আজ বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১ | ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ | ভোর ৫:১৮

বন্দরে অর্ধশত বছর ধরে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দিরের অবস্থান

ডান্ডিবার্তা | ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৩৩ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট:

বন্দর উপজেলার সাবদি বাজারে ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে পাশাপাশি অবস্থিত সাবদী কালী মন্দির ও সবদী বাজার মসজিদ। একপাশে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। আরেকপাশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনা চলছে। একদিকে ধূপকাঠি, অন্যদিকে আতরের সুঘ্রাণ। মাত্র ১০ মিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত মসজিদ ও মন্দিরের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে কখনো দ্বন্দ্ব কিংবা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশে সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে, এর যথার্থই প্রমাণ মসজিদ ও মন্দিরটি। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে এভাবে চলে আসলেও দুই ধর্মাবলম্বী মানুষের এ নিয়ে কোনো হানাহানি কিংবা মারামারি নেই। মন্ডপে চলে দূর্গাপূজা, তবু আজানের সময় নীরবতা বজায় রাখেন পূজারী ও ভক্তরা। প্রতিবেশী হিসেবে সবাই একে অপরের প্রতি আন্তরিক। স্থানীয়দের মধ্যে আত্মিক বন্ধন এতটাই মজবুত যে ধর্মের দোহায় দিয়ে তাদের মাঝে কেউ বিভেদ তৈরি করতে পারেনি। সবাই সবার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এ বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক এ প্রত্যাশাই তাদের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত শ্রী শ্রী রক্ষা কালি মন্দির স্থাপিত হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। দারিকানাথ ঘোষাল এই মন্দিরটি স্থাপন করেন। দারিকানাথের একমাত্র পুত্র ডা. পূর্ণ চন্দ্র ঘোষালের ৫ ছেলের বংশধরেরা বর্তমানে মন্দিরটি পরিচালনা ও সেবায়েত হিসেবে রয়েছেন। অন্যদিকে, দেশ স্বাধীনের পর মন্দিরের পাশেই সাবদি বাজার জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তখন এটি টিনশেড মসজিদ ছিল। পরে ২০০০ সালের দিকে মসজিদটি পাকা করা হয়। মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে আসা শরীফ হোসেন নামের এক মুসল্লি বলেন, আমাদের মসজিদের পাশে যে মন্দিরটি রয়েছে তা শতবছরের পুরনো। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কখনো বিরোধ হয়নি। সবাই যার যার ধর্ম পালন করছে। তাদের মন্দিরের পাশে আমাদের মসজিদ। এ নিয়ে তারা কখনো সমস্যা মনে করেনি। তাদের দাওয়াতে আমরা যাই আবার আমাদের দাওয়াতে তারা আসেন। দিনশেষে আমরা সবাই একত্রে বসে আড্ডাও দেই। শিবু দাস নামের বন্দরের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মন্দিরে পূজা হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর এখানে মসজিদ নির্মাণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কখনো অসুবিধা হয়নি। মুসলমানদের সঙ্গে আমাদের কখনো দ্বন্দ্ব হয়নি। আশা করি, জীবনেও হবে না। পরিচয় না দিলেও কেউ কখনো বুঝতে পারবে না কে হিন্দু, কে মুসলমান। আমরা সবাই আনন্দে যার যার ধর্মীয় উৎসব পালন করছি। বরং পূজা করতে গিয়ে আমরা মুসলমানদের সহযোগিতা পাচ্ছি। তারা কিছুক্ষণ পর পর এসে আমাদের খোঁজ খবর নেন। সাবদি বাজার জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন মিন্টু জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই সাবদি মসজিদটিতে নামাজ আদায় করে আসছেন। তখন সেটি টিনশেড মসজিদ ছিল। ২০০০ সালের পরে মসজিদটি পাকা মসজিদ হয়েছে। তবে মসজিদ মন্দির পাশাপাশি থাকলেও বিগত দিনে এখানে কোন ধরনের ধর্মীয় বিবাদ সৃষ্টি হয়নি। তিনি আরও জানান, তার বসতবাড়ি সাবদির পাশর্^বর্তী হাজারাদী এলাকাতেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসতি রয়েছে। সেখানেও হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে তারা সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রম করে আসছেন। হাজারাদী প্রভাতি সমাজ সংঘ নামে একটি সামাজিক সংগঠনও রয়েছে যার মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আসছেন। তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষের প্রশ্নই উঠে না। মন্দিরটির সেবায়েত প্রতীক ঘোষাল পল জানান, শ্রী শ্রী রক্ষা কালি মন্দিরটি ১১৭ থেকে ১১৮ বছর পূর্বে স্থাপন করা হয়েছিল। এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠান করেছিলেন আমার বাবার দাদু দারিকানাথ ঘোষাল। বংশ পরম্পরায় আমরা এখানে সেবায়েত হিসেবে ও পরিচালনা কমিটিতে রয়েছি। পাশাপাশি এই মন্দিরে এ বছর ৫০তম শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে। মন্দিরের পাশে অর্ধশত বছর পূর্বে একটি মসজিদ স্থাপিত হয়েছে। তবে বিগত দিনে কখনোই এখানে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন ধরনের বিবাদ হয়নি। আমরা সবসময়ই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে যার যার ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছি। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাইমিন আল জিহান বলেন, দীর্ঘদিন এখানে সম্প্রীতি বজায় রেখে যার যার ধর্ম পালিত হচ্ছে, যা সামাজিক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হয়েছে। আশা করি, বন্দরের এ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৪১
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:৩২
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪৬
  • ১১:৪৭
  • ১৫:৫১
  • ১৭:৩২
  • ১৮:৪৬
  • ৫:৫৮
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা