আজ বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১ | ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ | সকাল ৭:২৪

একজন গডফাদার শামীম ওসমান

ডান্ডিবার্তা | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৩৯ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট:

শামীম ওসমান। কারও কাছে পরিচিত গডফাদার হিসেবে আবার কারও কাছে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে। তবে, ক্ষমতায় থাকতে তাকে অনেকেই ‘সিংহ পুরুষ হিসেবে অবহিত করতেন। দুর্দান্ত প্রভাবশালী এ ব্যক্তি গত ১৬ বছর কোনো না কোনোভাবে ছিলেন আলোচনায়। ছিলেন সমালোচনায়ও। কখনও কথায়, কখনও কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আলোচনায় আসেন তোলারাম কলেজের ভিপি হওয়ার পর থেকে। বিরোধী দলের লোকজন তো বটেই, নিজ দলের লোকও তার বিরুদ্ধে ছিলেন। বিপরীত দিকে আবার তার ছিলেন অসংখ্য কর্মী-সমর্থক আর শুভাকাংক্ষী। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম শামীম ওসমান মঞ্চে যেমন ছিলেন বাকপটু, তেমনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত রাজনৈতিক জীবনে যেমন কাঁপিয়ে ছিলেন রাজপথ, তেমনি সংসদেও তার বক্তব্য অনেক সময় ঝড় তুলেছিল। নানা কারণে তিনি সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন বিভিন্ন সময়ে। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের গাড়িবহর আটকে দিয়ে যেমন আলোচনায় আসেন। তেমনি খালেদা জিয়ার লংমার্চের গাড়িবহর আটকে দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। টানবাজার পতিতাপল্লী উচ্ছেদ করেও আসেন আলোচনায়। একইভাবে গোলাম আজমকে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেও রাজনীতি মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ‘খেলা হবে বলেও ‘না খেলে দুবার দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। একবার ২০০১ সালে, আরেকবার ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে। তবে দুবারই তাকে বোরকা পরে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করতে হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।শামীম ওসমান পরিবারের রাজনীতির ইমেজের বাইরেও আলোচিত-সমালোচিত নানা কর্মকাণ্ডের কারণে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গডফাদার হয়ে ওঠেন শামীম ওসমান। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তার অঙ্গুলি হেলনে চলত পুরো নারায়ণগঞ্জ। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের ঘায়েল করে কটাক্ষ বক্তব্য দিয়ে, প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখাসহ সব কর্মকাণ্ড চলত একক ইশারায়। একপর্যায়ে আলোচিত দুর্দান্ত প্রতাবের এ নেতার কপালে জোটে গডফাদারের খেতাব। প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ ২০-২৫টি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে মহড়া দেওয়া ছিল তার প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। তবে, ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করেও প্রভাবশালী এ নেতা জিততে পারেননি। জোটপ্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের কাছে ধরা খেয়ে রাতের আঁধারে বোরকা পড়ে পালিয়ে যান শামীম ওসমান। তখন প্রথমে ভারত ও পরে কানাডায় আশ্রয় নেন তিনি। বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তখন দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে তিনি সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে এক লাখ এক হাজার ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তাকে হারিয়ে বাংলাদেশে প্রথম নারী সিটি মেয়র নির্বাচন হন সেলিনা হায়াৎ আইভি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পান শামীম ওসমান। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি সপ্তম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর সশস্ত্র হামলার পর ৩ আগষ্টের পর শামীম ওসমানকে কোথাও দেখা যায়নি, খোঁজও মেলেনি। এমনকি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার দিন থেকে শুরু করে এর কয়েকদিন পরও তার বা তার পরিবারের কারোরই খোঁজ পায়নি নারায়ণগঞ্জবাসী। তিনি ও তার স্বজনরা দেশে, নাকি বাইরে আছেন তা নিয়ে সে সময় ছিল নানা গুঞ্জন, আলোচনা-সমালোচনা। সেই গুঞ্জন, আলোচনা-সমালোচনার একপর্যায়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করার তার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই শামীম ওসমানকে ২৫ সেপ্টেম্বর ফের দেখা যায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্মোকিং জোনে। এমন ঘটনার পর শামীম ওসমানকে ঘিরে শুরু হয় নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা। সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর শামীম ওসমানকে আরব আমিরাতের আজমান সিটি মল সেন্টারে প্রকাশ্যে দেখা যায়। একইভাবে গোলাম আজমকে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেও রাজনীতি মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, নজরুলের সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। তাদের অপহরণ করেন র‌্যাব-১১ এর কিছু অর্থলোভী সদস্য। অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নজরুলসহ ছয়জনের হাত-পা বাঁধা লাশ ভেসে উঠে। পরদিন ভেসে ওঠে নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ। ওই ঘটনার সঙ্গে নূর হোসেনের পাশাপাশি শামীম ওসমানের জড়িত থাকার কথা গণমাধ্যমকর্মীদের জানায় প্রয়াত নজরুল ইসলামের পরিবার। তবে, তিনি বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছিলেন। এমনকি ঘটনার শুরুতে শামীম ওসমান নূর হোসেনের পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন, ‘নূর হোসেন এ কাজ করতে পারেন না। নজরুলের লাশ উদ্ধারের পর সেলিনা ইসলাম বিলাপ করতে করতে বলেছিলেন, কোর্টে যাওয়ার আগে সকালেও শামীম ওসমানকে ফোন করে আমার স্বামী বলেছিল, ভাই, হাজিরা দিতে যাইতেছি, আমারে সেইফ কইরেন। এমনই সেইফ করল? পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুলের এক স্মরণসভায় শামীম ওসমান বলেছিলেন, নূর হোসেনসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারাই এ ঘটনার জন্য দায়ী। ‘নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনে কে জড়িত কে জড়িত নয়?’ শীর্ষক বেসরকারি টেলিভিশনের এক টক-শোতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে তর্কে জড়ান শামীম ওসমান। সেই টক-শোতে আইভী সরাসরি শামীম ওসমানকে সাত খুনের সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছিলেন। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তাতে শামীম ওসমান আইভিকে ‘বেয়াদব’ বলে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করতে দেখা যায়। এতে ব্যাপক সমালোচিত হন শামীম ওসমান। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কাউন্সিলরদের নিয়ে নগর ভবন থেকে পদযাত্রা করেন। বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে এবং পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের স্বার্থে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্যে হেঁটে প্রচারণা করেন মেয়র। পদযাত্রাটি বিকেল সাড়ে ৪টায় চাষাড়া পর্যন্ত এলে শামীম ওসমানের লোকজন মেয়র আইভীর ওপর চারদিক থেকে হামলা করে। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হয় সেদিন। এর মধ্যেই শামীম ওসমানের অনুসারী নিয়াজুল ও শাহ নিজাম পিস্তল উঁচিয়ে আইভিকে লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলিও করেছিল। এতে আইভীসহ ৪৩ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এজাহার দাখিল করা হলেও থানা কর্তৃপক্ষ সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করেছিল। নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যায় ওসমান পরিবারের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা অভিযোগ করে আসছিলেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি গণমাধ্যমে অভিযোগ করে বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শামীম ওসমান জড়িত। আর তা ঘটিয়েছে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান। ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির সঙ্গে শত্রুতার জেরে আজমেরী ওসমান ত্বকীকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন ত্বকী মঞ্চের নেতারা। কেননা ওসমান পরিবারের প্রহসনের বিরুদ্ধে রফিউর রাব্বি বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। সম্প্রতি ত্বকী হত্যায় আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ১৯ জুলাই বিকেলে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ও জালকুড়ি এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়েন। এমন দুটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালও হয়। তাতে দেখা যায়, শামীম ওসমানের ছেলে জালকুড়ি এলাকায় এবং শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু বঙ্গবন্ধু সড়কে গুলি ছুড়তে। এসব ঘটনায় শামীম ওসমানের আত্মীয় (অয়ন ওসমানের শ্বশুর) ফয়েজ উদ্দিন (লাভলু), তার ছেলে মিনহাজুল ইসলাম ও শীতল পরিবহনের বাসের পরিচালক অনুপ কুমার সাহা, ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়াজুল ইসলাম, আব্দুল করিম বাবু, এস এম রানাসহ শতাধিক ক্যাডারকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। পুলিশের ধারণা এই মহড়াকালে ৬ বছরের শিশু রিয়া গোপ গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তারা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে শহরের চাষড়া থেকে মণ্ডলপাড়া পর্যন্ত হটিয়ে দিয়েছিলেন। ওই দিনের মহড়ায় শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও আবদুল করিম (বাবু) ও তার ছেলে এম আর কে রিয়েন, ছাত্রলীগ নেতা কাউসার আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। ১৯ জুলাই শহরের নয়ামাটি এলাকায় চারতলার বাড়ির ছাদে খেলার সময় ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছে, শামীম ওসমান ও তার সহযোগীদের গুলিতে রিয়া গোপের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৪১
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:৩২
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪৬
  • ১১:৪৭
  • ১৫:৫১
  • ১৭:৩২
  • ১৮:৪৬
  • ৫:৫৮
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা