হাবিবুর রহমান বাদল
একনদী রক্তের বিনিময়ে জুলাই- ৩৬ বিপ্লবের মাধ্যমে একটি গণমানুষের তথা ছাত্র জনতার সরকার গঠিত হয়েছে মাত্র এক মাস হলো। দীর্ঘ পনের বছর একটি সরকার বিনা ভোটে বা রাতের ভোটে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে ছিল। সরকার বিরোধী দলগুলি যে নিশ্চুপ ছিল তা বলছি না। তবে তারা সাহসিকতার সাথে পতিত সরকারের পুলিশ আর প্রশাসনকে মোকাবেলা করতে পারেনি। মামলা আর হামলার কারনে কেউবা নিশ্চুপ আবার কেউবা পালিয়ে বেড়িয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ইচ্ছে মত দেশ শোষন করেছে। লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারসহ দেশকে দেউলিয়া করে ছেড়েছে। উচ্চবিত্তরা দিন দিন নি¤œবিত্ত হয়েছে আর নি¤œবিত্তরা হয়েছে দরিদ্র। আমলা-পুলিশ আর আওয়ামী ক্যাডাররা রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। সরকারী কর্মচারিদের অধিকাংশই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে ইচ্ছা অনিচ্ছায়। আমলা আর কিছু পুলিশ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে শত কোটি টাকা অবৈধ ভাবে বিদেশে নিয়ে গেছে। সামান্য ইন্সপেক্টর দৈতনাগরিক হয়ে লুটপাটের অর্থে বিদেশে পরিবার পরিজনদের রেখেছে আরাম আয়েশে। এ সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সদ্য বিদায়ী নারায়ণগঞ্জ সদরের ওসি শাহাদাত হোসেন আমেরিকার নাগরিক। তার পরিবার আমেরিকাতে বসবাস করে। গত আঠার জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে তার পরিবারের সদস্যরা ক্লাবের গেষ্ট হাউজে অবস্থান করছিল। ওসির পরিবার রক্ষায় পুলিশ ক্লাবের ভিতর থেকে গুলি ছুড়লে প্রথম বার ক্লাবে হামলা হয়। দেশটাকে লুটপাটের স্বর্গরাজে্য পরিনত করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে পনের বছরে আওয়ামী বিরোধী জোট জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এ ব্যর্থতা তারা না মানলেও এটাই ছিল বাস্তবতা। ছাত্ররা প্রথমে কোটা আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামে পরে এই ছাত্ররাই সকল বৈষম্য দূর করাসহ নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে জনতাকে ডাক দেয়। রাজনৈতিক দলগুলি যা পারেনি তা ছাত্ররা করে দেখিয়েছে। রংপুরে মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ নতুন বাংলাদেশ গড়তে দাবী আদায়ে পুলিশের সামনে বুক পেতে দেয়। বর্বর পুলিশ নীরিহ আবু সাঈদকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। অকুতভয় বীর সেনানী বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে প্রাণ দিয়েছে এখবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ। একে একে সমগ্র পেশার মানুষ এমনকি ঘরের কুলবধুরা ছাত্রদের সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়ায়। ক্ষুধার্ত সন্তানদের জন্য খাবার পানি জোগান দেয় মায়েরা। পুলিশ আর আওয়ামী পেটোয়া বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে শত শত ছাত্র জনতা। একজন সরকার প্রধান কত নিষ্ঠুর হতে পারে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। অবশেষে সহস্রাধিক ছাত্র জনতার প্রাণ হারানোর পরও হাসিনা চার আগষ্ট রাতে তার আস্থাভাজন কজন নিয়ে বৈঠকে বসে। যা ছিল হাসিনার শেষ বৈঠক গনভবনে। সে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ষ্টাফ ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানকে ডাকা হয়। সেনাবাহিনী আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা জনগনের মুখোমুখি হবে না। একটা গুলিও চালাবেনা। পুলিশ প্রধান জানায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাছাড়া পুলিশের সব গুলি শেষ হয়ে গেছে। কতটা নির্মম স্বীকারোক্তি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য বলেন, যত পার হত্যা কর। ছাত্র জনতাকে হত্যা করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর সব গুলি শেষ। পরদিন হাসিনা গোপনে বোন রেহানাকে সাথে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই সংগে দেশ ব্যাপী আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী, নেতাকর্মীরাও পালায়। আওয়ামলিীগ করার কারণে প্রায় সকলেই এখনো আত্মগোপনেই রয়েছে। এখন প্রশ্ন ছাত্র জনতার এই বিপ্লবের ফসল অর্ন্তবর্তিকালিন সরকার। যাকে আমি বলি জুলাই বিপ্লবের সরকার। ড. মোহাম্মদ ইউনুস স্পষ্ট করেছেন ছাত্ররা আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। রাজনৈতিক দল রাষ্টের সংস্কার চাইছে। যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিয়ে আমরা চলে যাব। অর্ন্তবতিকালিন সরকার মাত্র একমাস সরকারের দায়িত্ব নিয়েছে। তার উপর আমলা-পুলিশসহ সুবিধা ভোগীরা অসহযোগিতা করছে এখনো কেউ কেউ। এর মধ্যে এমন সব মামলা হচ্ছে যা দেখলেই বুঝা যায় ঘটনার সাথে আসামীর সম্পর্ক তেমন নাই। সেই সাথে অভিযোগ উঠছে মামলা বানিজে্যর। শুরু হয়ে গেছে আওয়ামী ষ্টাইলে লুটপাট চাঁদাবাজি আর দখল। মুখে সবাই বলছে বন্ধ কর, বাস্তবে তা বাড়ছেই। অভিযোগ রয়েছে, যারা বলছে তারাই নাকি আখের গুছাচ্ছে? আসলে সরকারে কারা? সাধারণ মানুষ জানতে চায়? কাজের মাধ্যমে দেখতে চায়। তাদের বক্তব্য, এটাতো আমাদের নতুন বাংলাদেশ নয়? এছাড়াও গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকে হত্যা মামলার আসামী হয়েছেন। এটা শেষ পযর্ন্ত কতটা আদালতে টিকবে তা নিয়ে সিনিয়র আইনজীবীগন সন্দেহ পোষন করছেন। যে সংবাদকর্মী বা নাগরিক যে অপরাধ করেছে তাকে সেই অপরাধে কাঠকড়ায় দাঁড় করানো উচিত। বাইশজন গণমাধ্যমকর্মীর নামে উস্কানি দাতা হিসাবে মামলা হয়েছে। এরা পতিত সরকারের লেজুরবৃত্তি আর তোষামোদী করতো। সাংবাদিকতা করেনি। পেশাদার সাংবাদিক কখনো অবসরে থাকা পছন্দ করেনা। রিপোর্ট না লিখলে তার অস্বস্তি লাগে। তবে পতিত সরকারের সুবিধাভোগী অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। কারো খাটো করতে নয় বরং সৎ সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত আর অপসাংবাদিকতাকে বিদায় করতে সরকারে তথ্য উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ ইউনিয়ন বাজি করে টকশোতে সরকারের অন্যায় কর্মকান্ডের সাফাই আর মন্ত্রণালয়ে বসে তদবীর বানিজ্য। বিভিন্ন ব্যংকে যোগ্যতা না থাকার পরও পরিচালক পদে বসে ঘুষ বানিজ্যসহ পনের বছরে একেক জন শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে মাত্র কয়েক শ’ লোক। অথচ পনর বছরে এদের বিশেষ রিপোর্ট কটাই বা দেখাতে পারবে এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অথচ পহেলা আগষ্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সভাপতি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এসে যখন বলে জাতীয় বীর আবু সাঈদে ছবি কাট টু কাট করে ছাপা তখন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছি। অসাংবাদিক যদি সাংবাদিকদের নেতা হয় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাহলে যা হওয়ার তাই হয়েছে পনের বছর। পিআইডি দুর্নীতির আখড়া। টাকা ছাড়া কিছু হয় না। আওয়ামী লীগের গুনগান না গাইলে বা ভূল দেখিয়ে দিলে সেই প্রিন্ট মিডিয়া ক্রোড়পত্রও পায়না আবার ভিন্ন পথে পাইলেও বিল পরিশোধ করা হয় না। দৈনিক ডান্ডিবার্তা তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া ক্রোড়পত্রের সাতটার বিল পাচ্ছি না। সরকারি অফিস গুলিতে পনের লাখ টাকার বকেয়া বিল পড়ে আছে। আর গত তের বছরে ডান্ডিবার্তা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে এক ইঞ্চিও বিজ্ঞাপন পায়নি। গত ডিসেম্বরে গলফ ক্লাবে আঞ্চলিক প্রিন্ট মিডিয়ার পঞ্চাশজন সম্পাদককে হাসিনার মিলিটারি সেক্রেটারি ডেকে নিয়ে আওয়ামী এমপিদের অতীত কর্মকান্ডের সংবাদ নির্বাচনের আগে প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। কয়েকজন সাড়া না দেয়ায় আঞ্চলিক পত্রিকাগুলি এখনো খাদের কিনারে পড়ে আছে। তাই তথ্য উপদেষ্টা তথাকথিত সুবিধাভোগী চাটুকার সাংবাদিদের অতীত কর্মকান্ড তথা সরকারের আশির্বাদে ব্যাংক সেক্টর সাংবাদিক কল্যানট্রাষ্টের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে মুক্ত সাংবাদিকতার পথকে সুগম করাসহ তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা হোক। আজ ৮ সেপ্টেম্বর। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে গত ৮ আগষ্ট অন্তর্বতিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. ইউনুস শপথ গ্রহণ করেন। একই সংগে অন্যান্য উপদেষ্টারাও শপথ গ্রহণ করেন। নতুন বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বতিকালীন সরকারের সামনে বিভিন্ন অসংগতি চলে আসে। পাশাপাশি একটি বিশেষ মহল সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। যাছিল সম্পূর্ন কল্পনা প্রসূত। পরবর্তিতে প্রমানিত হয়, সংখ্যালঘূ নির্যাতনের এই নাটক একটা ষড়যন্ত্র মাত্র। পরবর্তিতে সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দেশের জুডিশিয়াল ক্যু করার অপচেষ্টা চালায়। এটা ব্যর্থ হলে বিডিআর বিদ্রোহের মত আনসার বিদ্রোহ ঘটানোর পরিকল্পনা করে। দুটি ষড়যন্ত্রই ছাত্র-জনতা রুখে দেয়। এ সরকারের বিরুদ্ধে এখনো প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ষড়যন্ত্র চলছে। পুলিশ এখনো স্বাভাবিক কাজ কর্ম শুরু করেনি। এমতাবস্থায় যৌথ বাহিনী জুলাই বিপ্লবের মাস পূর্তি থেকে যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযানে সেনা বাহিনীকে কঠোর ভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। আমরা জুলাই আগষ্টে আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের প্রকাশ্যে রাজপথে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করতে দেখেছি। এদের হাতে অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে। বাদ যায়নি শিশু রিয়া গোপও। এসব অস্ত্রধারীদের চিহিৃত করা খুব একটা দুরহ নয়। তাই পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের এখন আস্থা অনেকটাই কম। আর এই আস্থা অর্জন করতে হবেই পুলিশকেই। তাদের কাজের মাধ্যমে। এই বিপুল সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারসহ চাঁদাবাজ, দখলবাজ আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর হবেন এমন প্রত্যাশাই দেশের ১৮ কোটি ছাত্র-জনতার। সেনাবাহিনীর উপর সাধারণ মানুষের একনো আস্থা আছে। সেই সাথে বর্তমান অন্তর্বতিকালীন সরকারের উপর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেশী। এই প্রত্যাশা পূরনে তাদেরকে নিরলস ভাবে কাজ করতে হবে এমনটাই আশাবাদ সাধারণ মানুষের। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের অকল্পনীয় পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনও ভাবেনি তার সরকারের শুধু পতনই ঘটবে না, বরং তাকে চুপিসারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আওয়ামীলীগের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর পরই আওয়ামীলীগের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যায়। এর […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯