আজ বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ | রাত ৮:৫৩

ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে সংকটে ইউরোপগামী শিক্ষার্থীরা

ডান্ডিবার্তা | ০৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস কিছুদিন ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখে আবার চালু করলেও তা চলছে অত্যন্ত সীমিত আকারে। বর্তমানে কেবল শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসার আবেদন করা যাচ্ছে।এ ছাড়া চিকিৎসার জন্যেও ভিসা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন আবেদনকারীরা। সীমিত ভিসা দেওয়ায় প্রভাব পড়ছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী ফ্লাইটের সংখ্যাও কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।এদিকে ইউরোপের অনেক দেশের দূতাবাস ভারতে থাকায় সংকটে পড়ছেন ইউরোপে পড়তে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশের তিনটি বিমান সংস্থা নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।ভিসা জটিলতার সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে এয়ারলাইন্স ব্যবসায়।  ভিসা জটিলতায় যাত্রী যেতে না পারায় এদের মধ্যে দুইটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট কমে অর্ধেকে নেমেছে, আর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে একটির।

সংকটে ইউরোপে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা

ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বাংলাদেশি কোনো শিক্ষার্থীকে ইউরোপের দেশগুলোতে পড়তে যেতে হলে, ভারতে গিয়ে সেই দেশের দূতাবাস থেকে দেশটির ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রথমে ভারতের ভিসা প্রয়োজন হয়।

কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাঁচ আগস্টের দুই দিন পর থেকে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। প্রায় এক সপ্তাহ পর দেশটি ‘সীমিত আকারে’ ভিসার কাজ চালু করে। সাধারণত কূটনৈতিক, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণ-সহ ১৫টি ক্যাটাগরিতে ভারত বাংলাদেশকে ভিসা দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কেবল শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসা আবেদন করা যাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ভিসা আবেদনকারীদের।

ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় পড়তে যাবার জন্য অফার লেটার পেয়েছেন কাজী কানিজ রাতুল। লম্বা সময় ধরেই দেশটিতে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানান তিনি। আর সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই অফার লেটার পাওয়ার আগেই ভারতের ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসার জন্য দুইবার আবেদন করেন। কিন্তু কোনোবারই তাকে ভিসা দেওয়া হয়নি। পরে অফার লেটার পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তিনি ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করেন।

‘সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত আমি প্রতিদিন ট্রাই করেছি। কিন্তু দেখা গেছে তাদের সার্ভার সবসময় ডাউন থাকে, স্লট পাওয়া যায় না’, বলছিলেন কাজী কানিজ রাতুল।

একদিকে রোমানিয়ান দূতাবাসে যাওয়ার তারিখ এগিয়ে আসা, অন্যদিকে ভারতীয় ভিসা না পাওয়ায় রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য অফার লেটার পাওয়া সাড়ে তিনশোর মতো শিক্ষার্থী রোমানিয়ার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন বলে জানান তিনি।

তাদের প্রায় সবারই টিউশন ফি জমা হয়ে গেছে উল্লেখ করে মিজ রাতুল বলেন, ‘আমাদের ভিসা ক্যান্সেল হয়েছে এবং রোমানিয়ার ভিসা আমরা পাইনি সেই কাগজপত্র যদি দেখাতে না পারি, সেটা কিন্তু রিফান্ড হবে না।’

সার্বিক পরিস্থিতি জানার পর কাছাকাছি যে দেশগুলোতে রোমানিয়ার দূতাবাস আছে সেখান থেকে অফার লেটার পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে কেবলমাত্র তারাই ওই দেশগুলোর দূতাবাস থেকে ভিসা নিতে পারবেন যারা ভারতীয় ভিসা পাননি। বর্তমানে ভিসা নিতে ভিয়েতনামে আছেন রাতুল।

অনেকটা একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন রংপুরের বাসিন্দা আফসানা শাহরিন। মাস্টার্স করতে রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহী মিজ শাহরিনের ভিসার জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দেশটির দূতাবাসে যেতে হবে।

কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও ভারতীয় ভিসার স্লট পাচ্ছেন না তিনি। সবশেষ ৯ তারিখ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর ১৯ তারিখ তা ফেরত পেলেও পাননি ভিসা।

শাহরিন বলেন, ‘আমি এখনো চেষ্টা করছি। আজকেও এতক্ষণ করে চেষ্টা করলাম, কিন্তু পেলাম না। এটাতো আমরা যারা বাইরে পড়তে যাব তাদের জন্য ঝামেলা।’

রোমানিয়া, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে পড়তে যেতে আগ্রহী সব শিক্ষার্থীরই এই সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলাম। আমাদের বলেছিল কাজ হবে, কিন্তু হয় নাই। আমরা যে কী করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না!’

ভিসা না দেওয়ার কারণ কী?

‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে ভারত আশ্বস্ত হচ্ছে না বলেই হয়তো’ এখনও ভিসা নিয়ে এমন কড়াকড়ি করছে দেশটি, এমনটাই মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির।

কিন্তু ভিসা না দেওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রভাব তো নেতিবাচক বটেই। ভিসা যদি না দেওয়া হয় তাহলে যাতায়াত কমে যায়। যাতায়াত কমা মানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই নানান জটিলতায় পড়েন। দুই দেশের পিপল টু পিপল কানেক্টিভিটি যেটা ব্যাহত হয় নিশ্চিভাবেই।’

আবার বাংলাদেশিরা দেশটিতে কম যাওয়ায় ভারতের স্থানীয় ব্যবসাও ক্ষতির মুখে পড়ে।

‘কলকাতায় বাংলাদেশি ভিজিটরস না থাকার ফলে ট্যুরিজম বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। কলকাতার বিপণীবিতানগুলোর অবস্থা একটু চাপের মুখে আছে। তাতে করে স্থানীয় অর্থনীতির ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটাতে লাভ কারোই হচ্ছে না। দুই দেশের মানুষ এতে করে এফেক্টেড হয়ে যাচ্ছে’, বলছিলেন হুমায়ূন কবির।

লাভ না হলেও ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের কঠোরতার কারণ কি কেবলই নিরাপত্তা না এর পেছনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আছে, উঠছে এমন প্রশ্নও। তবে এক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তার প্রসঙ্গ মুখ্য হয়ে ওঠে, তবে কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেই মত এই বিশ্লেষকের।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৫৭
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৫
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২
  • ১১:৪৭
  • ১৫:৩৬
  • ১৭:১৫
  • ১৮:৩১
  • ৬:১৬
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা