আজ বুধবার | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৮ কার্তিক ১৪৩১ | ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ | রাত ৪:৫৪

রূপগঞ্জে ধরাছোঁয়ার বাইরে স্বর্ণ চোরাচালানের দুই মাফিয়া

ডান্ডিবার্তা | ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
স্বর্ণ চোরাচালানে অপ্রতিরোধ্য জমি দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণসহ খুনের অভিযোগও আছে এদের বিরুদ্ধে। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের দুই স্বঘোষিত ডন খ্যাত, স্বর্ণ চোরাচালানের দুই মাফিয়া, এদের একজন হলেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম; অপরজন এন. জেড গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান খাঁন। তাদের বিরুদ্ধে দুবাই ভিত্তিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। আর এরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের একটি অংশ। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ছাড়াও জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা থেকে শুরু করে খুনের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় দায়ের করা ছাত্র হত্যায় পৃথক দুটি মামলায় শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান ও গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে রফিকুল ইসলামকেও আসামি করা হয়। গত ৫ আগষ্ট, ২০২৪ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি পলাতক রয়েছেন। তবে একটি সূত্র বলছে, বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে রহস্যজনক কারণে নুরুজ্জামান খাঁনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হওয়ায় দেশেই বহালতবিয়তে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও স্বর্ণ চোরাচালান ছাড়াও একাধিক হত্যা, অপহরণ, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ের বহু অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যতো স্বর্ণ ধরা পড়ছে, তাঁর কয়েকগুণ বেশি পাচার হচ্ছে। দেশের অবৈধ স্বর্ণের এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বাজুসের সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলন এবং দিলীপ আগারওয়ালা আর এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য রফিকুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান খাঁন। তাদের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারের তথ্য দিয়েছে দুবাই ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একটি সূত্র। গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরদারিতে রয়েছেন এই দুই মাফিয়া সম্রাট- রফিকুল ইসলাম এবং নুরুজ্জামান খাঁন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওরা গ্রামের মৃত আমানুল্লাহর ছেলে রফিকুল ইসলাম। একসময় ফেরি করে ডিম বিক্রি করতেন, তাই স্থানীয় সর্বমহলে আন্ডা রফিক নামেই পরিচিতি তাঁর। বিএনপি করা রফিকুল ইসলাম ২০০৯ সালে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের দরবারে ঢুকে পড়েন। এরপর ২০১৬ সালে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন তিনি। এছাড়া ভূমিদস্যু প্রতিষ্ঠান রংধনু গ্রুপের কর্ণধার রফিকুল ইসলাম। সদ্য গ্রেফতারকৃত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর অপকর্মের অন্যতম সহযোগী রফিকুল ইসলাম। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও প্রশাসনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় গত তিনদশক ধরে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মানবপাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে হাজার-হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, ফতুল্লাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে বহু মামলা রয়েছে। তাঁর নিজ এলাকায় ভূমিদস্যু এবং বালু সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পূর্বগ্রামের জহিরুল ইসলাম খাঁনের ছেলে নুরুজ্জামান খাঁন। তবে স্থানীয়দের কাছে তিনি মধুবাবু নামেই পরিচিত। একসময় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন কিন্তু গত ৩৪ বছরের ব্যবধানে এখন হাজার-হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে টিনসেড বাসায় থাকা নুরুজ্জামান খাঁন থাকেন এখন শত কোটি টাকার বাড়িতে। নি¤œবিত্ত পরিবারের নুরুজ্জামান খাঁন এখন সোনা চোরাচালান, জমি জবরদখল, চাঁদাবাজি, কমিশন বানিজ্য, মানবপাচার, কিডনি ব্যবসা, রাজস্ব ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, পূর্বাচল উপশহর, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় তাঁর নামে-বেনামে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মালয়শিয়া ও থাইল্যান্ডেও তাঁর বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। রূপগঞ্জের তারাবো ও আড়াইহাজারের দুপ্তারায় দুটি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি রয়েছে নুরুজ্জামান খাঁনের। বৈধ আয়ের চেয়ে অবৈধ সম্পদের পরিমাণই বেশি। গত কয়েক মাসের অনুসন্ধানে নুরুজ্জামান খাঁনের এসব ভয়ংকর তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে। বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুল্ক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লাখ-লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে তাঁর অবৈধ কর্মকা- নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া মেসেনটেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথাকথিত হীরা বানিয়ে তা অলঙ্কার হিসেবে বিক্রির প্রতারণা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে নুরুজ্জামান খাঁনের বিরুদ্ধে। কিছুদিন ব্যবহারের পর এগুলো কালো হয়ে যায়। নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করে এখন টাকার কুমির- মাফিয়া বস নুরুজ্জামান খাঁন। বর্তমানে তাঁর অবৈধ উপায়ে অর্জন করা মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপর। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা বাঁধাই করে তাঁর বাসায় ও অফিসে টানিয়ে নিজেকে খুব ক্ষমতাবান জাহির করে আসছেন নুরুজ্জামান খাঁন। অবৈধ পথে ব্যবসা করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেন তিনি। বিগত ৩৪ বছরেই আমূল বদলে নিয়েছেন নিজেকে। একদা জীবনযুদ্ধে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি জমাতে বাঁধ্য হওয়া নুরুজ্জামান খাঁন ধূর্ততা, প্রতারণা, অপরাধমূলক কলাকৌশলকে পুঁজি করে আজ সম্পদ প্রাচুর্যের পাহাড় জমিয়েছেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ায়। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে নানা অবিশ্বাস্য কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই নুরুজ্জামান খাঁনের রাতারাতি ফুলেফেঁপে বিত্তশালী বনে যাওয়ার ঘটনাকে রীতিমতো আলাদিনের যাদুর চেরাগ হাতে পাওয়া বলেই মনে করেছেন। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ায় নুরুজ্জামান খাঁনের পরিচিত মহলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুবকবয়সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন পরে বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ ঠিকাদারি ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। সে সময় তাঁর বাবা জহিরুল ইসলাম খাঁন ছিলেন একজন কাঠুরে। তাঁতে এই পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা খুব একটা ছিলো না। ছোটবেলা থেকেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত দুর্র্ধষ নুরুজ্জামান খাঁন ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রীসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর বদলে যায় তাঁর ভাগ্য। মতিন চৌধুরী নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁকে ধর্মপিতা ঢেকে হাসিল করতে থাকেন স্বার্থ। এরপর বিত্তশালী হওয়ার উপায় সন্ধানে বিভিন্ন অপরাধমূলক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে নিজের ভাগ্যকে আমূল বদলে নিয়েছেন নুরুজ্জামান খাঁন। তাঁর আস্তানায় এখন দেশি-বিদেশি হরেক রকম ধনকুবের, চোরাকারবারী, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভিড় লেগেই থাকে। রাজনীতিতে বারবার ভোল পাল্টানো নুরুজ্জামান খাঁন নিজের অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে কখনো বিএনপি আবার কখনো আওয়ামী লীগ নেতা বনে যান। বিশ্ব বাটপার, চাপাবাজ, ঘাতক ও নারীলোভী নুরুজ্জামান খাঁনের এখন অঢেল সহায়-সম্পদ। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পূর্বগ্রামে শতকোটি টাকার বিলাসবহুল বাড়ি, রাজধানীর আরামবাগ ও গুলশানে আলীশান বাড়ি রয়েছে। ভারত এবং কানাডায় আছে প্রাসাদপম স্থাপনা। বাংলাদেশ ছাড়া বিদেশে কয়েকটি রাষ্ট্রে নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর। একাধিক পাসপোর্টও আছে। নুরুজ্জামান খাঁনের দাপটের কোনো কমতি নেই। মাদক ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটেও বিস্তর নেটওয়ার্ক রয়েছে তাঁর।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৫১
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৮
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৫৬
  • ১১:৪৬
  • ১৫:৩৯
  • ১৭:১৮
  • ১৮:৩৪
  • ৬:১০
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা