ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দলটি এখন নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে। অথচ গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরপূর্তি পালনেও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। কিন্তু মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর শীর্ষ নেতারাও অনেকে দেশ ছেড়েছেন। আবার কেউ কেউ ‘দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে’ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া নেতাদের মধ্যে এখনো যারা দেশে অবস্থান করছেন, তাদের প্রায় সবাই ‘আত্মগোপনে’ আছেন। বর্তমানে নেতৃত্ব শূন্য থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছে। তাদের অনেকেই এখন উদ্বগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে কথা বলার সময় তারা তাদের নামও প্রকাশ করতে চাননি। নারায়ণগঞ্জের জেলা পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ‘আমাদের দলের এখন দিশাহারা বিপর্যস্ত অবস্থা হয়ে গেছে। কারণ একমাস হয়ে গেলো অথচ কেন্দ্র থেকে কার্যকর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হলো না। ফোন দিলেও কেউ ধরে না। হামলা-মামলা সব মিলিয়ে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।’ অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, সেটার জন্য দলের সিনিয়র নেতাদের দায়ী করেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। সিদ্ধিরগঞ্জের একজন আওয়ামী লীগের কর্মী বলেন, ‘ক্ষমতা হারালে এমন অবস্থা যে হতে পারে, সেটা তো নেতাদের অজানা থাকার কথা না। তারাই তো এর জন্য দায়ী।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিম খাইলো নেতারা, কোটি কোটি টাকা বানাইলো তারা; আর তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করতে হইতেছে আমাদের মতো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।’ তবে বিদেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একাত্তর সালে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। কাজেই দেশ যতদিন থাকবে, আমাদের দলও থাকবে। আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াব।’ হামলার ভয়ে নিজেরা গা ঢাকা দিলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগের পরিবার-পরিজন তাদের এলাকাতে রয়েছেন। তবে আয়-রোজগার না থাকায় সংসার চালাতে গিয়ে অনেকের স্ত্রী-সন্তানরা বিপাকে পড়েছেন। পালিয়ে থাকা বন্দরের আওয়ামী লীগের এক কর্মী বলেন, ‘আমরা নিজেরাই তো পালিয়ে বেড়াচ্ছি, কাজ-কাম করবো কী করে? আর আয় না থাকলে সংসারের কী অবস্থা হয়, তা তো বুঝতেই পারছেন?’। পেশায় অটোচালক ওই ব্যক্তি জানান, সংসার চালাতে না পেরে তার স্ত্রী প্রায়ই ফোন করে কান্নাকাটি করে। তিনি বলেন, ‘এভাবে কতদিন থাকবে? ভাবতে গেলেই কান্না আসে। মনে হচ্ছে, রাজনীতি করাই পাপ হয়েছে। তাই আর রাজনীতি করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ কর্মীদের মধ্যে আরও অনেকেই এমন সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের এক নেতা। গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেখ হাসিনা নাই, শেখ হাসিনা চলে গেছে; শেখ হাসিনা পালায় না।’ অথচ এ ঘটনার ঠিক ১০ দিন পরে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসার পর গত ৫ আগস্ট দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান, যা এখনও মানতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না। আপা পালাইছে, মানতেই কষ্ট হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে যারা চেনেন, জানেন। যারা কাছ থেকে তাকে দেখেছেন, তারা কেউই এটা মানতে পারবে না। কারণ উনি মোটেও পালিয়ে যাওয়ার মানুষ না। আওয়ামী লীগ সভাপতির দেশ ছেড়ে না গেলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা জিয়া ছাড়েননি, এমনকী এরশাদের মতো স্বৈরাচারও পালায়নি। সেখানে নেত্রী কেন দেশ ছাড়ল, সেটাই আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। এ অবস্থায় বিচারের মুখোমুখি হতে হলেও এখন শেখ হাসিনার দেশে ফেরা উচিত। ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ঢাকাসহ অন্য জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা যখন ‘আত্মগোপনে’ যাচ্ছিলেন, তখন ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছিল আওয়ামী লীগ সভাপতির নিজ জেলা গোপালগঞ্জে।’ শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে দাবি করে গত ৫ আগস্টের পরপরই বেশ কয়েক দফায় বিক্ষোভ মিছিলও করেছিলেন তারা। কিন্তু গত ১৫ অগাস্টের পর গোপালগঞ্জেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আর আগের মতো সক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। মূলত সেনা সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকেই তাদের ওপর ‘চাপ’ ছিল, যা এখন আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। এদিকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছিলেন যে, তার মার আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। আমার মনে হয় এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমি- আমাদের যথেষ্ট হয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য তার কণ্ঠে ভিন্ন সুর শোনা যায়। অবশ্যই তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফিরবেন, যখন অন্তর্বতীকালীন সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে, তখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন।
ই-
হাবিবুর রহমান বাদল বাংলাদেশের স্বৈরশাসকের পতনের ৪০ দিন পার হলো। এ লেখা যখন লিখছি, তখন আওয়ামী শাসনের ৪০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটে। ছাত্ররা কোটা বাতিলের দাবিতে প্রথমে আন্দোলনে নামলেও পরবর্তিতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম আর লুটপাটের অবসান দাবি করে আন্দোলন বেগবান করে। এই আন্দোলনে এক সময় ছাত্রদের সাথে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ঘুষ. দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের কারনে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলে মুখ খুলতে পারেনি। জুলাই বিপ্লবের পর তাদের প্রত্যাশা ছিল সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তবর্তিকালিন সরকার গঠনের পরও চাঁদাবাজদের দৌরাত্বের অবসান হয়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ধাক্কায় কেবল চেহারা আর নামের বদল ঘটেছে, চাঁদাবাজি বন্ধ […]
হাবিবুর রহমান বাদল: সাংবাদিকতার নামে দলবাজি করলে শেষ পরিনতি কি হয় মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মোজাম্মেল হক বাবুকে নিয়ে আলোচনা করার তেমন কিছু নেই। মাঠ পর্যায়ে কিংবা ডেক্সে সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা তার না থাকলেও একজন মেধাবী মানুষ হিসাবে তাকে বলা চলে। মোজাম্মেল বাবু কবে কোথায় সাংবাদিকতা করেছেন তা জানা না থাকলেও […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯