আগে বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম চরম পরিনিতির দিকে গেলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী সরকার দমন পীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মতকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। এর কারণ আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে রাজপথে আওয়ামী বিরোধী অনেক নেতা কর্মী প্রাণ দিয়েছে। হামলা-মামলার শিকার হয়েছে। গুম হয়েছে শত শত নেতাকর্মীসহ বিরোধী মতের অনেকে। মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা বাংলাদেশে ছিল না বললেই চলে। এ অবস্থায় কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে ছাত্র সমাজ মাঠে নামে। ছাত্রদের ঐক্য এমন এক পর্যায়ে পৌছে যে, দেশের সকল ছাত্র সমাজ এক প্রকার সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে রংপুরের আবু সাঈদ বুক পেতে দিলে বুলেট বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। আবু সাঈদ দেশবাসীকে জানান দিয়ে যান, আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন দেশের সকল স্তরের বৈষম্য দুর করেই ছাড়ব। একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্ররা যখন সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে তখন সাধারণ জনতা ছাত্রদের সাথে একাত্ব হয়ে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেয়। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। আবু সাঈদের মত মুগ্ধ’র মৃত্যু সাধারণ মানুষকে নাড়া দেয়। ঘর থেকে সন্তানের টানে মায়েরা বেরিয়ে এসে আন্দোলনকে বেগবান করতে উৎসাহিত করে। এভাবেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহ¯্রাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়। তবে অনেকে এই শহীদের সংখ্যা আরো কয়েকগুন বেশী বলে দাবি করেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ মূহুর্তে ৪ আগষ্ট গণভবনে শেখ হাসিনা তার বিশ^স্ত কয়েকজন মন্ত্রী ৩ বাহিনীর প্রধান এবং পুলিশ প্রধানকে ডেকে আন্দোলন দমাতে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিলে সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের বিপক্ষে না দাঁড়ানোর অবস্থান জানিয়ে দেন। ঐ সময় তৎকালিন পুলিশ প্রধান স্বীকার করেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। তাছাড়া আন্দোলন দমাতে পুলিশের কাছে এখন আর কোন গুলি অবশিষ্ট নেই। ৫ আগষ্ট সকালেই পরিস্থিতি সম্পূর্ন ভাবেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে শেখ হাসিনা ও তার বোন রেহানাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এভাবেই একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আরেক স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে। যেই অভ্যুত্থানকে আমি বলি ছত্রিশ জুলাই বিপ্লব। সেই বিপ্লবের মাধ্যমে আরেক নতুন বাংলাদেশ যেন শুরু হয়। ড. ইউনুস ছাত্র-জনতার দাবির প্রতি সন্মান দেখিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতি প্রদান করেন। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গী সাথি অনুচর এমনকি বাইতুল মোকারমের খতিবও পালিয়ে যায়। আজকের এই দিনটি শুধু ছাত্র-জনতার বিপ্লব বললে ভুল বলা হবে বরং ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে পলাতক দিবস হিসাবে চিহিৃত হয়ে থাকবে বলে মনে করি। ৫ সেপ্টেম্বর সফল বিপ্লব ও শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের পলায়নের মাস পূতি আজ। ভারতে পালিয়ে গিয়ে পতিত সরকারের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নিশ্চুপ বসে নেই। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ ষড়যন্ত্রে মদদ দিয়ে চলেছে আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ট হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার। প্রথমে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষনে ব্যর্থ হয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে জুডিশিয়াল ক্যু করার অপচেষ্টা চালায়। এতেও ব্যর্থ হয়ে বিডিআর বিদ্রোহের মত আনসারদের দিয়ে আরেকটি আনসার বিদ্রোহের চেষ্টা করে। দুটি ষড়যন্ত্রই ছাত্র-জনতা ব্যর্থ করে দেয়। এর আগে সংখ্যালঘুর নির্যাতনের কাল্পনিক গল্পটি প্রকাশ হয়ে যায়। এখনো পতিত সরকারের দোসররা অন্তর্বতিকালীন সরকারকে খুব একটা সহযোগিতা করছে তা বলা যাবে না। আমলাদের মধ্যে অধিকাংশই বিগত ১৫ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ফ্রিস্টাইলে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। অফিস আদালত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। রাষ্ট্রের এমন কোন সেক্টর নেই বিগত ১৫ বৎসরে যাকে দুর্নীতি গ্রাস করেনি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বিগত সময়ে রাজপথে থাকা নীপিড়ন নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রকাশ্যে অন্তর্বতিকালীন সরকারকে সহায়তা করতে হবে। ৫ আগষ্টের পর যেভাবে হামলা-মামলা চলছে তা কোন অবস্থাতেই সমর্থন যোগ্য নয়। কারণ দেশের মানুষ শান্তিতে থাকার জন্য দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে যাতে থাকে এ জন্য দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যেমন ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে তেমনই চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। অপরাধীর বিচার হউক এটা সবাই চায়। কিন্তু মামলা দিয়ে আওয়ামী সরকারের মত আন্দোলনের অংশিদাররা যেন অজনপ্রিয় না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ হিংসা হিংসাকেই বাড়িয়ে তুলে। তাই বিএনপিসহ যারা দীর্ঘদিন যাবত রাষ্ট্রের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছে তাদেরকে যেন পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগারদের মত না হয় সেদিকে সকল গণতন্ত্র মনা রাজনৈতিক দলগুলিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আওয়ামীলীগের মত দলের গ্রাম পর্যায়ে নেতাকর্মী সমর্থক থাকার পরও দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি আর দেশের অর্থ সম্পদ লুটপাটের কারণে যিনি দম্ভ করে বলেছিলেন, আমি কখনো পালাবো না। সেই শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের পথে ফেলে এক কাপড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। রাষ্ট্রের সর্ব্বেক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলকে অন্তর্বতিকালীন সরকারকে সহযোগিতাসহ সাধারণ মানুষের মনোভাব বুঝে রাজনীতি করতে হবে। না হলে ইতিহাস থেকে আবারো আওয়ামীলীগের মত জনবিরোধী কর্মকান্ড করলে তাদেরকে ইতিহাসের সেই আস্তাকুড়েই নিক্ষিপ্ত হতে হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:২৭
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৮:০৬
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৩২
  • ১১:৫৭
  • ১৬:১৯
  • ১৮:০৬
  • ১৯:২০
  • ৫:৪৪
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024